ঢাকা, শুক্রবার ৩ মে ২০২৪, ২০শে বৈশাখ ১৪৩১

ঝিনাইদহে তীব্র তাপদাহে দেখা দিয়েছে পানির সংকট, হাজার হাজার নলকূপে উঠছে না পানি

বসির আহাম্মেদ, ঝিনাইদহ : | প্রকাশের সময় : সোমবার ২২ এপ্রিল ২০২৪ ০৭:১৫:০০ অপরাহ্ন | দেশের খবর


ঝিনাইদহে তীব্র তাপদাহে দেখা দিয়েছে পানির সংকট, হাজার হাজার নলকূপে উঠছে না পানি। সারা দেশের ন্যায় তীব্র তাপদাহে পুড়ছে ঝিনাইদহ। মাঠে ফসল, প্রানীকূল হাঁসফাঁস করছে। সেইসাথে যুক্ত হয়েছে পানির সংকট। হস্তচালিত নলকূপ, পাম্প ও স্যালোতে উঠছে না পানি। অপরদিকে বিদ্যুতের লোডশেডিং এ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে মানুষ। ফলে গৃহস্থালি থেকে শুরু করে মাঠে কৃষক, উভয়ই পড়েছে চরম সংকটে। জেলায় ৬ টি উপজেলাতেই দেখা দিয়েছে পানির সংকট। যার মধ্যে শৈলকুপা উপজেলাতে প্রকট আকার ধারন করেছে।
ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার কদমতলা গ্রামের মাঠে স্যালোইঞ্জিন চালিয়ে ধানের সেচ কাজ করেন আজম আলী। গত দশ দিন আগেও তাঁর সেচ পাম্পে পর্যাপ্ত পানি উঠত। এখন ৪ থেকে ৫ ফুট মাটির গভীরে মেশিন বসিয়েও পানি উঠছে না। ভারি বৃষ্টি না হলে আজমের মতো ঝিনাইদহের হাজারও কৃষক জমিতে সেচ নিয়ে বিপাকে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

0-2293


জেলা শহরের রিকসা চালক শিমুল জানান, জেলা শহরের পবহাটি মাঠ পাড়ায় একটি ভাড়া বাড়িতে থাকি কিন্তু বেশ কিছুদিন যাবত টিউবওয়েলে পানি না উঠায় অনেক দুর থেকে খাবার সহ সকল কাজে ব্যবহারের জন্য পানি সংগ্রহ করি। পানির অভাবে আজ দুদিন আমি গোসল করতে পারছিনা। গত দুদিন আগে অনেক দুর থেকে পানি এনে গোসল করেছি। কিন্তু এই গরমে সারাদিন রিকসা চালিয়ে গোসল না করলে অনেক কষ্ট হয় আমার। তার পরও কষ্ট করতে হচ্ছে। কারণ এটা প্রাকৃতিক দূর্যোগের কারণে সাময়িক অসুবিধা মেনে নিয়েই চলতে হচ্ছে।
সদর উপজেলার বিষয়খালী বাজারের ব্যবসায়ী আবুল কালাম জানান, বাজারের ভিতরের একটি টিউবওয়েলে প্রায় এক মাস ধরে পানি উঠছে না। এতে বিপাকে পরেছে বাজারের মাছ ও সবজী ব্যবসায়ী সহ সকল ব্যবসায়ীরা। আর বাজারে আসা ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা টিউবওয়েলের ঠান্ডা পানি দিয়ে ওজু করতে পারছেনা।
কৃষি শ্রমিক দলিল উদ্দিন দলু জানান, তীব্র তাপদাহের কারণে মাঠে কাজ করতে পারছিনা। সকালে কিছুটা কাজ করলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে আর কাজ করতে পারছিনা। স্যালাইনের পানি সাথে নিয়ে যাচ্ছি মাঠে। কিছু সময় পরপর পানি খাচ্ছি তার পরও কাজ করতে পারছিনা। আর সন্ধার পর মনে হয় শরীরে কোন বল নাই। এখন মনে হচ্ছে মাথা ঘুরে হয়তোবা পড়ে যাবো। তার পরও সংসার চালাতে আমাদের কাজ করতে হচ্ছে। বাড়িতে বসে থাকলেতো আর সংসার চলবেনা।
ইজিবাইক চালক আশাদুল ইসলাম জানান, তীব্র তাপদাহ আর বিদ্যুতের অব্যহত লোডশেডিং এ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছি। এদিকে রাত থেকে শুরু হয়েছে বিদ্যুতের অব্যহত লোডশেডিং। যা সকালে ২/৩ মিনিট পরপর বিদুৎ আশা যাওয়ার মধ্যে আছে। এতে রাতে ঘুমাতে কষ্ট হচ্ছে শিশু সহ সকল বয়সী মানুষের।
অপরদিকে গৃহীনি সাফিয়া বেগম জানান, দুই সপ্তাহ আগেও হস্তচালিত টিউবওয়েলের পানি উঠছিল। কিন্তু সপ্তাহ খানেক ধরে টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। ফলে প্রায় হাফ কিলোমিটার দূর থেকে টিউবওয়েলের পানি এনে রান্নাসহ সংসারের সকল কাজ করতে হচ্ছে। প্রচন্ড তাপে পানি রেখে দিলে গরম হয়ে যাচ্ছে। ফলে পানি পান করতেও খুব কষ্ট হচ্ছে। পানির এমন কষ্ট বিগত কয়েক বছরেও হয়নি।
জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত নদ-নদীর প্রায় ৮০ শতাংশ পানি শুকিয়ে গেছে। এসব নদীর তলদেশে কৃষকেরা এখন ধানচাষ করছেন। ছয় উপজেলায় প্রায় অর্ধলক্ষাধিক নলকূপে পানি কম উঠছে। সাধারণত ২০ থেকে ৩০ ফুট নিচে পানির স্তর পাওয়া যায়। কিন্তু এবার ৩০ থেকে ৪০ ফুট নিচেই পানির লেয়ার চলে যাওয়ায় পানির সংকট দেখা দিয়েছে।
ঝিনাইদহের জনস্বাস্থ্য অধিদফতরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম জানান, আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারনে ভূগর্ভের পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। ফলে পানির সমস্যা দেখা দিয়েছে। সরকারিভাবে জেলায় ১৭ হাজার গভীর ও ১৮ হাজার অগভীর নলকূপ রয়েছে। এসব নলকূপে পানির স্বাভাবিক অবস্থা রয়েছে। তবে সরকারি নলকূপের নিকটবর্তী মানুষ ছাড়া পানি পান করা সম্ভব নয়। তাই পানির জন্য মানুষের কষ্ট হচ্ছে। বৃষ্টি না হলে পানির সমস্যা সমাধান হওয়া সম্ভব নয়।