ঢাকা, শুক্রবার ৩ মে ২০২৪, ২০শে বৈশাখ ১৪৩১

ড্রাগন গ্রাম গৌরীনাথপুর

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: | প্রকাশের সময় : রবিবার ২৭ অগাস্ট ২০২৩ ০৮:২৫:০০ অপরাহ্ন | দেশের খবর
ছিমছাম গ্রাম গৌরিনাথপুর। এ গ্রামে ঢুকতেই একটা সাইনবোর্ডে চোখ আটকে যায়। ওই সাইনবোর্ডে লেখা—‘বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা আর ড্রাগন ফলের রাজধানী গৌরিনাথপুর’। ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার এ গ্রামটি ইতোমধ্যে ‘ড্রাগন গ্রাম’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। কেউ কেউ বলছেন গ্রামের নাম পরিবর্তন করে ‘ড্রাগনপুর’ রাখতে। 
 
এ গ্রামে মাঠকে মাঠ ড্রাগন ফলের চাষ চলছে। যে কারণে ওই গ্রামেই মাত্র তিন মাসে সৃষ্টি হয়েছে বিশাল ড্রাগনের হাট। এ হাট থেকে প্রতিদিন প্রায় গড়ে বিক্রি হচ্ছে পাঁচ কোটি টাকার ড্রাগন।
 
2-407
 
হাটটি একেবারে গ্রামাঞ্চলে হলেও যোগাযোগব্যবস্থা ভালো থাকায় খুব অল্প সময়ে জমে উঠেছে। ড্রাগন ব্যবসায়ীরা দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসছেন পাইকারি দরে ওই হাটে ফল কিনতে। 
 
মহেশপুর পৌর শহর থেকে ছয় কিলোমিটার পূর্বে এবং কোটচাঁদপুর পৌর শহর থেকে চার কিলোমিটার দক্ষিণে কোটচাঁদপুর-পুড়াপাড়া সড়কে অবস্থিত।
 
ওই হাটের ড্রাগন ফলের আড়তদার নাজমুল হোসেন জানান, ড্রাগনের নতুন হাট তৈরি হওয়ায় কর্মসংস্থান হয়েছে কয়েকশ বেকার যুবকের। ন্যায্যমূল্যে ড্রাগন বিক্রি করতে পেরে খুশি এখানকার চাষিরা। 
 
গৌরীনাথপুর হাট কমিটির সভাপতি জসিম উদ্দীন জানান, এই উপজেলাসহ আশপাশের উপজেলায় ব্যাপক ড্রাগন চাষ হওয়ায় তিনি ওই হাটে বড় একটি টিনের চালা দেন আড়ত হিসেবে। এলাকার মানুষ অনেকেই সে সময় আমাকে পাগল বলেছিল। তারা বলেছিল, গ্রামের মধ্যে ড্রাগনের আবার পাইকারি বাজার হয় কখনো! তিনি তখন জেদের বশেই দেশের বিভিন্ন এলাকার পাইকারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ড্রাগনের ব্যবসা শুরু করেন।
 
2-408
 
তিনি বলেন, আমার একটিমাত্র আড়তে ব্যাপক বেচাকেনা দেখে মাত্র তিন মাসের মধ্যে ওই বাজারে এখন ৩০টি বড় বড় ফলের আড়ত বসেছে। এ ড্রাগন ফলের হাটে প্রতিদিন প্রায় গড়ে পাঁচ কোটি টাকার ড্রাগন বিক্রি হচ্ছে।
 
আড়ৎ মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এসব আড়তে প্রায় আড়াই’শ শ্রমিক কাজ করছে। এর আগে তাদের মধ্যে অনেকে কৃষিকাজসহ বিভিন্ন কাজে জড়িত ছিল। কেউ ছিল ভবঘুরে। 
 
আড়ত শ্রমিক ইব্রাহিম জানান, প্রতিদিন তাদের দুপুরে খাওয়া বাবদ ১০০ টাকা ও দিন শেষে ৫০০ টাকা করে দেওয়া হয়। অপর শ্রমিক সাইদুর রহমান বলেন, রোদে পুড়ে মাঠে কাজ করতে গেলে ৩০০-৪০০ টাকার বেশি পাওয়া যায় না। সে অনুযায়ী এখানে অনেক ভালো আছি।
 
ঢাকা থেকে আসা ব্যাপারী আবুল কালাম জানান, একই জায়গায় মান যাচাইয়ের মাধ্যমে আমরা ফল কিনতে পারছি। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়ার কারণে সারাদেশ থেকে ব্যাপারীরা আসে ফল কিনতে এ হাটে। সঠিক মূল্যে ভালো ফল কেনা যায়। নিরাপত্তা ভালো। 
 
আড়তদার জসিম উদ্দীন জানান, মাত্র সাড়ে ৩ মাসের এ হাটে এখন প্রতিদিন বেচাবিক্রি হয় ৫ কোটি টাকার ড্রাগন। অনেকে এলাকার নাম পরিবর্তন করে বলছেন ড্রাগনপুর। সারাদেশ থেকে ব্যাপারিরা সপ্তাহে ৭ দিনের এ হাটে আসছেন। মান ভেদে এক কেজি ড্রাগন বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১৮০ টাকা পর্যন্ত। এতে লাভবান হচ্ছেন ঝিনাইদহ, যশোর, চুয়াডাঙ্গাসহ আশপাশ জেলার ড্রাগন চাষিরা।
 
ঝিনাইদহ জেলা বিপণন কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম জানান, চাষিদের ন্যায্যমূল্য পেতে ও বাজার ব্যবস্থা আরও সম্প্রসারণে ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপারে কার্যক্রম চলছে। 
 
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আজগর আলী জানান, ড্রাগন চাষে চাষিদের নানা পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। 
 
তিনি জানান, জেলায় ৩ বছরের ব্যবধানে ড্রাগনের চাষ বেড়েছে প্রায় ৭শ হেক্টর জমির। হাটে বর্তমানে ২৫-৩০টি আড়ৎ রয়েছে। ২০২১ সালে ড্রাগনের চাষ হয় ১শ ৪১ হেক্টর জমিতে। ৩ বছরের ব্যবধানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮শ ৪২ হেক্টর জমিতে।