ঢাকা, রবিবার ১২ জানুয়ারী ২০২৫, ২৮শে পৌষ ১৪৩১

জন্মের পর হাসপাতালেই নিজ সন্তানকে হত্যার অভিযোগ মায়ের বিরুদ্ধে

আব্দুল কাইয়ুম,সাভার (ঢাকা) : | প্রকাশের সময় : রবিবার ৫ নভেম্বর ২০২৩ ০২:৫৩:০০ অপরাহ্ন | দেশের খবর
সাভারে জন্মের ২ দিন পর হাসপাতালেই নিজের সন্তানকে শ্বাসরোধ করে হত্যার অভিযোগ উঠেছে জন্মদাত্রী মায়ের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত নারীকে গ্রেপ্তার ও নিহত শিশুর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠিয়েছে পুলিশ।
 
রবিবার (০৫ নভেম্বর) দুপুরে গ্রেপ্তারকৃত আসামীকে আদালতে পাঠায় আশুলিয়া থানা পুলিশ। এর আগে শনিবার (০৪ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৭ টার দিকে সাভারের গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে হাসপাতালে উপস্থিত হয় র‍্যাব ও পুলিশ। পরে অভিযুক্তকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নবীনগর র‍্যাব ক্যাম্পে নিয়ে যায় র‍্যাব ৪। পরে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আসামীকে আশুলিয়া থানায় হস্তান্তর করে। 
 
গ্রেপ্তারকৃতের নাম, আকলিমা খাতুন(২৬)। তিনি নড়াইল জেলার নড়াগাতী থানার চুনখেলা গ্রামের নুরুল হকের মেয়ে। তিনি গত দশ দিন ধরে আশুলিয়ার দক্ষিণ বাইপাইল এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করে আসছিল। তার স্বামীর নাম তারেক। তবে তারেকের সাথে আকলিমার কোন যোগাযোগ নেই।
 
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, গত ২ নভেম্বর রাত সাড়ে ৮ টার দিকে হাসপাতালের সামনে এসে প্রসব বেদনা নিয়ে ঘুরছিলেন আকলিমা। পরে হাসপাতালের কর্তব্যরতরা দেখতে পেয়ে তাকে গাইনী বিভাগে নিয়ে যায়। তার সাথে স্বজন কেউ আছে কিনা জানতে চাইলে আকলিমা বলেছিল, পেছনে লোক আছে, আসবে। স্বামীর ব্যাপারে তথ্য জানতে চাইলেও তিনি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। পরে নাম বলেন। সেখানে রাত সাড়ে ৯ টার দিকে তার একটি ছেলে সন্তান জন্ম নেয়। তখনও পরিবারের কেউ না আসায় চিকিৎসকরা দুশ্চিন্তায় পড়েন। জন্মের পরে নবজাতকের শ্বাসকষ্টের লক্ষণ দেখা দিলে তাকে শিশু বিভাগে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসা চলাকালীন অবস্থায় নিজের শিশুকে হত্যা করে আকলিমা। 
 
আকলিমার পাশের বেডের রোগীর স্বজন ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বাচ্চা জন্মের পর থেকেই বাচ্চার প্রতি উদাসীন ছিল আকলিমা। বাচ্চার ঠিকমত যত্ন না নেয়া ও বাচ্চাকে রেখে কিছুক্ষণ পরপর একেকদিকে চলে যাওয়ার অভিযোগও তুলেছেন তারা। এছাড়া বাচ্চার মৃত্যুর পর আকলিমার চোখেমুখেও কোন অপরাধবোধ কিংবা সন্তান হারানোর দুঃখের ছাপ ছিলনা। 
 
শিশু বিভাগে সেবা নিতে আসা রোগীর স্বজন রঞ্জু হাসান বলেন, আমরা দেখতাম বাচ্চাটার মা বাচ্চাকে ঠিকমত দুধ খাওয়াতো না, যত্ন নিত না। আশেপাশের অন্যরা খেয়াল রাখত বাচ্চার। সবাই ভাবত কেন এমন করছে বাচ্চার মা। আমি নিজেও বাচ্চার মায়ের মোবাইল থেকে তার স্বামীর মোবাইল নাম্বার খোজার চেষ্টা করেছি। তবে তার মোবাইলে কোন নাম্বার সেভ (সংরক্ষণ) করা নেই। আজকে একটু বাইরে গিয়েছি এসে শুনি তিনি নাকি বাচ্চাকে বুকের সাথে চেপে ধরে মেরে ফেলেছেন।
 
পাশের বেডের রোগীর স্বজন সুলতানা ও আরিফা আক্তার প্রাপ্তি বলেন, বাচ্চাকে নিজের বুকের সাথে জোরে চেপে রেখেছিল ওই নারী। খেয়াল করতে পেরে তখন তাকে বলি, বাচ্চাকে এভাবে রেখেছেন কেন? ঠিক মত নেন বাচ্চাকে। বলতেই বাচ্চাকে বুক থেকে সরিয়ে নেয় আকলিমা। সাথে সাথেই বাচ্চাটি হেলে পড়ে। পরে দেখি বাচ্চাটি মারা গিয়েছে।
 
হাসপাতালের গাইনী বিভাগের ইনচার্জ তামান্না আক্তার বলেন, আমাদের এখানে প্রসব বেদনা নিয়ে ভর্তি হয়েছিল আকলিমা। তার কোন স্বজন আমরা পাইনি। তার ফোনেও কোন নাম্বার সেভ করা পাইনি। সে যে উল্টাপাল্টা কথা বলছিল তা আমরা বুঝতে পারছিলাম, তবে সে যে পাগল না তা আমরা বুঝেছি। তবে  পরে শ্বাসকষ্ট থাকায় নবজাতককে আমরা শিশু ওয়ার্ডে পাঠাই। সেখানে শুনেছি নিজের বাচ্চাকে বুকের সাথে চেপে ধরে মেরে ফেলেছে আকলিমা।
 
অভিযুক্তের নিকট আত্মীয় ও স্বজন না পাওয়ায় এ ঘটনায় আশুলিয়া থানায় মামলা দায়ের করেন অভিযুক্তের ভাড়া বাসার মালিক মো. রিপন। 
 
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আশুলিয়া থানার এসআই (উপ-পরিদর্শক) মো. সাদরুজ জামান বলেন, নবজাতকের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। এছাড়া গ্রেপ্তারকৃত আকলিমাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।