ঢাকা, বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ই বৈশাখ ১৪৩১

দেশের প্রায় ১ কোটি মানুষ হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাসে আক্রান্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক : | প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার ২৮ জুলাই ২০২২ ১১:২৭:০০ পূর্বাহ্ন | স্বাস্থ্য

 

হেপাটাইটিস একটি সংক্রামক ব্যাধি। এর সংক্রমণকে নীরব ঘাতক হিসেবে দেখা হয়। হেপাটাইটিসের সংক্রমণ বাংলাদেশে মূলত জন্ডিস রোগ হিসেবে পরিচিত। প্রকৃত অর্থে হেপাটাইটিস হলো ভাইরাসজনিত লিভারের রোগ। চিকিৎসা বিজ্ঞানে ৫ ধরনের হেপাটাইটিস রয়েছে। হেপাটাইটিস এ, বি, সি, ডি এবং ই। এর মধ্যে হেপাটাইসিস এ এবং ই-এর সংক্রমণ স্বল্পমেয়াদি, যা থেকে চিকিৎসকের পরামর্শ এবং সচেতনতায় দ্রুত সেরে ওঠা সম্ভব। তবে হেপাটাইটিসের বি এবং সি ধরন সাধারণত মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে।

বাংলাদেশের প্রায় ১ কোটি মানুষ হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাসে আক্রান্ত। দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৫ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ হেপাটাইটিস বি এবং ১ শতাংশ মানুষ হেপাটাইটিস সি ভাইরাসের বাহক। এই দুটির সংক্রমণে লিভার সিরোসিস ও ক্যানসার হতে পারে। হেপাটাইটিসের ই ধরনটি বিপদজনক হয়ে থাকে গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে। এছাড়া হেপাটাইটিসের বি ধরনের সঙ্গে একই সময়ে ডি ধরনেরও সংক্রণ ঘটতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হেপাটাইটিসের যে ৫ রকম ধরন আছে, তার সবগুলোর সংক্রমণই বাংলাদেশে আছে। এর মধ্যে হেপাটাইটিস এ ও ই পানিবাহিত রোগ, যা দূষিত পানির মাধ্যমে মানুষের দেহে সংক্রমিত হয়। বি ও সি রক্ত বা শরীরের অন্যান্য তরল, ভ্যাজাইনাল তরল পদার্থের মাধ্যমে মানুষের দেহে সংক্রমিত হয়।

সারাবিশ্বের মতো বৃহস্পতিবার (২৮ জুলাই) দেশেও পালিত হচ্ছে বিশ্ব হেপাটইিটিস দিবস-২০২২। এবছর দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘হেপাটাইটিস ক্যান নট ওয়েট অর্থাৎ হেপাটাইটিস নির্মূলের এখনই সময়’। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ২০৩০ সালের মধ্যে হেপাটাইটিস নির্মূলের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ দিবসটি উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন।

সারাবিশ্বে প্রায় ৩০ কোটি মানুষ হেপাটাইটিসের কোনো না কোনো ধরনে আক্রান্ত। তবে প্রতি ১০ জনের ৯ জনই জানেন না তাদের হেপাটাইটিস আছে। ভাইরাস প্রতিরোধে অসচেতনতা ও সময়মতো শনাক্ত না হওয়ায় অসংখ্য রোগী চিকিৎসার বাইরে থাকছেন।

হেপাটাইটিস বি ও সি লিভার ক্যানসারের প্রধানতম কারণ এবং বিশ্বে মানুষের মৃত্যুর প্রধান ১০টি কারণের একটি হলো লিভার সিরোসিস। লিভার ক্যানসার বিশ্বে এবং বাংলাদেশে ক্যানসারজনিত মৃত্যুর তৃতীয় প্রধান কারণ। এই দুই ভাইরাসজনিত লিভার রোগের কারণে বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় ১ দশমিক ৮ মিলিয়ন মানুষ এবং প্রতি ৩০ সেকেন্ডে একজন মানুষের মৃত্যু হয়।

তবে ডব্লিউএইচও’র লক্ষ্যমাত্রায় ২০২২ সাল থেকে ২০৩০ সাল এই ৮ বছরে বাংলাদেশে হেপাটাইটিস নির্মূল করা সহজ হবে না জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। হেপাটাইটিস নির্মূলে এখনো উল্লেখযোগ্য পরিকল্পনা গ্রহণ না করাকে কারণ হিসেবে উল্লেখ করছেন তারা। শিশুদের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি-ইপিআই সেবার মাধ্যমে হেপাটাইটিসের টিকা প্রদান করা হলেও দেশের বিশাল অংশ টিকার বাইরে রয়ে যাচ্ছে। এছাড়া মানুষের মধ্যে এই রোগ নিয়ে সচেতনতা না থাকাকেও কারণ হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।

তবে এই সময়ের মধ্যে পরিপূর্ণভাবে হেপাটাইটিস নির্মূল করা না গেলেও পরিকল্পনা গ্রহণ করা হলে বড় পরিবর্তন আসতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বাংলাদেশে হেপাটাইটিসের চিকিৎসায় যতটুকু গুরুত্ব দেওয়া উচিৎ সে পরিমাণ গুরুত্ব এখনো দেওয়া হচ্ছে না বলে মন্তব্য করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান।

এই চিকিৎসায় নানা সমস্যা তুলে ধরে তিনি বলেন, হেপাটাইটিস চিকিৎসা মানুষের হাতের নাগালে নিয়ে আসতে হবে। বাংলাদেশে ১০৮ জন হেপাটোলজিস্ট রয়েছেন। তবুও আমরা ভালো মানের চিকিৎসা দিতে পারছি না। এখনো আমরা এই রোগ থেকে পরিত্রাণের জন্য একটি সঠিক প্ল্যানও করতে পারিনি। বিশ্বের প্রায় ৩৫ কোটি মানুষ কোনো না কোনো হেপোটাইটিসে আক্রান্ত বলেও জানান তিনি।

হেপাটাইটিস থেকে পরিত্রাণ পেতে শিশুদের পাশাপাশি বয়স্কদেরও বিনামূল্যে টিকা দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। তিনি বলেন, অনেক রোগীর ক্ষেত্রে সবসময় টিকা কার্যকর নাও হতে পারে। সেজন্য এই টিকা কার্যক্রমকে মনিটরিং করার পরামর্শও দেন তিনি।

ডা. কামরুল হাসান খান আরও বলেন, তিনটি বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে। প্রতিরোধ, রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা। শুধুমাত্র প্রতিরোধের কথা বললে হবে না। অসুস্থ হলে মানুষ যেন এই রোগের চিকিৎসা পেতে পারে সেই ব্যবস্থাও করতে হবে। হেপাটাইটিসের কারণে ক্যানসার হয়ে গেলে তার জন্য প্রয়োজন সার্জারি। সার্জারি করে লিভার ট্রান্সপ্লান্টের ব্যবস্থাও দেশে করতে হবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) হেপাটোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. নুর আলম (ডিউ) বলেন, হেপাটাইটিস নির্মূলে তৃণমূল পর্যায়ে ইউনিয়ন ভিত্তিক কাজ করা প্রয়োজন। আমাদের তৃণমূল পর্যায়ে এই ভাইরাস সম্পর্কে প্রচারণা চালাতে হবে। মানুষ যাতে এ বিষয়ে জানতে পারে। শনাক্তকরণ ব্যবস্থায় জোর দিতে হবে। এছাড়াও এই রোগ নির্মূলে প্রয়োজনে একটি করে ইউনিয়নে শতভাগ টিকা প্রদান করার চেষ্টা করতে হবে। এর মাধ্যমে পুরো দেশে টিকা কার্যক্রম পরিচালনা করা যায়।