ঢাকা, সোমবার ২৭ জানুয়ারী ২০২৫, ১৩ই মাঘ ১৪৩১

নির্বাচন নিয়ে বির্তক সৃষ্টি ‘পলাতক ফ্যাসিস্টদের অবস্থানকে শক্তিশালী করবে: তারেক রহমান

সালেহ বিপ্লব | প্রকাশের সময় : শনিবার ২৫ জানুয়ারী ২০২৫ ০৮:৫২:০০ অপরাহ্ন | রাজনীতি

নির্বাচন নিয়ে নানা আলোচনার মধ্যে শনিবার বিকালে এক শিক্ষক সমাবেশে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এই কথা বলেন।

 

তারেক রহমান বলেন, ‘‘ আগেও আমি বলেছি, আজো আমি আপনাদের সামনে আবারো তুলে ধরতে চাই, বলছি, নির্বাচনই হচ্ছে জনগনের রাজনৈতিক ক্ষমতায় নিশ্চিত করার অন্যতম প্রধান কার্য্করী হাতিয়ার।নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে বির্তক সৃষ্টি করার অর্থ নিজেদের অজান্তে পরাজিত পলাতক ফ্যাসিস্টদের অবস্থানকে শক্তিশালী করা।”

বিএনপির মিডিয়া সেল আরো জানায়, গত বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে বলেন, অন্তবর্তীকালীন সরকার নিরপেক্ষ না থাকলে নির্বাচনের সময়ে একটা নিরপেক্ষ সরকারের প্রয়োজন হবে। এরকম বক্তব্যের পাল্টায় সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, মির্জা ফখরুলের ‘নিরপেক্ষ’ সরকারের দাবি আরেকটা ‘এক এগারো সরকার গঠনের ইঙ্গিত’ বহন করে। রাজনৈতিক অঙ্গনে এ নিয়ে নানা আলোচনার মধ্যে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব তারেক রহমানের কাছ থেকে এরকম বক্তব্য আসলো।

 

দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘ সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের প্রতি বরাবরের মতোই আমার আহ্বান থাকবে, আপনাদের কোনো কার্য্ক্রম নিয়ে কেউ যাতে বিভ্রান্তি ছাড়ানো কিংবা বির্তক সৃষ্টি হওয়ার লিপ্ত হওয়ার সুযোগ না পায় সে বিষয়ে অবশ্যই আপনাদেরকে সজাগ থাকতে হবে।”

‘‘ জনগনই বিএনপির সকল রাজনৈতিক ক্ষমতা উৎস্য। জনগন সঙ্গে থাকলে কোনো ষড়যন্ত্রই আমাদেরকে পরাজিত করতে পারবে না ইনশাল্লাহ।”

তিনি বলেন, ‘‘ আমি শিক্ষক-বুদ্ধিজীবী-সাংবাদিকসহ সকল শ্রেনী পেশার মানুষের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলতে চাই, পূঁথিগত বিধির ওপরে গণতন্ত্রের বিকাশ নির্ভর করে না। গণতন্ত্র বিকশিত এবং শক্তিশালী হয় প্রতিদিনের কার্য্ক্রম, আচরণে এবং চর্চায়। আমাদের মধ্যে অবশ্যই ভিন্নমত ভিন্ন পথ থাকবে এটাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য্। তবে আমাদের উদ্দেশ্য এক এবং অভিন্ন… আমাদের সবার উদ্দেশ্য একটি উদার, গণতান্ত্রিক, বৈষম্যহীন, মানবিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা।” 

‘‘ ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে মাফিয়া প্রধান দেশ ছেড়ে পালানোর পর মাফিয়ামুক্ত বাংলাদেশের সামনে গণতান্ত্রিক বৈষম্যহীন মানবিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার এক অপার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। পলাতক স্বৈরাচার এবং তাদের দোসরদের ষড়যন্ত্র কিংবা বাংলাদেশের পক্ষের গণতান্ত্রিক শক্তির মধ্যে অযাচিত ভুল বুঝাবুঝির কারণে যাতে একটি গণতান্ত্রিক বৈষম্যহীন মানবিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সুযোগ এবং সম্ভাবনা হুমকির সম্মুখিন না হয় এ ব্যাপারে আমাদের সবাই অত্যন্ত সর্তক থাকতে হবে।”

 

‘নির্বাচন ও সংস্কার দুইটাই জরুরী’তারেক রহমান বলেন, ‘‘সংস্কার এবং নির্বাচন বিএনপি দুইটারই পক্ষে…দুইটিই অত্যন্ত জরুরী। সংস্কার নাকি নির্বাচন… কেউ কেউ এমন উদ্দেশ্য প্রণোদিত প্রশ্ন নিয়ে কুট তর্ক করার অপচেষ্টা করেছে। আমরা যদি দেশের বিরাজমান পরিস্থিতি দেখি তাহলে কিন্তু সেটি ভিন্ন।”

‘‘দেশের কোটি কোটি পরিবারের কাছে এই মুহুর্তে নির্বাচন এবং সংস্কারের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সংসার পরিচালনা করা। একদিকে দ্রব্যমূল্যের ঊধর্বগতি অপরদিকে জনগনের চাপিয়ে দেয়া ভ্যাটের বোঝা। ফলে দেশের কৃষক, শ্রমিক, দিনমজুর, স্বল্প আয়ের মানুষ এমনকি নিম্ন-মধ্যভিত্ত পরিবারের কাছেও সংসার টেকানোই অনেক ক্ষেত্রে দায় হয়ে পড়েছে। অনেক পরিবারে চলছে নিরব হাহাকার।”

তিনি বলেন, ‘‘ কিভাবে জনগনের নিত্যদিনের দূঃখ-দুদর্শা লাগব করা যায়? কিভাবে বাজার সিন্ডিকেট ভেঙে দ্রব্যমূল্য জনগনের হাতের নাগালে রাখা যায়? কিভাবে জনগনকে ফ্যাসিস্টদের আমলে মিথ্যা মামলা থেকে রেহাই দেয়া যায়? কিভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও সক্রিয় করা সম্ভব, জনগনের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়….অন্তবর্তীকালীন সরকারের সামনে অগ্রাধিকারের তালিকায় এই বিষয়গুলো থাকা অত্যন্ত জরুরী।”

‘‘ জনগন বিশ্বাস করে, অন্তবর্তীকালীন সরকারের মতো সর্বজন সমর্থিত একটি নির্দলীয় অরাজনৈতিক সরকারের পক্ষেই বাজার সিন্ডিকেটের কবল থেকে জনগনকে মুক্তি দেয়া সহজ। তাহলে এখন প্রশ্ন অন্তবর্তীকালীন সরকার এতোদিনেও কেনো বাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ। জনগনের ওপরে কেনো উল্টো ভ্যাটের বোঝা চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে, এখনো কেনো বাজার সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম চলছে। এমন পরিস্থিতিতে জনগনের মনে প্রশ্ন উঠা স্বাভাবিক তাহলে কি সরকারের কেউ কেউ অন্য কোনো ইস্যুতে বেশি মনোযোগী নাকি সরকার পারছে না।”

তবে তারেক বলেন, ‘‘ অন্তবর্তীকালীন সরকারের নানা সীমাবদ্ধতা থাকা সত্বেও আমরা মনে করি, এই সরকারকে ব্যর্থ হতে দেয়া যাবে না। কারণ হাজারো শহীদের রক্ত মাড়িয়ে একটি গণতান্ত্রিক, বৈষম্যহীন মানবিক বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার নিয়ে এই সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছে।”