দিনাজপুরের নবাবগঞ্জে দখল হয়ে যাওয়া বনভূমিতে বনায়ন করতে গিয়ে গ্রামবাসীর সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা করেছে বন বিভাগ। গত বুধবার (৩ আগস্ট) বিকালে বন বিভাগের নবাবগঞ্জ উপজেলার কুশদহ বিটের কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলাটি করেন। মামলায় ৩৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও দেড়শ’ জনকে আসামি করা হয়েছে।
এর আগে মঙ্গলবার (২ আগস্ট) দুপুরে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে বন বিভাগের ৯ কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং তিন গ্রামবাসী আহত হন। এর মধ্যে রয়েছেন বন বিভাগের মধ্যপাড়া রেঞ্জ কর্মকর্তা আব্দুল হাই, কুশদহ বিট কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম এবং বন বিভাগের গাড়িচালক রেজাউল ইসলাম।
নবাবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফেরদৌস ওয়াহিদ বলেন, ‘বিষয়টি তদন্ত করে ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বশিরুল আল মামুন বলেন, ‘সংঘর্ষে বন বিভাগের ৯ কর্মকর্তা-কর্মচারী আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় ৩৫ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত ১৫০ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে।’
কুশদহ বিটের কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের বিটের আওতায় ৬০০ একর বনভূমি রয়েছে। যার মধ্যে প্রায় ৫০০ একর বনভূমি অবৈধ দখলদারদের দখলে। এসব বনভূমি উদ্ধার করে বনায়ন কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে।গত মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে মধ্যপাড়া রেঞ্জের আওতাধীন নবাবগঞ্জ উপজেলার কুশদহ বন বিটের দারিকামারি এলাকায় চারা রোপণ করতে যান কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তখন চারা রোপণে বাধা দেয় স্থানীয় কয়েকজন। একপর্যায়ে বন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর হামলা চালায় গ্রামবাসী। পরে সংঘর্ষ লেগে গেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ। সংঘর্ষের ঘটনায় বনায়ন কর্মসূচি বাতিল হয়ে যায়। হামলাকারীরা বন বিভাগের ২৫ হাজার গাছের চারা বিনষ্ট করেছে।’
মধ্যপাড়া রেঞ্জ কর্মকর্তা আব্দুল হাই বলেন, ‘চলতি মৌসুমে চার দিনে এক লাখ গাছের চারা লাগানোর লক্ষ্য নিয়ে মঙ্গলবার দুপুরে চারটি পিকআপভ্যানে ২৫ হাজার আকাশমণি গাছের চারা দারিকামারি বন ভূমিতে নিয়ে যাওয়া হয়। বন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারী, বনরক্ষী, নবাবগঞ্জ থানা ও আফতাবগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ির চার কর্মকর্তাসহ ১৪ পুলিশ সদস্যের সহযোগিতায় দুই শতাধিক শ্রমিক বনায়নের কাজ শুরু করেন। খবর পেয়ে হাদিসপাড়া, কুষ্টিয়াপাড়া, মনসুরপাড়া, এরফানপাড়া, বটতলা ও লালঘাটপাড়ার কুশদহ বন বিটের বনভূমি দখলকারী পরিবারের দুই শতাধিক নারী-পুরুষ লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা চালায়। তারা রোপণকৃত চারা তুলে ফেলে। সেইসঙ্গে ২৫ হাজার চারা বিনষ্ট করে।’
গ্রামবাসীর অভিযোগ, তাদের আমন ধানের চারা নষ্ট করে গাছের চারা রোপণ করেছিলেন বন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বাধা দিতে গেলে সংঘর্ষ বেধে যায়। এতে তিন গ্রামবাসী আহত হন।
কুশদহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ারুল আজিম আনু বলেন, ‘বনায়ন কর্মসূচি চলাকালে বন কর্মকর্তাদের সঙ্গে গ্রামবাসীর সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় লোকজন ও বন বিভাগ থেকে আমাকে বিষয়টি জানিয়েছিল। আমি গ্রামবাসীকে শান্ত থাকতে বলেছি।’
গাছের চারা রোপণের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত নবাবগঞ্জ উপজেলার আফতাবগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘বন বিভাগের গাছের চারা রোপণের সময় গ্রামবাসী বাধা দেওয়ায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ।’