ঢাকা, শনিবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

পাহাড়সম বৈষম্যে বেসরকারি মাধ্যমিক শিক্ষকরা

দুলাল বিশ্বাস, | প্রকাশের সময় : সোমবার ১৭ জুলাই ২০২৩ ০২:৩০:০০ অপরাহ্ন | জাতীয়

 

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ফুটপাতে মাদুর বিছিয়ে, রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে, খেয়ে না খেয়ে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীরা লাগাতার পালন করে আসছেন। আজ সোমবার (১৭ জুলাই) অবস্থান কর্মসূচির সপ্তম দিন। সরকারি বেসরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যেপাহাড় সমানবৈষ্যমের অভিযোগ করে তারা জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলন করছেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্তশান্তিপূর্ণভাবেএই কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার কথা জানাচ্ছেন বেসরকারি শিক্ষক নেতারা।

মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবিতে রবিবার (১৬ জুলাই) থেকে সব বেসরকারি মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তালা ঝুলিয়ে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষকরা। যতদিন পর্যন্ত দাবি পূরণ না হবে ততোদিন পর্যন্ত জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে চলমান অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।

শুক্রবার (১৪ জুলাই) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তালা ঝুলিয়ে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করার ঘোষণা দেন সংগঠনের নেতারা।

বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. বজলুর রহমান মিয়া বলেন, শিক্ষার ক্ষেত্রে বিরাজমান সরকারি বেসরকারি বৈষম্য দূরীকরণের লক্ষ্যে মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের এক দফা দাবিতে ১৬ জুলাই থেকে বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, একই কারিকুলামের অধীনে একই সিলেবাস, একই একাডেমিক সময়সূচি, একইভাবে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন উত্তরপত্র মূল্যায়নের কাজে নিয়োজিত থেকেও আর্থিক সুবিধার ক্ষেত্রে সরকারি বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে রয়েছে পাহাড়সম বৈষম্য। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালে একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে প্রায় ৩৭ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করেছিলেন। ঠিক তেমনিভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায় ২৬ হাজার বেসরকারি রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করে জাতির কাছে স্মরণীয় হয়ে আছেন। অবস্থায় দেশ জনগণের বৃহৎ স্বার্থে শিঘ্রই জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ বাস্তবায়ন, শিক্ষায় বিনিয়োগে ইউনেসকো-আইএলওর সুপারিশসমূহ বাস্তবায়ন সবার জন্য শিক্ষাগ্রহণের সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণ এখন সময়ের দাবি।

বিটিএ সাধারণ সম্পাদক শেখ কাওছার আহমেদ বলেন, আমাদের এক দফা দাবি, মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণ। দাবি না মানা পর্যন্ত আমরা এখানে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করবো। আমরা পুলিশের সাথে কথা বলেছি। তাদের অবগত করেছি কর্মসূচির বিষয়ে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা কর্মসূচি চালিয়ে যাবো। এর আগে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের আগে মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের সুনির্দিষ্ট ঘোষণা না দিলে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেন শিক্ষকরা।

শিক্ষকরা বলছেন, দেশের সিংহভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হচ্ছে এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী দ্বারা। পরিতাপের বিষয় আমরা এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা এক হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া, ২৫ শতাংশ উৎসব ভাতা এবং ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা পাই। অথচ একই কারিকুলামের অধীন একই সিলেবাস, একই একাডেমিক সময়সূচি, একইভাবে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন উত্তরপত্র মূল্যায়নের কাজে নিয়োজিত থেকেও আর্থিক সুবিধার ক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে রয়েছে পাহাড়সম বৈষম্য।

এছাড়াও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদের বেতন স্কেল সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠান প্রধানদের বেতন স্কেলের এক ধাপ নিচে দেওয়া হয়। তাছাড়া সহকারী প্রধান শিক্ষকদের উচ্চতর স্কেল না দেওয়ার ফলে উচ্চতর স্কেলপ্রাপ্ত সিনিয়র শিক্ষকদের বেতন স্কেল সহকারী প্রধান শিক্ষকদের বেতন স্কেল সমান হওয়ায় সহকারি প্রধান শিক্ষকদের মধ্যে দীর্ঘদিনের অসন্তোষ রয়েছে।

বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসরে যাওয়ার পর অবসর সুবিধা কল্যাণ ট্রাস্টের টাকা পেতে বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয়। ফলে অনেক শিক্ষক-কর্মচারী টাকা পাওয়ার আগেই অর্থাভাবে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করছেন। কয়েক বছর ধরে কোনো রকমের সুবিধা না দিয়েই অবসর কল্যাণ ট্রাস্ট খাতে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন থেকে অতিরিক্ত শতাংশ কর্তন করা হচ্ছে যা অত্যন্ত অমানবিক।

 

গত মঙ্গলবার (১১ জুলাই) থেকে একই দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছেন শিক্ষক সংগঠনটি। লক্ষাধিক শিক্ষক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছেন। আন্দোলনকারী শিক্ষকরা জানান, আমাদের একটিই দাবি মাধ্যমিক শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণ করতে হবে। আর দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথেই অবস্থান করব।