ঢাকা, মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

নির্মাণকাজ শেষের আগেই দেবে গেছে ৪ তলা বিদ্যালয় ভবন

খুলনা ব্যুরো: | প্রকাশের সময় : বুধবার ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২২ ০১:২১:০০ পূর্বাহ্ন | দেশের খবর

 

খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলায় একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের চারতলা ভবন নির্মাণ কাজ চলছে। ২০১৯ সালে প্রায় তিন কোটি টাকা বরাদ্দে এ একাডেমিক ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হয়। কিন্তু নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার আগেই ভবনটি দেবে গিয়ে প্রায় দুই ফুট হেলে পড়েছে। শোভনা ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের পার মাদারতলা এলাকার পল্লীশ্রী বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। এমএস রহিত এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ভবনটি নির্মাণ করছে।

 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগের বাস্তবায়নে ও শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের বাস্তবায়নাধীন ‘নির্বাচিত মাধ্যমিক বিদ্যালয়সমূহে উন্নয়ন’ প্রকল্পের আওতায় ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২ কোটি ৯০ লাখ ৮০ হাজার ৯০৭ টাকা ব্যয়ে পল্লীশ্রী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন নির্মাণের জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হয়। খুলনার দৌলতপুরের এমএস রৈতি এন্টারপ্রাইজ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি পায়। ১৮ মাসে কাজ সমাপ্ত করার সময় বেঁধে দিয়ে ২০১৯ সালের ৮ এপ্রিল কার্যাদেশ দেওয়া হয়। অথচ অভিযোগ উঠেছে, কাজ সম্পন্ন করার নির্ধারিত সময়ের দ্বিগুণ পার হয়েছে। এখন পর্যন্ত ভবনের মাত্র ৮০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এদিকে নির্মাণাধীন ভবনের পেছনের (উত্তর) পাশ দেবে গিয়ে কিছুটা হেলে পড়লেও কাজ অব্যাহত রেখেছেন শ্রমিকরা। ভবন নির্মাণে বিদ্যালয়ের মাঠের সীমানার উত্তর পাশের জলাশয় ভরাট করা জায়গা বাদ রেখে স্থান নির্ধারণ করে মাটি পরীক্ষা করা হয়। পরে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ইচ্ছায় নির্ধারিত স্থান থেকে একটু পিছিয়ে ডোবার জায়গা নির্ধারণ করা হয়। ওই স্থানের মাটি পরীক্ষা ছাড়াই পাইলিং শুরু হলে তা বেঁকে মাটির গভীরে চলে যায়।

 

স্থানীয় বাসিন্দা আজিরুন বেগম বলেন, ‘স্কুলের উত্তর পাশে বড় জলাশয় ছিল। সেখানে মাছ চাষ হতো। বছর পাঁচেক আগে সেটি বালু দিয়ে ভরাট করা হয়।’

 

স্থানীয় বাসিন্দা সুমন মণ্ডল বলেন, ‘নতুন ভরাট করা জলাশয়ে প্রথমে পিলার (ফাইলিং) পোতা হয়। তখনই তা হেলে পড়ে। শ্রমিকরা তখন রাগ করে চলে গিয়েছিলেন। পরে আবার বালি দিয়ে কাজ শুরু করা হলো। এখন তো হেলে পড়েছে।’

 

স্থানীয় ইউপি সদস্য দেবব্রত সরদার বলেন, ‘ভবনটি উত্তরে প্রায় দুই ফুটের মতো হেলে পড়ে। পরে চারতলা করার সময় পেছন দিকে একটু গাঁথুনি বাড়িয়ে সমান করে। তবে ফ্লোরগুলো এখনও নিচু রয়েছে। এভাবে থাকলে স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস করতে হবে।’

 

ঠিকাদার টিপু হাওলাদার বলেন, ‘নির্ধারিত স্থানে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ভবন করতে দেয়নি। তাদের কারণেই ডোবা ভরাটের পর সেখানে ভবন নির্মাণ করতে হয়েছে। কাজ করার সময় পেছন দিকটা একটু হেলে যায়।’

 

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রভাষ মণ্ডল বলেন, ‘ভবনটি নির্মাণের শুরুতেই অনিয়ম হয় এবং ঝুঁকিতে পড়ে। ঠিকাদার মাটি পরীক্ষা না করেই পাইলিং শুরু করেন। ফলে তা বেঁকে মাটির গভীরে চলে যায়। তখন ক্রেন এনে পাইলিংয়ের যন্ত্র তুলতে হয়। এ কারণে প্রায় পাঁচ মাস নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকে। তৃতীয় তলা পর্যন্ত করা হলেই ভবনটি ছয় ইঞ্চি দেবে উত্তর দিকে হেলে পড়ে। ঠিকাদার তখন ক্রেন দিয়ে ঠেলে ভবনের নিচে বালু ও ঢালাইয়ের ব্যবস্থা করেন। তারপর চতুর্থতলার ছাদ ঢালাই করেন। ভবনটি দুই কোটি ৯০ লাখ টাকায় নির্মাণ করা হচ্ছে।’

 

তিনি আরও বলেন, ‘ভবনটি সামনের দিকে একটু এগিয়ে করা যেত। কিন্তু বৈদ্যুতিক লাইনের কারণে বিদ্যালয়ের দক্ষিণে জায়গা নির্ধারণ করা হয়। ঠিকাদার বালু দিয়ে ডোবা ভরাট করে কাজ শুরু করেন।’

 

এ বিষয়ে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’