ঢাকা, শনিবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

টাঙ্গাইলে জাল নিবন্ধন সনদে ১০বছর যাবৎ চাকুরি করছেন শিক্ষক

হাসান সিকদার, টাঙ্গাইল | প্রকাশের সময় : শনিবার ১১ ডিসেম্বর ২০২১ ০১:৩৭:০০ পূর্বাহ্ন | জাতীয়

 

নিবন্ধনের জাল সনদে ১০বছর যাবৎ চাকুরি করছেন শিক্ষক। হয়েছেন এমপিওভুক্ত। চাঞ্চল্যকর এমন অভিযোগ উঠেছে টাঙ্গাইলের উপজেলা সদরের ঘাটাইল সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ভোকেশনাল শাখার ট্রেড ইনস্ট্রাক্টর পদে কর্মরত ফজলুল করিম এর বিরুদ্ধে। তবে দীর্ঘদিন ওই ট্রেডের শিক্ষক জাল নিবন্ধন সনদে কর্মরত থাকলেও সেটি ধরতে পারেনি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সনদ যাচাই বাছাই করে অবশেষে ওই শিক্ষকের নিবন্ধন সনদটি জাল বলে প্রত্যয়ন দিয়েছে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশও দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।

জানা যায়, ২০০৯ সালের ১ জুলাই ওই বিদ্যালয়ের ভোকেশনাল শাখার ট্রেড ইনস্ট্রাক্টর পদে যোগদান করেন ফজলুল করিম। ২০১০ সালের ১ মে এমপিওভুক্ত হন। যোগদানের সময় ২০০৫ সালের প্রথম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার নিবন্ধন সনদ জমা দেন তিনি। বর্তমান সরকার বিদ্যালয়টি সরকারি করেছে। সরকারিকরণের পর শিক্ষকদের বিভিন্ন কাগজপত্র যাচাই করতে গিয়ে শিক্ষক ফজলুল করিমের শিক্ষক নিবন্ধন সনদটি নিয়ে সন্দেহ হয় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। এ কারণে তার ১২৫০৪৩৪ রোল নাম্বারধারী ও ০৫৩০০১৭৬/২০০৫ রেজিস্ট্রেশন নম্বরের সনদের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য এনটিআরসিএ এর কাছে পাঠায় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। যাচাই শেষে গত ৮ নভেম্বর এনটিআরসিএ সহকারী পরিচালক ফিরোজ আহম্মেদ স্বাক্ষরিত পত্র মারফত জানিয়ে দেন ট্রেড ইনস্ট্রাকটর পদের শিক্ষক ফজলুল করিমের শিক্ষক নিবন্ধন সনদটি জাল ও ভুয়া। ওই রোল ও রেজিস্ট্রেশন নম্বরের প্রকৃত সনদধারী ব্যক্তির নাম মাজেদুর রহমান।

পত্রে এনটিআরসিএ ভুয়া ও জাল সনদধারী শিক্ষকের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করে তা কর্তৃপক্ষকে অবগতি করার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। 

আমার শিক্ষক নিবন্ধন সনদটি জাল ও ভুয়া নয়। এটি কর্তৃক্ষের করণিক ত্রুটি বলে দাবি করেছেন অভিযুক্ত শিক্ষক ফজলুল করিম। সংশোধনের জন্য আবেদন করেছেন বলেও জানান তিনি।

এ ব্যাপারে ঘাটাইল সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আজহারুল ইসলাম জানান, তার শিক্ষক নিবন্ধন সনদটি নিয়ে সন্দেহ হওয়ায় তা যাচাই করতে এনটিআরসিএ’তে পাঠানো হয়। গত ৮ নভেম্বর এনটিআরসিএ কর্তৃপক্ষ তার শিক্ষক নিবন্ধন জাল ও ভুয়া বলে আমাদেরকে পত্রের মাধ্যমে জানিয়েছেন। এছাড়াও এনটিআরসিএ কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে থানায় মামলা করতেও নির্দেশনা প্রদান করেছেন। 

তিনি জানান, সম্প্রতি বিদ্যালয়টি সরকারিকরণ হওয়ায় সনদ যাচাই বাছাইয়ের কাজ শুরু করে এনটিআরসিএ কর্তৃপক্ষ। যাচাই বাছাইয়ের শুরুতে শিক্ষক ফজলুল করিম ও পিতা সুলতান মিয়া এর নিবন্ধন সনদ জাল ও ভুয়া বলে চিঠি পাঠায়। তবে ওই নামে শিক্ষক থাকলেও পিতা নাম ভুল ছিল। এরপর সঠিক তথ্য যাচাইয়ের আবেদন করা হয়। এরপর যাচাই বাছাই করে ফজলুল করিম ও পিতা এবিএম শাহজাহান ঠিক আসলেও পিতার নামের বানামে প্রিন্টিং ত্রুটির ফলে এবিএম শাহজান এসেছে। এরপরও আবার আক্ষরিক ভূল সংশোধনের জন্য আবেদন করা হয়েছে। এ কারণে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। তবে শোকজ করাসহ সনদ আনার জন্য বলা হয়েছে। তবে এখনও তিনি সনদ দিতে পারেননি।

তিনি আরও জানান, প্রায় এক বছর আগে ফজলুল করিম হঠাৎ তার সনদটি সঠিক এমন একটি কপি দেন। এ সময় তিনি কেন এমন কাগজটি দিলেন প্রশ্ন করা হয়। তখন তিনি জানান সনদ যাচাই বাছাই চলছে। এ কারণে তার সনদ সঠিক সেটি যাচাই বাছাইয়ের পর এটি তিনি সংগ্রহ করেছেন। তবে ওই কাগজটির ফ্রন্ট নিয়ে আমার সন্দেহ দেখা দেয়। এরই মাঝে আসে এনটিআরসিএ কর্তৃপক্ষের পাঠানো ওই জাল সনদধারীর চিঠি।