উজানের পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টিতে সিলেটের জকিগঞ্জের কুশিয়ারা-সুরমা নদীর পানি বেড়ে লোকালয়ে প্রবেশ করায় জকিগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। সুরমা নদীর পানি বাড়তে থাকায় সোমবার রাত থেকে তীরবর্তী বিভিন্ন এলাকায় ডাইক উপচে পানি লোকালয়ে ঢুকে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করছে।
ইউপি চেয়ারম্যানরা ও এলাকাবাসী ডাইকের উপর বালুভর্তি বস্তা ফেলেও কোনভাবে পানি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না। প্লাবিত হয়ে পড়েছে বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষ। নদীর তীরবর্তী গ্রামের লোকজনের ঘরে পানি ঢুকে পড়েছে। বাড়িঘর ছেড়ে গৃহপালিত পশু নিয়ে অন্যত্র অবস্থান নিয়েছেন। চরম দুর্ভোগে পড়েছেন মানুষজন। বন্যার পানিতে বিভিন্ন প্রজাতির সাপের উপদ্রবও দেখা গেছে। উজানের ঢল আর বৃষ্টি না থামলে জকিগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করার আশঙ্কা রয়েছে।
খবর নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার বারহাল ইউপি, কাজলসার ইউপি, মানিকপুর ইউপির বিভিন্ন স্থানে ডাইক ভেঙ্গে বন্যা পরিস্থিতি চরম আকার ধারণ করেছে। সময় সময় পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। পুরো উপজেলায় প্রায় ৮টি স্থানে ডাইক ভেঙ্গেছে। এতে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। প্রায় অর্ধলাখ মানুষ বন্যা আক্রান্ত হয়েছেন। কৃষি ও মৎস্যখাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। উপজেলা প্রশাসন থেকে ইতিমধ্যে বিভিন্ন ইউপিতে ১৮টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
বিরশ্রী ইউপির কোনাগ্রাম আশ্রয়কেন্দ্রে কয়েকটি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। তাছাড়াও উপজেলার বিরশ্রী ইউপির উজিরপুর, বড়চালিয়া, সোনাপুর, খলাছড়া ইউপির বিভিন্ন স্থানে, জকিগঞ্জ পৌর এলাকার কেছরী গ্রামে, জকিগঞ্জ সদর ইউপির বাখরশাল, মানিকপুর, রারাই, লালোগ্রাম, সুলতানপুর ইউপির ইছাপুর, সহিদাবাদ, গঙ্গাজল, বারঠাকুরী ইউপির উত্তরকুল, আমলশীদ, কসকনপুর ইউপির বিভিন্ন স্থানে ডাইকের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, বন্যার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে উপজেলায় কন্ট্রোল রুম চালু রয়েছে। বন্যার্ত মানুষের জন্য ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসনের কাছে ৫০ মেট্রিকটন চাল ও ৩ হাজার শুকনো খাবারের প্যাকেটের চাহিদা পাঠানো হয়েছে। বন্যা কবলিত এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে। বন্যার্ত মানুষের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। পরিস্থিতি বেশী অবনতি হলে লোকজনকে প্রশাসন নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসবে।
জকিগঞ্জ সদর ইউপির রারাই গ্রামের রিপন আহমদ ও আব্দুশ শহীদ জানিয়েছেন, কুশিয়ারা নদীর পানি ডাইক উপচে গ্রামে ঢুকেছে। বালু ভর্তি বস্তা ফেলেও পানি নিয়ন্ত্রণ করা হয়নি। সময় সময় পানি বাড়ছে। নদীর তীরবর্তী বাড়ির লোকজনের বসতঘরে পানি উঠায় তারা অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। পুকুরের মাছ ভেসে গেছে, সবজী চাষীদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমদ জানিয়েছেন, মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় জকিগঞ্জের আমলশীদ পয়েন্টে সুরমা-কুশিয়ারা নদীর পানি ১৪৮ সেন্টিমিটার ও শেওলা পয়েন্টে শুন্য দশমিক ৪৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
জকিগঞ্জের দায়িত্বপ্রাপ্ত ইউএনও পল্লব হোম দাস জানান, বন্যা পরিস্থিতি সময় সময় অবনতি ঘটছে। বিভিন্ন স্থানে নদীর ডাইক উপচে পানি গ্রামে ঢুকার খবর পাওয়া যাচ্ছে। উপজেলা প্রশাসন ইতিমধ্যে ১৮ মেট্রিকটন চাল বন্যা কবলিত এলাকার লোকজনের মধ্যে বন্টন করেছে। নতুন করে জেলা প্রশাসনের কাছে ৫০ মেট্রিকটন চাল ও ৩ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবারের চাহিদার কথা লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। ইউপি চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে এসব বিতরণ করা হবে।