ঢাকা, রবিবার ১৯ মে ২০২৪, ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

তেঁতুলিয়া ও লোহালিয়া নদীতে নিষিদ্ধ জালে অবাধে মাছের রেণু পোনা শিকার।

বরিশাল ব্যুরোঃ | প্রকাশের সময় : শুক্রবার ১৮ নভেম্বর ২০২২ ০৭:৪৮:০০ অপরাহ্ন | দেশের খবর

 

পটুয়াখালীর বাউফলে তেঁতুলিয়া ও লোহালিয়া নদীতে নিষিদ্ধ বাঁধা   (বেহুদি) ও চর ঘেড়া জাল দিয়ে অবাধে মাছ শিকার চলছে। ভয়ংকর এই জাল দিয়ে শুধু মাছ শিকারই নয় ধংস করা হচ্ছে সকল প্রজাতির মাছের রেনু পোনা। ফলে দিন দিন প্রকৃতিকভাবে তেঁতুলিয়া ও লোহালিয়া নদীতে মাছের উৎপাদন কমে যাচ্ছে। শিগগরিই এ ব্যাপার ব্যবস্থা নেয়া না হলে হারিয় যাবে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। 
 
সরেজমিন পরিদর্শনকালে জানা যায়, বাউফলের তেঁতুলিয়া ও লোহালিয়া নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে নিষিদ্ধ বাঁধা (বেহুন্দি) ও বড় চর ঘেড়া জাল দিয়ে মাছ শিকার করা হচ্ছে। একাধিক ডুবা চর এবং নদীর তীর ঘেঁষা কয়ক’শ মিটার দৈর্ঘ্যর এককটি বড় চর ঘেড়া জাল জোয়ারের সময় পাতা হয়। ভাটার সময় পানি নেমে গেলে বড় চর ঘেড়া জালে আটকা পড়ে ছোট বড় মাছের পাশাপাশি অসংখ্য মাছের রেনু পোনা। অপরদিকে  বেহুন্দি  জালকে স্থানীয় ভাষায় বাঁধা জাল বলা হয়। এই বাঁধা জাল পানির গভীর আড়াআড়ি ভাবে পাতা হয়।  বেহুন্দি জালে আটকে পড়া মাছের সঙ্গে অসংখ্য রেনু পোনা মারা যায়। তেঁতুলিয়া নদীর চরব্যারেট, মমিনপুর, ধুলিয়া, নিমদি,লাল চর, চরওয়াডেল, বোরহানউদ্দিনর সাঁচড়া ও লালমাহনের নাজিরপুর পয়েন্ট এবং লোহালিয়া নদীর ঝিলনা ও বাহেরচর পয়েন্টে অসংখ্য বেহুন্দি জাল দিয়ে মাছ শিকার করা হচ্ছে। সরকারি নিয়মে ৪ দশমিক ৫ সটিমিটার ফাঁসের জাল দিয়ে নদীত মাছ শিকার করার নিয়ম। অথচ চর ঘেড়া জাল তৈরি করা হয় মশারী দিয়ে। অপরদিক বাঁধা জালের ফাঁস মশারীর ফাঁসের চেয়ে কিছুটা বড়। জেলেদের মধ্যে বড় চর ঘেড়া ও বাঁধা জাল রাক্ষুসে জাল হিসেবেও পরিচিত।
 
খোঁজ নিয় জানা যায়, স্থানীয় প্রভাবশালীদের শেল্টার নিয়ে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে এক শ্রেণীর দাদন ব্যবসায়ী জেলেদের তেঁতুলিয়া ও লোহালিয়া নদীত নির্বিঘ্নে  বড় চর ঘেড়া ও বাঁধা  (বেহুন্দি) জাল দিয়ে মাছ শিকার করাচ্ছেন। ইতিমধ্যে একাধিক দাদন  ব্যবসায়ী শূণ্য থেকে কোটিপতি বনে গেছেন। কালাইয়া লঞ্চঘাট ও নিমদী লঞ্চঘাট এলাকার একাধিক দাদন ব্যবসায়ী শূণ্য থেকে এখন কোটিপতি।
 
সম্প্রতি বাউফলর চদ্রদ্বীপ ইউনিয়নর চরব্যারেট এলাকায় তেঁতুলিয়া নদীর এপাড়-ওপাড় জুড়ে নিষিদ্ধ বাঁধা জাল (বেহুন্দি) ও চর ঘেড়া পেতে মাছ ধরার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছেন ৩ শতাধিক জেলে। বিক্ষোভে অংশ নেয়া জেলেরা জানান, ভোলা জেলার বোরহানউদ্দিন উপজলার সাঁচড়া ইউনিয়নের শতাধিক জেলে তেঁতুলিয়া নদীর এপাড় ওপাড় জুড়ে প্রতিদিন নিষিদ্ধ বাঁধা জাল ও বাউফল উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের শতাধিক জেলেরা  চর ঘেড়া জাল পেতে মাছ শিকার করছেন। ফলে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন প্রজাতির মাছের অসংখ্য রেনু  পোনা ধংস   হচ্ছে। অবিলম্ব ওই রাক্ষুস জালর ব্যবহার বন্ধ করার দাবী জানান জেলেরা।  
 
ইলিশ প্রজননর জন্য ২২ দিন নিষধাজ্ঞার পর বর্তমান নদ-নদীতে ‘চাপিলা’ হিসেবে পরিচিত ইলিশের পোনায় সয়লাব হয়ে গেছে। প্রতিবছরই ইলিশর পোনা শিকার করার জন্য নিষিদ্ধ বাঁধা ও চর ঘেড়া জাল ব্যবহার কর একটি অসাধু চক্র। এবারও তঁতুলিয়া নদীত বাঁধা জাল পেতে মাছ শিকারর মহাৎসব মেতেছে চক্রটি। 
 
 
এ প্রসঙ্গে বাউফল উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা( অঃ দাঃ)মোঃ মাহবুব আলম তালুকদার বলেন, বাঁধা ও বড় চর ঘেড়া জালের কারনে নদীতে প্রকৃতিকভাব বিভিন্ন প্রজাতির মাছের বংশবৃদ্ধি ব্যহত হচ্ছে। সেক্ষেত্রে মৎস্য বিভাগ কম্বিং অপারেশন পরিচালনা করে অবৈধ জাল উদ্ধারের পর তা ধংস করেছে। 
 
তিনি বলেন, নদীতে অবৈধ জালের ব্যবহার বন্ধের জন্য র‌্যাব ও কোষ্টগার্ডের অভিযান বাড়াতে হবে। সেই সঙ্গে অভিযান পরিচালনার জন্য সরকারকে আধুনিক নৌযান ও  চাহিদা মোতাবেক আর্থিক বরাদ্দ প্রদান করতে হবে।