চাহিদা বাড়লে বাড়বে ভাড়া, চাহিদা কমলে কমবে- দেশে ট্রেন পরিচালনায় এমন পদ্ধতি চালু করতে চায় বাংলাদেশ রেলওয়ে। বিশ্বব্যাপী উড়োজাহাজের টিকিট বিক্রিতে চালু থাকা এই নিয়ম দেশের ট্রেনে চালু করতে জাতীয় সংসদের রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটিতে প্রস্তাব দিয়েছে রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চল (রাজশাহী)। তবে এ বিষয়ে নিজেদের বৈঠকে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি বা নির্দেশনা দেয়নি রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি।
এছাড়া ট্রেনের ভাড়া বাড়ানো, রেলের কোচ ও গতি বাড়ানো, ট্রেন ও স্টেশনে বাণিজ্যিক বিজ্ঞাপন প্রচার ব্যবস্থা করা, রেলস্টেশনগুলো বাণিজ্য হাবে পরিণত করাসহ বেশ কিছু প্রস্তাব দিয়েছে রেলওয়ে। তবে এগুলোর কোনোটির বিষয়ই চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
দেশে ঈদ, পূজার মতো বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসব, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটির সময় ট্রেনে যাত্রীর চাপ প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে যায়। বাধ্য হয়ে ধারণক্ষমতার বেশি যাত্রী পরিবহন করে ট্রেন। এতে কোচের ক্ষতি হয়। আর্থিকভাবেও রেল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়া যাত্রীদেরও ভোগান্তি বেড়ে যায়। তাই উড়োজাহাজের টিকিটের মতো চাহিদা বাড়লে ভাড়া বাড়বে, চাহিদা কম থাকলে ভাড়া কমবে- এই পদ্ধতিতে ট্রেনের টিকিটের দাম বাড়ানো যেতে পারে। এতে রেলের আয়ও বাড়বে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত এই পদ্ধতিতে ট্রেন পরিচালনা করে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশের অধিকাংশ সরকারি প্রতিষ্ঠানের মতো রেলওয়েও বছরের পর বছর লোকসান দিয়ে চলছে। তাই গত জুনে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নে নির্দেশনা দেয় সংসদীয় কমিটি। পরে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চল। ওই কমিটির প্রতিবেদনে ট্রেনের ভাড়া বাড়ানো, ভূমি ব্যবস্থাপনা, সঠিক রেল ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন ও জনবল কাঠামোর উন্নয়নের প্রস্তাব তুলে ধরা হয়।
এর মধ্যে ‘ট্রেনের টিকিটের চাহিদা বাড়লে দাম বাড়বে, চাহিদা কম থাকলে দাম কমবে’, এমন প্রস্তাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, এই পদ্ধতিতে কিছু টিকিট সংরক্ষিত থাকবে। জরুরি প্রয়োজনে বেশি ভাড়া দিয়ে এই টিকিট কিনতে পারবেন যাত্রীরা।
গত ৪ আগস্ট জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভায় প্রতিবেদনটি জমা দেয় রেলওয়ে। তবে সভায় ওই প্রস্তাব নিয়ে কোনো আলোচনা করেনি কমিটি। ফলে প্রস্তাবটি এখনো ফাইলবন্দি অবস্থায় পড়ে রয়েছে বলে জানা গেছে।
রেলওয়ের সেবার মান না বাড়িয়ে ভাড়া বাড়ানোর কোনো যৌক্তিকতা নেই। আর রেলওয়ে যেহেতু একটি সরকারি সংস্থা, এখানে লাভ বা আয়ের হিসাব করার অবকাশ নেই। বরং রেলওয়ে বছরে কোন খাতে কত টাকা আয় করে, আর কোন খাতে কত টাকা ব্যয় করে, এই হিসাব জনগণকে দিতে হবে।
রেলওয়ের সংশ্লিষ্টদের দাবি, প্রস্তাবটি সংসদীয় কমিটি অনুমোদন দিলে রেলওয়ের আয় বাড়বে। বছরে লোকসান বা ভর্তুকির পরিমাণ কমবে। রেলওয়ের সেবার মানও বাড়বে।
তবে ভিন্ন কথা বলেছেন রেলওয়ের অংশীজন ও বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী। তিনি বলছেন, রেলওয়ের সেবার মান না বাড়িয়ে ভাড়া বাড়ানোর কোনো যৌক্তিকতা নেই। রেলওয়ে যেহেতু একটি সরকারি সংস্থা, এখানে লাভ বা আয়ের হিসাব করার অবকাশ নেই। বরং রেলওয়ে বছরে কোন খাতে কত টাকা আয় করে, আর কোন খাতে কত টাকা ব্যয় করে- এই হিসাব জনগণকে দিতে হবে।