পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির ২৪ বছর পূর্তি দিবস পালিত হচ্ছে, দীর্ঘদিন এ অঞ্চলে চলমান রক্তপাত নিরসনে ১৯৯৭ সালের এই দিনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে স্বাক্ষরিত হয় ঐতিহাসিক পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে।
তারই ধারাবাহিকতায় রাঙ্গামাটি জেলায় বৃহস্পতিবার সকালে রাঙ্গামাটি জেলায় ঐতিহাসিক পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির ২৪ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে জেলার ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনিস্টিউট মিলনায়তনে একটি আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবং রাঙ্গামাটি জেলার ২৯৯ নং আসনের মাননীয় এমপি জনাব দীপংকর তালুকদার। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ ইফতেকুর রহমান, পিএসসি, রিজিয়ন কমান্ডার, কর্নেল সলমন ইবনে এ রউফ, পিএসসি, শাখা অধিনায়ক, ডিজিএফআই, রাঙ্গামাটি,মোঃ মিজানুর রহমান, জেলা প্রশাসক, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা,মীর মোদ্দাছের হোসেন, পুলিশ সুপার মহোদয়, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা।
রাঙ্গামাটি জেলা সদরে ঐতিহাসিক এই পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির ২৪ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা সভার সভাপতিত্ব করছেন রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদে চেয়ারম্যান জনাব অংসুইপ্রু চৌধুরী,বিশিষ্ট ব্যাক্তিবর্গ হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য বৃন্দ, রাঙ্গামাটি উপজেলা পরিষদ সদরের প্যানেল মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান,জনাব নাসরিন আক্তার সহ রাঙ্গামাটি জেলার বিভিন্ন দলীয় নেতা কর্মীগণ উপস্থিত ছিলেন।পাশাপাশি দিবসটিকে ঘিরে জেলা ও উপজেলায় নানা ধরনের আয়োজন করা হয়েছে, নৌকা বাইস,নৃত্য অনুষ্ঠান প্রভৃতি ।
অন্যদিকে যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটিকে নানিয়ারচর উপজেলায় জোনের উপ-অধিনায়ক মেজর মোঃ জাওয়াদ বিন ফারুক নেতৃত্বে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শিউলি রহমান তিন্নী সহ, উপজেলা চেয়ারম্যান প্রগতি চাকমা, ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ নুর জামাল হাওলাদার, সেনা অফিসার ক্যাপ্টেন মোঃ রাজিন আকন ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মোঃ আব্দুল ওহাব হাওলাদার প্রমূখ দিবসটিকে র্যালী,শীতার্থদের মাঝে কম্বল বিতরণ ও চিকিৎসা সেবা প্রদান করেছেন।
এদিকে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানাগেছে চুক্তি স্বাক্ষরের দুই যুগ পরেও চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে রয়েছে হতাশা আর ক্ষোভ বিরাজমান । চুক্তির পর পাহাড়ে উন্নয়নের ধারা বয়ে গেলেও কাঙ্খিত শান্তি ফিরেনি। হানাহানি আর রক্তক্ষয়ী সংঘাতে এখনো অশান্ত পার্বত্য অঞ্চলের আঞ্চলিক দলগুলোর মধ্যে।
স্বাধীনতার পরবর্তী দেশের এক দশমাংশ পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রায় দুই দশকের সংঘাত বন্ধে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর সরকার আর পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। কিন্তু এটি শান্তি চুক্তি নামেই বেশি পরিচিত। তৎকালীন সরকারের পক্ষে জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ ও উপজাতীয়দের পক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় ওরফে সন্তু লারমা এ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। লক্ষ্য ছিলো পাহাড়ে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করা। এরপর কেটে যায় ২ যুগ। চুক্তির পর উন্নয়ন তরান্বিত হলেও পাহাড়ে কাঙ্খিত শান্তি আসেনি। এখনো পাহাড়জুড়ে চলছে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার, খুন, সংঘাত। পাহাড়িদের মধ্যে চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে রয়েছে নানা অভিযোগ।
এদিকে, পার্বত্য চুক্তিতে পাহাড়ে বসবাসরত সব সম্প্রদায়ের স্বার্থ সংরক্ষণ হয়নি অভিযোগ স্থানীদের। তাই চুক্তির কতিপয় ধারা সংশোধনের দাবিও উঠেছে । এ প্রসঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের সভাপতি কাজী মুজিবুর রহমান বলেন, পার্বত্য চুক্তি হয়েছিল মূলত বিরাজমান পরিস্থিতি স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে। দীর্ঘদিন পর এসে আমরা দেখতে পাচ্ছি, শান্তি প্রতিষ্ঠার জায়গায় অশান্তি বেশি সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি বলেন, চুক্তি করাকালীন সব সম্প্রদায়ের স্বার্থ রক্ষার যে বিষয়টি ছিল সেটি এখানে উঠে আসেনি। আমাদের দাবি হচ্ছে ধারাগুলো পরিবর্তন করতে হবে। ধারাগুলোকে পরিবর্তন করে পুনরায় ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হয়, বৈষম্য দূর হয় এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় থাকে সেই ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
সরকার বলছে চুক্তির ৭২টি ধারার মধ্যে অধিকাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে। বাকি ধারাগুলোর বাস্তবায়ন চলমান রয়েছে,এবং অচিরেই হয়ে যাবে।
খাদ্য মন্ত্রণালয় সর্ম্পকিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি ও রাঙামাটি আসনের সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার বলেন, ২৪ বছরে চুক্তির সম্পূর্ণ বাস্তবায়িত হয়েছে এটা যেমন সত্য নয়, তেমনি চুক্তির কোনো কিছুই বাস্তবায়িত হয়নি এটাও ঠিক নয়। পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির প্রয়োজন আছে। এই অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে কিনা এটা নিয়ে ভাববার সুযোগ আছে।