ঢাকা, সোমবার ২৭ জানুয়ারী ২০২৫, ১৪ই মাঘ ১৪৩১

প্রধান উপদেষ্টার দাভোস সফর বাংলাদেশের জন্য ঐতিহাসিক অর্জন: প্রেস সচিব

সালেহ্ বিপ্লব, ঢাকা | প্রকাশের সময় : রবিবার ২৬ জানুয়ারী ২০২৫ ১০:০০:০০ অপরাহ্ন | জাতীয়
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব। ছবি: সিএ প্রেস উইং

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস সুইজারল্যান্ডের দাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বার্ষিক সম্মেলনে চারজন সরকার ও রাষ্ট্র প্রধানসহ গুরুত্বপূর্ণ ৪৭টি বৈঠক করেছেন। এসব বৈঠকে রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধান, পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনা, বিনিয়োগ ও বাণিজ্য সম্প্রসারণ, দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদারসহ বিভিন্ন স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয় প্রাধান্য পায়। সবকিছু মিলিয়ে সাফল্যের বিচারে প্রধান উপদেষ্টার দাভোস সফর বাংলাদেশের জন্য ঐতিহাসিক অর্জন বলে অভিহিত করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। বাসস

রোববার রাজধানীর হেয়ার রোডে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সুইজারল্যান্ডের দাভোস সফরের বিষয়ে আয়োজিত মিডিয়া ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন।

বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) বার্ষিক সম্মেলনে যোগ দিতে গত ২১ থেকে ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত দাভোস সফর করেন প্রধান উপদেষ্টা। শনিবার তিনি দেশে ফেরেন।

শফিকুল আলম জানান, অধ্যাপক ইউনূস যেসব বৈঠক করেছেন- সেখানে তিনি রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে বিশ্ব সম্প্রদায়ের সহযোগিতা কামনা করেছেন। তিনি আরও জানান, আগামী সেপ্টেম্বরে রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে বাংলাদেশ আর্ন্তজাতিক সম্মেলন করবে। এই সম্মেলন আয়োজনে জাতিসংঘ সহায়তা করবে এবং সম্মেলনে ১৭০টি দেশ অংশগ্রহণের সম্ভাবনা রয়েছে।

শফিকুল আলম বলেন, বাংলাদেশে এখনও মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ অব্যাহত রয়েছে। ২০২৪ সালেও ৭০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে।

এক প্রশ্নের জবাবে প্রেস সচিব বলেন, শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির রিপোর্টে এসেছে ১৫ বছরে বাংলাদেশ থেকে ২৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পাচার হয়েছে। এসব অর্থ বাংলাদেশের খেটে খাওয়া মানুষের। ফলে এই টাকা ফিরিয়ে আনতে সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। এবারের সফরে বিশ্বনেতা, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল এবং বিশ্বব্যাংকসহ গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকগুলোতে এই বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে।

তিনি বলেন, পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে আনা বৈশ্বিকভাবে একটা ধীরগতির পদ্ধতি। তবে এটার জন্য যত দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া দরকার, অন্তর্র্বতী সরকার সব উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাস্কফোর্স করে দেওয়া হয়েছে। সম্পদ পুনরুদ্ধার কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের ১১টি টিম কাজ করছে। আমরা বিশ্বের বড় বড় এজেন্সির সঙ্গে কথা বলছি। এরমধ্যে কেপিএমজি অন্যতম। তাদের পরামর্শ নিচ্ছি। শফিকুল আলম বলেন, ‘পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনা আমাদের কাছে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।’

অধ্যাপক ইউনূসের বরাত দিয়ে শফিকুল আলম বলেন, দাভোসে যেসব গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে, তারা বাংলাদেশের অন্তর্র্বতী সরকারের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেছেন। এসব বৈঠকে বাংলাদেশে বিনিয়োগ এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেখানে বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিবেশের ব্যাপারে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ধারণা দেওয়া হয়েছে।

তিনি জানান, বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগকারীরা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করেছেন। তাদের সবার কাছে  আহ্বান ছিল, ‘আপনারা বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়ান।’ এক্ষেত্রে বাংলাদেশের তারুণ্য ও যুবশক্তির সুবিধা নিতে বিভিন্ন দেশকে আহ্বান জানানো হয়।

শফিকুল আলম আরও বলেন, এ ধরনের সম্মেলনে যে অগ্রগতি হয়, তা হলো পারস্পারিক আস্থা বৃদ্ধি। বর্তমানে বাংলাদেশের প্রতি বৈশ্বিক পর্যায়ের ব্যবসায়ী নেতা এবং বড় বিনিয়োগকারীদের আস্থা বেড়েছে। এছাড়াও এই সফরে কয়েকটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা সাক্ষাৎকার দিয়েছেন।

বাংলাদেশে ড. ইউনূসের পদত্যাগ ও পালিয়ে যাওয়া নিয়ে গুজব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যারা (আওয়ামী লীগ) সত্যিকার অর্থে পালিয়ে গেছে, তারাই এসব গুজব ছড়াচ্ছে। তাদের ব্যাপারে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা নেবে।

অপর এক প্রশ্নের উত্তরে শফিকুল আলম বলেন, ব্যবসায়ীদের দাবি দাওয়া ব্যবসার পরিবেশ নিয়ে হওয়া উচিত। বর্তমানে বাংলাদেশে ব্যবসার পরিবেশ বিরাজ করছে। ফলে তাদের ব্যবসায় মনোযোগ দেওয়া উচিত। 

তিনি বলেন, যেসব ব্যবসায়ী ব্যাংকের টাকা লুট করে পালিয়েছে, তাদের কয়েকটি কারখানায় অস্থিরতা আছে। বর্তমানে তারা বিদেশে বসে এসব নিয়ে তামাশা দেখছে।

সুইজারল্যান্ডের দাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বার্ষিক সম্মেলনের ফাঁকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস যেসব গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে বৈঠক করেছেন- এর মধ্যে অন্যতম জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাপ শোলৎজ, ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার ষ্টাব, বেলজিয়ামের রাজা ফিলিপ, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম এবং থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রা।

বায়ান্ন/এসবি