ঝিনাইদহের জেলার কালীগঞ্জ উপজেলায় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীকে হারিয়ে চমক সৃষ্টি করেছেন তৃতীয় লিঙ্গের হিজড়া প্রার্থী নজরুল ইসলাম ঋতু। তিনি নৌকার প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম ছানাকে রেকর্ড ভোটে হারিয়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছেন। এ নিয়ে জেলাব্যাপী হৈ চৈ পড়েছে গেছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে নজরুল ইসলাম ঋতুই একমাত্র তৃতীয় লিঙ্গের প্রার্থী, যিনি সরাসরি ভোটে ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেন।
কালীগঞ্জ উপজেলার ত্রিলোচনপুর ইউনিয়ন পিরষদ নির্বাচনে রোববার অনুষ্ঠিত ভোটে তৃতীয় লিঙ্গের প্রার্থী নজরুল ইসলাম ঋতু নৌকার প্রার্থী নজরুল ইসলাম ছানাকে হারিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেন। তার প্রতিক ছিল আনারস। এর আগে কোটচাঁদপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তৃতীয় লিঙ্গের প্রার্থী সাদিয়া আক্তার পিংকী সরাসরি ভোটে ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
নজরুল ইসলাম ঋতু কালীগঞ্জ উপজেলার দাদপুর গ্রামের আব্দুল কাদেরের সন্তান। তার আরো তিন ভাই ও তিন বোন রয়েছে। তিন ভাই ঢাকায় থাকেন এবং বোনেদের সব বিয়ে হয়ে গেছে। জন্মের পর তৃতীয় লিঙ্গ প্রকাশ পাওয়ার পর ৫ বছর বয়সে তাকে গ্রাম ছেড়ে ঢাকাতে চলে যেতে হয়। সামান্য লেখাপড়া করলেও সামাজিক নানা প্রতিবন্ধকতায় প্রাথমিকের গন্ডি পেরোনো হয়নি। ছোটবেলা থেকেই ঢাকার ডেমরা এলাকায় তার দলের গুরুমার কাছে বেড়ে ওঠেন। এখন তার বয়স ৪৩ বছর।
এলাকাবাসী জানায়, ঋতু ঢাকাতে থাকলেও পরিবারের টানে প্রায়ই তিনি গ্রামের বাড়িতে আসেন। ১৫ বছর ধরে তিনি ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের অসহায় মানুষকে আর্থিক সহযোগীতা করে আসছেন। এভাবেই এলাকায় তার পরিচিতি ও জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে।
নজরুল ইসলাম ঋতু বলেন, সত্যি কথা বলতে নির্বাচন কি তা বুঝিনি। এলাকার মানুষ আমাকে ভালোবেসে ভোটে দাড় করিয়েছেন। আমার পরিবারের সবাই আওয়ামী লীগ করলেও আমার কখনো সক্রিয়ভাবে রাজনীতি করা হয়নি। ভোটে জয়ী হয়ে চেয়ারম্যান হয়েছি, এখন জীবনের বাকি সময় নিজ ইউনিয়নবাসির সেবা করতে চাই।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার হিজড়াদের ভোটাধিকার ও নানান সুযোগ সুবিধা করে দিয়েছেন। হিজড়া হওয়াতে আমার কোন দুঃখ নেই। আল্লাহ পাক আমাকে সুস্থ্যভাবে বাঁচিয়ে রেখেছেন এতেই আমি সন্তুষ্ট। নির্বাচনে আমাকে নৌকার প্রার্থী ও তার সমর্থকরা বাধা দিয়েছেন। কিন্তু প্রশাসন কঠোর থাকায় সুষ্ঠ ভোট হয়েছে। এতে আমি নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের প্রতি কৃতজ্ঞ।
প্রাপ্ত ফলাফলে ত্রিলোচরপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ৯টি ভোট কেন্দ্রে নজরুল ইসলাম ঋতু আনারস প্রতিক নিয়ে ৯০৪৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দি নৌকার নজরুল ইসলাম ছানা পান ৩৮৪২ ভোট। ইউনিয়নে মোট ভোটার ছিল ১৯ হাজার ৬’শ।
এদিকে হিজড়া প্রার্থীর কাছে নৌকার প্রার্থীর শোচনীয় পরাজয় প্রার্থী নিবার্চনে কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ পক্ষপাতিত্ব ও সেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠেছে। তৃনমুলের অভিযোগ, জন বিচ্ছিন্ন ব্যক্তিদের হাতে নৌকা তুলে দেওয়ার কারণে আর হিজড়া প্রার্থীর কাছে হারতে হলো।
কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন জানান, উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে ১ লাখ ৮৭ হাজার ৮২৫ জন ভোটার। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ৯৫ হাজার ৩৭৪ জন এবং নারী ভোটার ৯২ হাজার ৪৫১ জন। ইউপি চেয়ারম্যান পদে ২৯ জন, পুরুষ সদস্য পদে ৩১৫ জন ও সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ৯৪ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন।
উল্লেখ্য, কালীগঞ্জ উপজেলার তিনটি ইউনিয়নে ইতোমধ্যে তিনজন চেয়ারম্যান প্রার্থী বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এর মধ্যে ১নং সুন্দরপুর-দুর্গাপুর ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের ওহিদুজ্জামান ওদু, ৭নং রায়গ্রাম ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের আলী হোসেন অপু ও ৯নং বারবাজার ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের আবুল কালাম আজাদ বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছে।