ঢাকা, রবিবার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ৩রা অগ্রহায়ণ ১৪৩১

ধানমন্ডিতে প্রবাসী ডাক্তারকে কিলিং মিশনে ৪ জনে সময় নেয় ৪ মিনিট

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক | প্রকাশের সময় : রবিবার ১৭ নভেম্বর ২০২৪ ০৩:২৩:০০ অপরাহ্ন | দেশের খবর

১৪ নভেম্বর গভীর রাতে ধানমন্ডি-১৫ নম্বরে ২৯৪/১ নম্বর নিজ বাড়িতে প্রবাসী চিকিৎসক ডা. একেএম আব্দুর রশিদ (৮৫) হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয় চার জন। আর ৪ মিনিটেই কিলিং মিশনটি শেষ করে হত্যাকারীরা। এরমধ্যে তিন জন বাড়ির বারান্দা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে তাকে হত্যা করে। আরেকজন বাইরে রিকশা নিয়ে পাহারা দেয়। তবে, হত্যাকরীরা বাড়ী থেকে টাকা-পয়সা বা মালামাল নিয়ে যায় নি। 

শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) এই হত্যাকান্ডে নিহতের চাচাতো ভাই রেজাউল করিম বাদী হয়ে হাজারীবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটি থানা পুলিশের পাশাপাশি র্যাব, গোয়েন্দা তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ছায়া তদন্ত করছে।

প্রবাসী ডাক্তার আব্দুর রশিদ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আশপাশের একাধিক সিসিটিভির ফুটেজে দেখা যায়, ঐ দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে ধানমন্ডির-১৫ নম্বরে প্রধান সড়ক (সাত মসজিদ রোড) থেকে চার ব্যক্তি ডায়মন্ড হোটেলের গলি দিয়ে প্রবেশ করে। এরমধ্যে একজন লুঙ্গি ও কালো শার্ট পরা ছিলেন রিকশা চালক। অন্য তিন জন বিল্ডিংয়ের দিকে হেটে যাওয়াদের মধ্যে একজন কালো  শার্ট, আরেকজনের নীল রংয়ের জার্সি ও অন্যজনের ছাই রংয়ের শার্ট ও চাদর গায়ে দিয়েছিল। তাদের তিন জনের বয়সই ২০ থেকে ২৮ বছর বলে ধারণা করা হচ্ছে। রাত ২টা ৩২ মিনিটে ২৯৪/১ নম্বর বাড়ির বারান্দা দিয়ে আব্দুর রশিদের ঘরে প্রবেশ করে তিন জন। মাত্র চার মিনিটে ছুরি আব্দুর রশিদকে হত্যা করে ২টা ৩৬ মিনিতে বেরিয়ে যায় তারা। পরে স্টাফ কোয়ার্টার দিয়ে বের হয়ে চলে যায়।

নিজ বাড়িতে প্রবাসী চিকিৎসক আব্দুর রশিদ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা প্রসঙ্গে হাজারীবাগ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাইফুল ইসলাম বলেন, হত্যাকারীদের গ্রেফতারে আমাদের একাধিক টিম কাজ করছে। আশা করি দ্রুত ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটন করা যাবে।

গত বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) দিনগত রাত আড়াইটার দিকে ধানমন্ডি-১৫ নম্বরে ২৯৪/১ নম্বর নিজ বাড়িতে স্ত্রীর সামনে হত্যা করা হয় চিকিৎসক আব্দুর রশিদকে। পাঁচতলা ভবনের দ্বিতীয় তলায় স্বামী-স্ত্রী থাকতেন। তাদের দুই ছেলে-মেয়ে থাকেন লন্ডনে। তারাও লন্ডন প্রবাসী। মূলত শীতের সময়টায় তারা দেশে থাকতেন আর বাকি সময় ছেলে-মেয়ের সঙ্গে থাকতেন লন্ডনে। গত সেপ্টেম্বর মাসে তারা ঢাকায় আসেন। আগামী বছরের জানুয়ারিতে আবার লন্ডন চলে যাওয়া কথা ছিল।

জানা যায়, তিন ব্যক্তি বারান্দা দিয়ে আব্দুর রশিদের ঘরে প্রবেশ করে। এরমধ্যে একজন তার স্ত্রী সুফিয়া রশিদের মুখ চেপে ধরে রাখে। আর দুই জন আব্দুর রশিদকে ধরে নিচে শুইয়ে বুকে ও গলায় ছুরি চালিয়ে তাকে হত্যা করে। হামলাকারীদের বয়স ২২ থেকে ২৮ বছর বলে ধারনা করা হচ্ছে। হত্যা করার সময় ভুক্তভোগীর বাড়ি থেকে কোনও কিছু নেয়নি হত্যাকারীরা। তদন্ত সংশ্লিষ্টদের প্রশ্ন তাহলে কেন প্রবাসী চিকিৎসক আব্দুর রশিদকে হত্যা করা হয়েছে, কারা এই হত্যাকারী?

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা কয়েকটি মোটিভ সামনে রেখে ছায়া তদন্ত করছেন। সম্পত্তির লোভ, আত্মীয়-স্বজন ও ব্যক্তিগত আক্রোশের শিকারে হত্যা করা হতে পারে আব্দুর রশিদকে। 

পাশের বাড়ির এক সিকিউরিটি গার্ড জহিরুল বলেন, ওই বাড়ির বাড়িওয়ালা ও বাড়িওয়ালি প্রায় সময় অনেক রাগ দেখাতেন। কিছুদিন আগে আমাদের বাড়ির একটি সিসিটিভি ক্যামেরা ও লাইট ভেঙ্গে ফেলেছেন তারা। কেননা সেটা তাদের বাড়ির একাংশ কাভার করতো। যদি ওই ক্যামেরা থাকতো কারা বাড়িওয়ালাকে হত্যা করেছে, সেটা আরও স্পষ্ট দেখা যেতো।

ডা. আব্দুর রশিদ হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও হাজারীবাগ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সাদ্দাম হোসেন গণমাধ্যম কে বলেন, ধারণা করা হচ্ছে- প্রবাসী চিকিৎসক আব্দুর রশিদকে ছুরি দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকারীদের শনাক্ত করতে আমরা কাজ করছি। আশা করছি খুব দ্রুত তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে সক্ষম হবো। 

জানা যায়, আব্দুর রশিদের গ্রামের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের ঝালকুড়ি পশ্চিমপাড়া গ্রামে। তার বাবা মৃত সামসুদ্দিন মিয়া।

বায়ান্ন/এমএমএল/একে