দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে প্রভাবশালী পশ্চিমা কয়েকটি দেশ অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। তারা মনে করছে, নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ হয়নি।
কিন্তু তারপরও তারা সরকারের পাশে থাকার ইঙ্গিত দিয়েছে। বলেছে, তারা বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের পাশেই থাকবে।
বিএনপিসহ কয়েকটি বিরোধী দল গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ নেয়নি। ফলে এ নির্বাচনকে পশ্চিমারা কীভাবে দেখে, তা নিয়ে অনেকের মধ্যেই কৌতূহল ছিল। নির্বাচন পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় কয়েকটি দেশ অসন্তোষ প্রকাশ করে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘নির্বাচন অবাধ বা সুষ্ঠু ছিল না এবং আমরা দুঃখিত যে সব দল এতে অংশ নেয়নি। ’
যুক্তরাজ্যের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘মানবাধিকার, আইনের শাসনের প্রতি সম্মান ও যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অন্যতম অপরিহার্য উপাদান। নির্বাচনের সময়কালে এই মানদণ্ডগুলো ধারাবাহিকভাবে মেনে চলা হয়নি। ’
কানাডার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘নির্বাচনে গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার মূলনীতিতে ঘাটতি থাকায় কানাডাকে হতাশ করেছে, কেননা এসব মূলনীতির ভিত্তিতে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিল। ’ তাই বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থে গণতন্ত্র, মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা এবং মৌলিক স্বাধীনতার বিকাশে স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানিয়েছে দেশটি।
বাংলাদেশের পাশে থাকার ইঙ্গিত
নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করার পর যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন অসন্তোষ প্রকাশ করলেও এখন দেশগুলো বলছে তারা আগামী দিনে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করে যাবে। নির্বাচনী প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, ‘আগামী দিনগুলোয় একটি উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিকের জন্য অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিকে এগিয়ে নিতে, বাংলাদেশে মানবাধিকার ও সুশীল সমাজের সমর্থনে, জনগণের সাথে জনগণের এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ককে আরও গভীর করতে বাংলাদেশের সাথে অংশীদারত্বে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
কানাডাও বাংলাদেশের পাশে থাকার ইঙ্গিত দিয়ে বলেছে, বাংলাদেশের জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণে আরও স্থিতিশীল, সমৃদ্ধ এবং গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের স্বার্থে তাদের সমর্থনের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
ব্রিটেন বলেছে, যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশ একটি ঐতিহাসিক ও গভীর বন্ধুত্বের বন্ধনে আবদ্ধ।
নির্বাচনে সব বড় রাজনৈতিক দল অংশ না নেওয়ায় দুঃখ প্রকাশ করা ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলেছে, রাজনৈতিক, মানবাধিকার, বাণিজ্য ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে যেসব বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে দীর্ঘমেয়াদী সম্পর্ক গড়ে উঠেছে তা নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কাজ অব্যাহত রাখা হবে।
বঙ্গভবনে পশ্চিমা কূটনীতিকরা
জাতীয় নির্বাচনের পর গত ১১ জানুয়ারি বঙ্গভবনে প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীদের শপথ অনুষ্ঠানে পশ্চিমা দেশের বেশির ভাগ কূটনীতিক অংশ নেন। বিশেষ করে বঙ্গভবনে শপথ অনুষ্ঠানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের অংশগ্রহণ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শুভেচ্ছা বিনিময় সরকারী মহলে অনেকটাই স্বস্তি এনে দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীকে ৫০ দেশের অভিনন্দন
নির্বাচনে জয়লাভের পর আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছে অর্থশতাধিক দেশ। বিশেষ করে এশিয়ার প্রভাবশালী দেশ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং অভিনন্দন জানিয়েছেন শেখ হাসিনাকে। তারা বাংলাদেশের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন।
ভারত, রাশিয়া, চীন, ভুটান, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা, সৌদি আরব, জাপান, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, আর্জেন্টিনা, ইন্দোনেশিয়া, রিপাবলিক অব কোরিয়া, ব্রুনেই দারুসসালাম, মালয়েশিয়া, মিশর, আলজেরিয়া, কুয়েত, লিবিয়া, ইরান, ইরাক, ওমান, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ফিলিস্তিন প্রভৃতি দেশের রাষ্ট্রদূতরা গণভবনে প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। দেশ-বিদেশ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানানো অব্যাহত রয়েছে।
সার্বিক বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সি ফয়েজ আহমেদ বলেন, নির্বাচন নিয়ে পশ্চিমা কয়েকটি দেশ প্রশ্ন তুললেও তারা বাংলাদেশের সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক জিইয়ে রাখবে। এখানে সবার সঙ্গে তাদের সহযোগিতাও থাকবে। তবে তারা নির্বাচন নিয়ে যে প্রতিক্রিয়া দিয়েছে, সেটা অনেকটা ধরি মাছ, না ছুঁই পানির মতোই। তারা সব দিক বিবেচনা করেই এমন প্রতিক্রিয়া দিয়েছে।