বিদেশে পান রপ্তানী বন্ধ হওয়ার কারণে পানের দরপতনে হতাশ ঝিনাইদহ জেলার পান চাষিরা। ঝিনাইদহ ও চুয়াডাঙ্গা থেকে দেশের বাহিরে বড় একটা অংশ যেতো বিদেশে। সালমনিয়া রোগের কারণে বর্তমানে বিদেশে পান রপ্তানী এখন বন্ধ আছে। যার কারনে পানের দাম পড়ে গেছে। কৃষি বিভাগে সাথে অলোচনা চলছে অচিরেই বিদেশে পান রপ্তানী শুরু হবে। বিদেশে পান রপ্তানী শুরু হলে কৃষকরা অগের দামে আবার পান বিকক্রি করতে পারবেন।
গত ২ বছর করোনার কারণে চাহিদা কম আর রপ্তানী না হওয়ায় পানির দরে বিক্রি হচ্ছে পান। বর্তমানে দাম কম হওয়ায় উৎপাদন খরচও উঠছে না বলে জানিয়েছে কৃষকরা। বর্তমানে দেশের সব জেলাতে কমবেশি পান চাষ হচ্ছে।
এছাড়া এবার বেশি বৃষ্টির কারনে পান ভালো হয়েছে। ক্ষতির পরিমান নেই বললেই চলে। যার ফলে এবার পানের দাম খুবই কম। ঝিনাইদহে জেলার বিভিন্ন উপজেলার পানের হাটে সব্বোর্চ ভালো মানের পান ৪০ টাকা ও সর্বনিম্ন ৫ টাকা পণ দরে বিক্রি হচ্ছে।
ঝিনাইদহ জেলার ভাটই, কুলচারা, বিন্নি, পোড়াহাটী, মান্দিয়া, হলিধানী, ডাকবাংলা, হরিণাকুন্ডু উপজেলার আমতলা, জিন্দারের মোড়সহ বিভিন্ন হাটে পান কম দামে বিক্রি হচ্ছে।
সরেজমিনে ঝিনাইদহ শহরের নতুন হাটখোলা পান বাজারে গিয়ে দেখা যায়, প্রতি পণ পান সবোর্চ্চ ৪০ টাকা ও সর্বনিন্ম ৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। যা গত বছরে ২শ টাকার উপরে পানের দাম ছিল। সর্বনিম্ন ২০ থেকে ১০ টাকা দরে পান বিক্রি হয়েছে। বর্তমানে পানের দরপতনে হতাশ জেলার সকল কৃষকরা।
হরিণাকুন্ডু উপজেলার পোলতাডাঙ্গা গ্রামের পানচাষী আবুল হোসেন বলেন, এক বিঘা জমিতে পান আবাদ করতে বর্তমানে খরচ হচ্ছে ৩ লাখের উপরে। পানের সার, খৈল, বিচুলী, পাটকাঠি, ওয়াসি, শ্রমিকসহ হিসাব করলে ৩ লাখ টাকা খরচ হচ্ছে। কিন্তু বর্তমানে পানের যে দাম যাচ্ছে তাতে ভালো মানের পান হলেও ১ লাখ টাকার বেশি হচ্ছে না। দাম কম হওয়ায় এবারও আমাদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। এবার পানের যে দাম যাচ্ছে তা গত কয়েক বছরের তুলনায় সব চেয়ে কম। পানের দাম কম হওয়ার কারণে এবার উৎপাদন খরচ ও উঠছে না।
একই উপজেলার তাহেরহুদা গ্রামের কৃষক জাহিদুল ইসলাম বলেন, পানের দাম ভালো পেতে এখন সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। ভারত থেকে কিছু পান আসে সেই পান আনা বন্ধ করতে হবে আর আমাদের দেশীও বিদেশে পান রপ্তানী বাড়াতে হবে।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার রাজনগর গ্রামের পানচাষী আব্দুল লতিফ বলেন, গত ২ বছর করোনার কারণে পান বিক্রি কম হয়েছে। গত ২ বছর পান বিক্রি করতে পারিনি। আর এখন বিক্রি হলেও দাম কম পাচ্ছি। এভাবে চলতে থাকলে পানের আবাদ বন্ধ করে অন্য আবাদ করা লাগবে।
ভবানীপুর গ্রামের পান চাষি মজনু জানান, বর্তমানে দেশের সব জেলাতে কমবেশি পান চাষ হচ্ছে। এছাড়া এবার বেশি বৃষ্টির কারনে পান বেশি ভালো হয়েছে। ক্ষতির পরিমান নেই বললেই চলে। যার ফলে এবার পানের দাম খুবই কম। এছাড়া আমেরিকা, ইংলেন্ড, সৌদি-আরব ও কুয়েতসহ বিভিন্ন দেশে পান রপ্তানী হতো। সেখানে বর্তমানে পান রপ্তানী হচ্ছেনা। ফলে এবার পানের দাম।
একই এলাকার ইব্রাহিম জোয়ারদার জানান, আমদানি বেশি হওয়ার কারনে এবার পানের দাম খুবই কম। সারা বাংলাদেশে কম বেশি মন্টু, মিষ্টি ও ঝাল পান আবাদ হচ্ছে। ফলে পানের দাম নেই বললে চলে। এর আগে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও পান রপ্তানী করা হতো। সেটা এখন বন্ধ রয়েছে। ফলে পান চাষিরা চরম বিপদে আছে।
ঝিনাইদহ জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরে উপ-পরিচালক আজগর আলী বলেন, সালমনিয়া রোগের কারণে বর্তমানে বিদেশে পান রপ্তানী এখন বন্ধ আছে। যার ফলে পানের দাম পড়ে গেছে। কৃষক ভাইদের পানের ন্যায্য মুল্যে নিশ্চিত করতে আমরা কাজ করছি। পান চাষীরা যেন সিন্ডিকেটের কবলে যেন না পড়ে এ জন্য নিয়মিত ভাবে বাজার পরিদর্শন করছি। আর কৃষি বিভাগের সাথে আলোচনা করে বিদেশে পান রপ্তানী বাড়ানোর ব্যাপারে কথা চলছে।
ঝিনাইদহ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য মতে, এ বছর ঝিনাইদহ জেলা সদর, হরিনাকুন্ডু, শৈলকুপা, কালীগঞ্জ, কোটচাদপুর ও মহেশপুরে ৬ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের মাঠে ২০২১ অর্থ বছরে ২ হাজার ২ শ ৩৯ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়। ফলন হয় ১২ দশমিক ৭/৫ টন পার হেক্টর জমিতে। ২০২১/২২ শে ২ হাজার ৩শ ৬৯ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়। ফলন ১৩ দশমিক ৩/৪ টন পার হেক্টর জমিতে।