- টোকেন চাঁদাবাজরা দিচ্ছে অলি গলির রুট পারমিট
- প্রশাসন ও স্থানীয়দের ম্যানেজে দেয় চাঁদা
- সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব
চট্টগ্রাম মহানগরীর অলি গলিতে প্রতিদিনই পাল্লা দিয়ে দাপিয়ে চলছে প্রায় ১০হাজারের বেশী ব্যাটারি চালিত রিকশা। সেই সাথে বাড়ছে ব্যাটারী চালিত রিকসার ব্যাটারী চার্জ দেওয়ার অবৈধ গ্যারেজ। এসব গাড়ি চালায় অসহায় নিরীহ মানুষেরা। তাদের চালানোকে পূজী করে গড়ে উঠছে নগরে ভয়ংকর চাঁদাবাজী গ্রুপ। যারা গ্যারেজের মাধ্যমে বৈধর পাশাপাশি অবৈধ বিদ্যুত গিলে চাঁদা নেন, আবার একটি চাঁদাবাজী চক্র টোকেনের মাধ্যমে রুট পারমিট দিয়ে প্রতিদিন, সপ্তাহে ও মাসে মাসে আয় করছে কোটি কোটি টাকা। জানা যায়, নগরীর বায়েজিদ, বাংলাবাজার, চন্দ্রনগর, ডেবারপাড়, টেক্সটাইল রুবি গেইট, টেকনিক্যাল সহ এসব এলাকায় ব্যাটারীচালিত রিকসার চালকদের টোকেনে চাঁদা নেয়ার মহান নেতা সামশু। তিনি আগে নিজে রুট পারমিটের টোকেনের টাকা তুললেও এখন আর নিজে টাকা তোলেন না ইকবাল, রিফাতকে দিয়ে টেকনিক্যালমোড়, সাউদার্ন মেডিকেলরোডে জামাই খোরশেদ ও বাবুল সাবের মাঠের পাশের ব্্রীজের গোড়ার স্থান থেকে হেলালকে দিয়ে, রুপাবাদ-মোহাম্মদনগর কুঞ্জছায়া এলাকায় তার শালা আহাদ, চন্দ্রনগরের জাবেদ, বাংলাবাজার কালাম ও কাজলকে দিয়ে প্রতিদিন টোকেনের টাকা তোলেন। আগে প্রতিদিন হিসাবে টাকা তুললেও এখন পত্রিকায় নিউজ হওয়ার পর সেটা মাসিক ২হাজার পাঁচশ টাকা করে এককালীন টাকা নিচ্ছেন।
জানা যায়, গ্যারেজ থেকে বের হওয়া প্রতিটি গাড়ি চালানোর জন্য চালকদের থেকে ১৫০ টাকা নেন গ্যারেজ মালিক। রুপাবাদ ৮নং রোডের মাথা টোকেন সম্রাট সামশুর গ্যারেজ, যার গ্যারেজে রয়েছে সর্বোচ্ছ ৮০ টা ব্যাটারী চালিত রিকসা। শুধু এই গ্যারেজের বিদ্যুতের চার্জ বাবদ প্রতিটা গাড়ি থেকে তুলে নেন ১৫০ টাকা। এতে দৈনিক আসে ১২হাজার টাকা, মাসে উত্তোলিত হয় ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা এই হিসাবে বছরে উত্তোলিত হয় ৪কোটি ৩লাখ ২০ হাজার। এক লাইনম্যান সুত্রে জানা যায়, এসব এলাকায় সামসুর দেয়া টোকেনে চলে ১২শ গাড়ি, প্রতিটি গাড়ি থেকে রুট পারমিট টোকেন বাবদ ১২০ টাকা করে নেয়। যার শুধু টোকেন বাবদ প্রতিদিন পান ১লাখ ৪৪হাজার টাকা, মাসে ৪ কোটি ৪লাখ ৬৪ হাজার, বছরে ৫৩ কোটি ৫ লাখ ৬৮ হাজার টাকা উত্তোলিত হয়। এমন এক মহা ব্যবসার আনজাম দেন এই সামশু। এই অর্থ সে একা খায়না। গ্রাম্য ভাষায় বলে দিয়ে থুয়ে খায়। যাদের টোকেনের টাকা ভাগ দেন এমন পরিবারের সদস্য সাংবাদিক পরিচয়ধারী, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মি, সংশ্লিষ্ট প্রশাসন।
একটি গ্যারেজ থেকেই যদি কর্মহীন মানুষ টোকেনবাজী বা চাদাবাজী করে এতো টাকা চাদা উত্তোলিত করেন, তবে নগরীর প্রায় ৫০০ গ্যারেজ থেকে কত টাকা চাঁদাবাজী হয়।
জানা যায়, এলাকার অনাবাদি খালি জায়গা বা অব্যবহৃত খালি জায়গা ভাড়া নিয়ে টিনের ঘেরাও বা বাশের বেড়ার ঘেরাও দিয়ে যত্রতত্র গড়ে উঠছে এসব গ্যারেজ। এসব গ্যারেজে প্রকাশ্যে মিটার থাকলেও প্রতিনিয়ত চুরি হয় বিদ্যুত। অভিযোগ রয়েছে, তারা বিভিন্ন উপায়ে বিদ্যুত অফিস থেকে মিটার সংগ্রহ করলেও রাতে বা সুযোগে মুল মিটার থেকে বিদ্যুত ব্যবহার না করে চোরাই পন্থায় বিদ্যুত ব্যবহার করে। এসব গ্যারেজের নাই ট্রেড লাইসেন্স।
কয়েকজন চালক ও গ্যারেজ মালিক বলেন, অক্সিজেন, আতুরার ডিপো, হাজিপাড়ার চালকদের সুত্রে পাওয়া যায় এনামের নাম। তারা বলেন, এনামসাব এখন নিজে টাকা তোলেন না, কয়েকজন লোক দিয়ে এইসব এলাকার টোকেনের টাকা তুলেন। যার অধিনে রয়েছে প্রায় ২শ‘র মতো ব্যাটারী চালিত রিকসা। তিনিই আমাদের বাইরের চাপগুলো সমাধান করেন। টাইগারপাশ, আমবাগান, পাহাড়তলী সরাইপাড়া এলাকায় গেলে কয়েকজন ব্যাটারী রিকসা চালক সুত্রে জানা যায়, এসব এলাকার টাকা তোলেন মোহাম্মদ সুমন নামের একজন। তার অধীনে রয়েছে প্রায় ৫শ‘র মতো রিকসা। তিনি এসব ব্যাটারী গাড়ির টোকেনের টাকা তোলেন। টেকনিক্যাল, মোজাফ্ফর নগর, সাউদার্ন মেডিকেল এলাকার কয়েকজন ব্যাটারি চালক সুত্রে জানা যায়, এসব এলাকায় টাকা তোলেন সামশুর অনুগত জসিম ও নাছির। টাকা না দিলে অনেক সময় ড্রাইভারদের সাথে দুব্যবহারসহ গাড়ি বন্ধ করে দেন। একজন ব্যাটারী রিক্সা চালক বলেন, এসব ব্যাটারি চালিত রিক্সা চলাচলকে কেন্দ্র করে প্রতিটি এলাকায় গড়ে উঠেছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট। জানা যায়, কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরাও এই সিন্ডিকেটগুলো থেকে সুবিধা নিচ্ছে। টোকেনের টাকা না দিলে তাদেরকে লেলিয়ে দেয় তারা, যার ফলে গাড়ি বন্ধসহ অত্যাচারের শিকার হতে হয়। আরেক চালকসুত্রে জানা যায়, মুল সড়কে আসলে পুলিশ গাড়ি টু করলে ট্রাফিকদেরও নিয়ন্ত্রন করতে হয়।
অন্যদিকে কোন আইনের তোয়াক্কা করছেনা ব্যাটারী চালিত রিকসার গ্যারেজ মালিকরা। এসব ব্যাটারী চালিত রিক্সার গ্যারেজে অবৈধ বিদ্যুৎ ব্যবহার করার অভিযোগ থাকলেও কোন ভুমিকা নিচ্ছেনা বিদ্যুত অফিস। তাদের কাছে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে, তারা বলে আমরা বিষয়টি দেখছি। আপনাদের কাছে কোন তথ্য থাকলে আমাদের দিয়েন।
টোকেনের বিষয় জানতে এনুামল হককে মুঠোফোনে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমি এখন টোকেনের টাকা নেইনা। তবে আমার গ্যারেজ আছে, প্রায় ২৯টি ব্যাটারী রিক্সা আছে।
এই বিষয়ে রুট পারমিট দেয়ার টোকেন সম্রাট সামশুকে মুঠোফোনে কয়েকবার ফোন দিলেও রিসিভ করেননি তিনি।
ব্যাটারী রিকসা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সানাউল্লাহ বলেন, এসব ্েটাকেন চাঁদাবাজদের উপর সমিতির কোন নিয়ন্ত্রন আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সে ক্ষেত্রে আমাদের কোন নিয়ন্ত্রন নাই। এসব দেখবেন প্রশাসন। এর বেশী কিছু বলতে পারবোনা।