মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে নির্মাণাধীন ১২ লাখ টাকা ব্যয়ে বাঁধ মেরামত কাজ শেষ হওয়ার আগেই ধলাই নদীর তীর রক্ষা বাঁধে ধস দেখা দিয়েছে। নদীর পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কমলগঞ্জের বাদে করিমপুর এলাকায় বাঁধের প্রায় ১০০ ফুট এলাকা ধসে গেছে। ঝুঁকির মুখে রয়েছে এলাকার স্থানীয়রা। স্থানীয়দের অভিযোগ, কাজের মনিটরিং ব্যবস্থা দুর্বল থাকায় এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে তীর রক্ষা বাঁধ মেরামত (নির্মাণ) করায় কাজে কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা করেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। বাঁধ নির্মাণ করতে ৩ ধরনের মাটির পরিবর্তে শুধু বালুমাটি ব্যবহার করা হয়েছে। এর ফলে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার আগেই বাঁধটি ধসে পড়েছে এমন দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে প্রকল্পের কাজ চলমান থাকায় কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে তারা এখনো কাজ বুঝে পাননি। কাজে অনিয়ম হলে তার দায়ভার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) মৌলভীবাজার সূত্রে জানা যায়, ধলাই নদীর তীর রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাস্তবায়নে ১২ লাখ টাকা ব্যয়ের একটি প্যাকেজের আওতায় কমলগঞ্জের মুন্সীবাজার ইউনিয়নের ৩টি স্থানে সাড়ে ৩৫০ মিটার বাঁধ নির্মাণের জন্য চলতি বছরের এপ্রিলে জেলা সদরের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রহমান এন্টারপ্রাইজ কাজ পায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এই ৩টি স্থানের মধ্যে একটি হলো বাদে করিমপুর। কাজের সিডিউল অনুযায়ী এই বাঁধ মেরামতে (নির্মাণে) কাদামাটি, পলি ও বালিমাটি ব্যবহার করার কথা রয়েছে। কিন্তু স্থানীয়রা বলেন, নদী থেকে বালিমাটি উত্তোলন করে বাঁধ মেরামত (নির্মাণ) করেন কাজের ঠিকাদার। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার স্থানীয়দের থেকে জানা যায়, নদীর বাঁধ ধসের কারণে ১৪ ফুট পরিমাণে প্রসস্থতার বাঁধটি এখন প্রায় ৫ ফুটে এসে ঠেকেছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বাঁধটির ৮০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন করে কাজ বন্ধ করে দেয়। ফলে কাজ শেষ হওয়ার আগেই প্রায় ১০০ ফুট পরিমাণ বাঁধ ধসে পড়ে। বাঁধের অবশিষ্ট অংশেও ফাটল দেখা দিয়েছে। বাঁধে ধসের ফলে তীরবর্তী বেশ কয়েকটি বাড়ি ঝুঁকির মুখে রয়েছে। নদী তীরের বাসিন্দা জাকির হোসেন, সায়েম মিয়া, এলাইচ মিয়া ও কাওছার মিয়া বলেন, নদীর পুরোনো বাঁধ কেটে নদীর বালু দিয়েই বাঁধ নির্মাণ করায় কাজ শেষ হওয়ার আগেই বাঁধ ধসে পড়লো। মাটি দিয়ে আরও শক্ত করে বাঁধ নির্মাণ করলে এভাবে ধস দেখা দিতো না। অপর নদী তীরের বাসিন্দার রোকেয়া বেগম নামের অভিযোগ, নদী থেকে বালু তুলে বড় বাঁধ নির্মাণ করা হলেও নদীর পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই বাঁধে ধস দেখা দিয়েছে। নদী ভাঙনের হাত থেকে বাঁচতে বাঁধ নির্মাণে নিজের জমিও দিয়েছি। কিন্তু দুর্বল কাজের কারণে আজ আমরা বড় বিপদে আছি।
বাঁধের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রহমান এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আব্দুর রহমান বলেন, সিডিউল মোতাবেক কাজ করেছি। বাহির থেকে মাটি এনে ভরাট করার কোনো সুযোগ না থাকায় নদীর আশপাশ থেকেই মাটি দিয়ে বাঁধের কাজ করা হয়েছে।
মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জাবেদ ইকবাল বলেন, ধলাই নদীর বাঁধ নির্মাণের কাজটি ঠিকাদারের কাছ থেকে আমরা এখনো বুঝে পাইনি। আমরা কাজটি বুঝে না নেয়া পর্যন্ত এটি ঠিকাদারের দায়িত্বে থাকবে। কাজটি চলমান রয়েছে।