ঢাকা, বুধবার ৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০শে অগ্রহায়ণ ১৪৩১
বিশৃঙ্খলায় বন্ধ ছিল একঘন্টা, মানা হয়নি স্বাস্থ্য বিধি

নরসিংদীতে গাদাগাদীতে শিক্ষার্থীদের টিকাদান

নরসিংদী প্রতিনিধি : | প্রকাশের সময় : রবিবার ৯ জানুয়ারী ২০২২ ০৯:০৯:০০ অপরাহ্ন | স্বাস্থ্য

নরসিংদীর রায়পুরায় সুষ্ঠ ব্যবস্থাপনা না থাকায় দিনব্যাপী দূর্ভোগের শিকার হয়েছেন করোনার টিকা নিতে আসা বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। উপজেলায় একটি মাত্র কেন্দ্রে শিক্ষার্থীদের টিকা প্রদানের ব্যবস্থা করায় এ সমস্যা দেখা দিয়েছে।

আজ রবিবার প্রথম দিনে শিক্ষার্থীদের উপচে পড়া ভিড় সামলাতে চরম হিমশিম খেতে হয়েছে কর্তৃপক্ষকে। সকাল ১০টায় উপজেলা বিয়াম ল্যাবরেটরী স্কুল কেন্দ্রে টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়। এর ঘন্টাখানেকের মধ্যেই ভ্যাকসিন নিতে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীরা প্রচন্ড ভিড় জমে। বিশৃঙ্খল অবস্থায় বুথে একসাথে অনেকে প্রবেশের সময় লাইনে দাঁড়ানো নিয়ে দুটি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কিসহ হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এতে ঐ সময় টিকাদান কার্যক্রম এক ঘণ্টারও বেশি সময় হয়ে যায়।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, উপজেলার মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের ফাইজারের টিকা দেওয়া শুরু হয়। মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া হয়। প্রায় ২৪ হাজার শিক্ষার্থীকে টিকার আওতায় আনার লক্ষ্য রয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের।

সরেজমিন দুপুরে টিকাদান কেন্দ্রে গিয়ে জানা যায়, রোববার সকাল থেকে উপজেলার মাহমুদাবাদ রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু উচ্চ বিদ্যালয়, রামনগর উচ্চ বিদ্যালয়, পিরিজকান্দি উচ্চ বিদ্যালয় ও দৌলতকান্দি মহিউদ্দিন ভূইয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা টিকা নেওয়ার জন্য কেন্দ্রে আসে। সেখানে গাদাগাদি করে শিক্ষার্থীরা দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকে। কক্ষ ছোট হওয়ায় বাহিরে প্রচন্ড ধাক্কাধাক্কি শুরু হলে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় আনুমানিক ১১ টার দিকে সেবাদানকারি ও শিক্ষকরা কক্ষে অনেকটা অবরুদ্ধ হয়ে পরে। ফলে ঐ সময় টিকাদান কার্যক্রম প্রায় এক ঘণ্টার মতো বন্ধ হয়ে যায়। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ এনে পূণরায় কার্যক্রম শুরু হয়। এ সময় মাহমুদাবাদ রাজিউদ্দিন আহামেদ রাজু উচ্চ বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী অজ্ঞান হয়ে পড়ে। পরে তাকে নিকটস্থ্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে টিকা না দিয়েই বাড়ি ফিরে যায়।

এ সময় লাইনে দাঁড়ানো ও টিকা দিতে না পেরে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর মধ্যে হট্রগোল শুরু হয়। এসময় বহিরাগত ও স্কুলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে কয়েক দফায় হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আজগর হোসেন ও মাধ্যমিক কর্মকর্তা মো. সামালমগীর আলম উপস্থিত হয় এবং পুলিশ পরিস্থিত নিয়ন্ত্রণে আনেন।

টিকা নিতে আসা শিক্ষার্থী তাসফিয়া তারান্নুুম বলে, 'সকাল থেকে অনেকক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে টিকা নিয়েছি।  

কৌহিনুর বেগম নামে একজন অভিভাবক বলেন, বুথ ও স্বাস্থ্যকর্মীর সংখ্যা বাড়ালে এত ভিড় হতো না। আজকের এই ভোগান্তি ও হট্রগোলের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষে দায়িত্ব অবহেলাকে দায়ী করেন তিনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক টিকাদান কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের গাদাগাদী ও হট্রগোল দেখে তিনি বিস্মিত হন এবং ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন স্বাস্থ্য সুরক্ষার টিকা নিতে এসে শিক্ষার্থীরা নতুন করে স্বাস্থ্য ঝুকিতে পড়ছেন না তো?

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স মেডিকেল টেকনোলজিস্ট মোছা শেলী আক্তার বলেন, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের টিকার জন্য সিভিল সার্জন অফিস থেকে প্রায় ২ হাজার ৪শ ডোজের চাহিদা পাওয়া গেছে। আজ প্রথম দিনে তিনটি বুথে ২ হাজার ৩শ ৮জনকে দেয়া হয়েছে। ১২ দিনের মধ্যে শেষ করার কথা থাকলেও জনবল সংকটের কারনে সময় কিছুটা বেশি লাগতে পারে। 

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সামালমগীর আলম বলেন, 'এ রকম পরিস্থিতি যেন আর না হয়, সেজন্য বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের সতর্ক করে দিয়েছি এবং শিক্ষার্থীরা যাতে শৃঙ্খলা বজায় রাখে, সেজন্য নিজ নিজ বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নজর রাখতে বলেছি।'

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আজগর হোসেন বলেন, সোমবার থেকে রায়পুরা সরকারি কলেজে দুইটি বুথের মাধ্যমে টিকা প্রদান করা হবে। পাশাপাশি বিশৃঙ্খলা রোধে নিরাপত্তার ব্যবস্থা জোড়দার করা হবে।