ঢাকা, বুধবার ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

টাঙ্গাইলে পুলিশ হেফাজতে এক ব্যক্তির মৃত্যু নিয়ে রহস্য

হাসান সিকদার, টাঙ্গাইল | প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১১:২০:০০ অপরাহ্ন | জাতীয়
টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে পুলিশের হেফাজতে লেবু মিয়া (৫০) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর) ভোরে বাঁশতৈল পুলিশ ফাঁড়িতে তার মৃত্যু হয়। নিহতের পরিবারের দাবি, লেবু মিয়াকে পুলিশ নির্যাতন করে হত্যা করেছে।
অপর দিকে পুলিশের দাবি, লেবু মিয়া গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। নিহত লেবু মিয়া বাঁশতৈল গ্রামের বাহার উদ্দিনের ছেলে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় আট বছর আগে সখিনা বেগম (৪৩) নামে নারীর সঙ্গে বাঁশতৈল গ্রামের মফিজুর রহমানের (৪৭) বিয়ে বিচ্ছেদ হয়। এরপর থেকে তিনি একই গ্রামে আলাদা বাড়ি তৈরি করে দুই মেয়ে ও ছেলেকে নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন। মেয়েদের বিয়ে হওয়ায় প্রবাসী ছেলের স্ত্রীকে নিয়ে ওই বড়িতে থাকতেন তিনি। রোববার (২৫ সেপ্টেম্বর) রাতে সখিনা বাড়িতে একা ছিলেন। এরপর সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সকালে তিনি ঘুম থেকে না ওঠায় পাশের বাড়ির লোকজন খোঁজ করতে গিয়ে তার লাশ দেখতে পান। খবর পেয়ে মির্জাপুরের বাঁশতৈল ফাঁড়ির পুলিশ লাশ উদ্ধার করে। তার পরিবারের দাবি সখিনাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় সখিনার ভাই বাদী হয়ে মির্জাপুর থানায় মামলা করেন। সেই মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সখিনা বেগমের সাবেক স্বামী বাঁশতৈল গ্রামের মফিজুর রহমান (৪৭) এবং প্রতিবেশী লেবু মিয়াকে (৫০) আটক করে নিয়ে যায় পুলিশ। 
অভিযোগ রয়েছে, লেবু মিয়ার সঙ্গে সখিনার পরকীয়া ছিল। মঙ্গলবার ভোরে বাঁশতৈল পুলিশ ফাঁড়ির হাজতখানার ভেতর থেকে লেবু মিয়ার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তের দাবিতে এলাকাবাসী সখীপুর-গোড়াই সড়কের বাঁশতৈল এলাকায় টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে রাখে। সুষ্ঠ তদন্ত করে অপরাধীর শাস্তির ব্যবস্থার কথা বললে আন্দোলনকারীরা অবরোধ তুলে নেয়।
মৃত লেবু মিয়ার স্ত্রী আলিয়া বেগম বলেন, আমার স্বামীকে বিনা অপরাধে পুলিশ আটক করে নিয়ে যায়। আমার স্বামীর বিরুদ্ধে কোনও মামলা নেই। রাতে তাকে নির্যাতন করে মেরে ফেলা হয়। আমার স্বামী হত্যার বিচার চাই।
স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য ইদ্রিস আলী বলেন, বাঁশতৈল ফাঁড়ির এসআই সেলিম তাকে আটক করে নিয়ে যায়। পরে তাকে বেধড়ক মারপিট করা হয়। এক পর্যায়ে তার মৃত্যু হয়। পরে পুলিশ আত্মহত্যার নাটক সাজাচ্ছে। আমরা হত্যার বিচার চাই।
মির্জাপুর বাঁশতৈল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সাখাওয়াত হোসেন জানান, ফাঁড়িতে কাউকে নির্যাতন করা হয়নি। যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা মিথ্যা ও বানোয়াট।
টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ)  শরফুদ্দীন জানান, মির্জাপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আমিনুল ইসলাম বুলবুলের উপস্থিতিতে মরদেহটি ঝুলন্ত অবস্থা থেকে নিচে নামানো হয়। পরে তিনি মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে। তবে হাজতখানার ভেতরে রশি কোথা থেকে এলো এ নিয়ে তদন্ত করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। 
মির্জাপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আমিনুল ইসলাম বুলবুল জানান, হাজতখানার ভেতরে ভ্যান্টিলেটারের সঙ্গে সাদা রঙের নাইলনের রশি দিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় লেবু মিয়ার মরদেহ দেখা যায়। নিহতের গলায় রশির কালো দাগ ছাড়া চিহ্ন দেখা যায়নি।