বিগত সাড়ে ১৬ বছরের আওয়ামী লীগের শাসনামলে সাবেক এমপি মোস্তাফিজ যতটা না বেপরোয়া ছিল তার চেয়ে বেশি বেপরোয়া ছিল দুই পাপিয়া। জায়গা জমি দখল, মাদক ব্যবসা ও মামলা মোকদ্দমার নিয়ন্ত্রণ ছিল এই দুই সম্রাজ্ঞীর হাতে। একজন সাবেক এমপি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর মেয়ে রওকত প্রিয়াতা আরেকজন পৌরসভার বিনা ভোটের কাউন্সিলর রুজিয়া সুলতানা রুজি। এর মধ্যে রুজির নিয়ন্ত্রণে ছিল পৌরসভা এলাকা। পৌর এলাকার জায়গা জমি দখল, ইয়াবা ও মাদক ব্যবসা এবং মামলা মোকদ্দমার নিয়ন্ত্রণ। কাউন্সিলর হওয়ার আগে বিউটি পার্লার ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করলেও মোস্তাফিজের হাত ধরে পাল্টে যায় জীবন। স্বামীকে দিয়ে ঠিকাদারী ব্যবসার মাধ্যমে বহু রাস্তাঘাটের লক্ষ লক্ষ টাকা কামিয়েছে কথিত নারী নেত্রী রোজি। নিজেকে মহিলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পরিচয় দিয়ে দখলে রাখতেন পৌরসভা ও থানা। লোকজনকে মামলায় দেয়া, মামলা থেকে ছাড়ানো এসব ছিল মহিলা কাউন্সিলর রুজির কাজ। পৌর মেয়রের সাথে হাত করে পৌরসভার প্রায় সব কাজ ভাগিয়ে নিতেন রুজি। দাপুটে মহিলা হওয়ায় নিজ দলের মেয়র হলেও ভয়ের উপর থাকতেন সাবেক মেয়ররা। বিশেষ করে সাবেক মেয়র শেখ সেলিমুল হক ও সদ্য অপসারিত মেয়র তোফাইল বিন হোছাইনকে জিম্মি করে কাজ আদায় করতেন মহিলা নেত্রী রুজি। অপরদিকে এমপি কন্যা হওয়ায় রওকত নুর প্রিয়াতাকে নিয়ে পুরো বাঁশখালী থাকত তটস্থ। প্রিয়াতার টেলিফোনে পাল্টে যেত প্রশাসনের সিদ্ধান্ত। অনেক সময় বাবা এমপির সিদ্ধান্তও পাল্টে দিতেন এই নারী। প্রিয়তা যুব মহিলা লীগের উপজেলা সভাপতি হলেও তার সম্মান ছিল অনেক সিনিয়র নেতার উপরে। সভা সমাবেশে বক্তব্য দিতেন বাবার ঠিক আগে। বাবা প্রধান অতিথি থাকলে মেয়ে থাকত বিশেষ অতিথি। দলীয় মিছিল সমাবেশে এমপি বাবা মোস্তাফিজ গাড়িতে উঠে হাত নাড়লে মেয়ে প্রিয়াতাও হাত নাড়ত। বাঁশখালীর সাধারণ মানুষের কাছে পাপিয়া হিসেবে পরিচিতি পাওয়া যুব মহিলা লীগের উপজেলা সভাপতি রওকত প্রিয়তাকে ঘিরে বাঁশখালীতে চলছিল মধ্যযুগীয় শাসন। নিজস্ব কিশোর গ্যাংয়ের মাধ্যমে নিরীহ লোকজন বিরোধী মত এমনকি নিজ দলের বিদ্রোহীদেরও হামলা করতেন, মামলা দিতেন এই দুই মহিলা। থানার ওসি, উপজেলা প্রশাসনের নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনওসহ সরকারী বেসরকারি কর্মকর্তারা দুই পাপিয়ার হাতে জিম্মি ছিল। তাদের বাইরে গিয়ে দলীয় কিংবা এলাকা কোন ধরণের সিদ্ধান্ত নিতে পারতনা এমপি মোস্তাফিজ। তবে মোস্তাফিজের আস্কারা পেয়েই এই দুই মহিলা এমন বেপরোয়া হয়েছে বলে মনে করেন এলাকাবাসী।
আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীও এই দুই মহিলার কারণে এমপির কাছে ঘেষার সুযোগ পেতনা। সিন্ডিকেট সৃষ্টি করে ইয়াবা, মাদক ব্যবসা, ঠিকাদারী নিয়ন্ত্রণ, জায়গা জমি দখল, থানা ও উপজেলা প্রশাসন নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে কোটি টাকার মালিক বনে গেছে এই দুই মহিলা। তাদের কথামত কাজ না করলে অনেক সময় থানার ওসি এবং ইউএনওসহ সরকারী কর্মকর্তাদের হুমকি দিতেন।
পৌরসভা এলাকার আবদুর রহিম জানান, রুজি একজন বিউটিশিয়ান। মোস্তাফিজের হাত ধরে কাউন্সিলর হন। এর পর থেকেই মাদক ব্যবসা, ঠিকাদারীসহ পৌরসভার সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতেন। স্বামীকে ব্যবহার করেই ঠিকাদারি এবং মাদক ব্যবসা চালাতেন, দখল করতেন জায়গা জমি।
জালিয়াঘাটা এলাকার মোহাম্মদ আমিন চৌধুরী জানান, বাবার চেয়ে মেয়ে প্রিয়াতা ছিল আরো ভয়ংকর। মেয়ে বলে কেউ ভয়ে প্রতিবাদ করত পারতনা। বাবার এমপি পদ ব্যবহার কোটি কোটি টাকার সম্পদ গড়ে তুলেন এই প্রিয়াতা।
অভিযোগ প্রসঙ্গে পৌরসভার অপসারিত মহিলা কাউন্সিলর রুজিয়া সুলতানা রুজি জানান, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ সত্য নয়। তিনি কাউকে হয়রানি কিংবা মামলা মোকদ্দমা দেননি। মাদক ব্যবসা জায়গা জমি দখলসহ সব অভিযোগ সাজানো।
বাঁশখালী পৌরসভার সাবেক মেয়র সেলিমুল হক চৌধুরী জানান, আওয়ামী লীগের নির্বাচিত মেয়র হলেও এই মহিলার কারণে আমাকে তটস্থ থাকতে হত। আমাকে একবার একটি বাসায় আটকে লাঞ্ছিতও করেন আওয়ামী লীগের মহিলা নেত্রিরা।