দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে জয়পুরহাট চিনিকল বাইপাস সড়ক। রাস্তার দুই কিলোমিটার অংশ খানাখন্দে ভরা। শহরের ভেতর দিয়ে দিনের বেলায় ভারী ট্রাক চলাচল নিষিদ্ধ থাকায় এই অবস্থার বাইপাস দিয়েই ঝুঁকি নিয়ে তাদের চলতে হচ্ছে। এতে দুর্ঘটনাও ঘটছে।তা ছাড়া সড়কসংলগ্ন স্থানীয় বাসিন্দাদের চলাচলেও দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এমনকি হেঁটে চলাও যেন দায়।
চিনিকল ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জয়পুরহাট চিনিকল স্থাপনের পর এর আখসহ অন্যান্য মালপত্র পরিবহনের জন্য নিজস্ব অর্থায়নে ষাটের দশকে নিজেদের জায়গায় পাঁচ টন ধারণক্ষমতার দুই কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করে চিনিকল কর্তৃপক্ষ। জয়পুরহাট-খঞ্জনপুর সড়কের স্টেডিয়াম মোড় থেকে জয়পুরহাট-পাঁচবিবি সড়কের কাশিয়াবাড়ি মোড় পর্যন্ত এই সড়ক।
সেই থেকে সড়কটিতে চিনিকলের অভ্যন্তরীণ যানবাহন চলাচলসহ জয়পুরহাট শহরের পশ্চিম অঞ্চলের কয়েকটি গ্রামের লোকজন চলাচল করে আসছে।
তবে ক্রমান্বয়ে আখের উৎপাদন কমে যাওয়ায় চিনিকলে সড়কটির গুরুত্ব কমে যায়। পরে শহরে যানজটের চাপ বাড়লে সড়কটি জয়পুরহাটের পশ্চিম অঞ্চলের বাইপাস সড়কের গুরুত্ব পায়। সেই থেকে এ পথেই দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর থেকে ভারী মালপত্র নিয়ে শত শত ট্রাক নওগাঁ ও রাজশাহীসহ দেশের পশ্চিমাঞ্চলে চলাচল করে আসছে।
স্থানীয় লোকজন জানায়, ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত ২০ থেকে ২৫ টনের শত শত ট্রাক এ সড়কপথে যাতায়াত করায় সড়কটির দুই কিলোমিটার অংশ ভেঙে যায়। সড়কের জায়গায় জায়গায় পিচ উঠে বড় বড় গর্ত হয়। বৃষ্টির কারণে সড়কের ভাঙা অংশগুলো ছোট ছোট ডোবায় পরিণত হয়েছে। ফলে পুরো সড়ক চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়ে।
কাশিয়াবাড়ি এলাকার বাসিন্দা তানজির আহম্মেদ বলেন, ‘কয়েক বছর থেকে সড়কটি বেহাল।
চোখের সামনে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটতে দেখেছি। কিন্তু সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি।’
কাশিয়াবাড়ি লেভেলক্রসিংয়ের গেট কিপার রমজান আলী বলেন, ‘সড়কে বড় বড় গর্তের কারণে মালবোঝাই ট্রাক চলাচল করার সময় প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। গর্তগুলোতে বৃষ্টির পানি জমে থাকায় হেঁটেও চলাচল করা যায় না।
নওগাঁর মহাদেবপুর থেকে আসা ট্রাকচালক মোহাম্মদ রকি বলেন, ‘শহরের ভেতর দিয়ে ট্রাক নিয়ে যাওয়া যায় না। তাই বাধ্য হয়ে ঝুঁকি নিয়ে চিনিকল বাইপাস সড়কপথে চলাচল করতে হয়। ভাঙা সড়কের কারণে ট্রাকের পাতি ভেঙে যায়, কখনো কখনো টায়ার ফেটে যায়।’
চিনিকলের শ্রমিক নেতা খলিলুর রহমান বলেন, গত বছর স্থানীয় এমপি ও মেয়র সড়কটি সংস্কারের আশ্বাস দিলেও আজ পর্যন্ত তা হয়নি।
জয়পুরহাট ট্রাফিক পুলিশ পরিদর্শক জামিরুল ইসলাম বলেন, ‘সড়কটির এই দশার কারণে শহরে যানবাহনের চাপ ক্রমান্বয়ে বাড়ছে, যা সামাল দিতে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।’
জয়পুরহাট চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কৃষিবিদ আখলাছুর রহমান বলেন, ‘২৫ থেকে ৩০ টন ধারণক্ষমতার ভারী ট্রাক এ পথে চলাচল করায় সড়কটি চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে, যা সংস্কার করার মতো অর্থ আমাদের নেই।’