ঢাকা, রবিবার ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৫ই পৌষ ১৪৩১

ফরিদপুরে যুবককে হাতুড়িপেটা, গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি

ফরিদপুর প্রতিনিধি : | প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার ৬ জুন ২০২৩ ০৫:৩৩:০০ অপরাহ্ন | দেশের খবর


ফরিদপুরের সালথা উপজেলায় গোলাম আলী (২৩) নামে এক যুবককে হাতুড়ি পেটানোর অভিযোগ উঠেছে। পরে গুরুতর আহত  অবস্থায় ওই যুবককে উদ্ধার করে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।সোমবার সকালে উপজেলার ভাবুকদিয়া গ্রামে এ হাতুড়িপেটার ঘটনা ঘটে।

মঙ্গলবার (৬ জুন) সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শেখ সাদিক ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। পরিস্থিতি শান্ত রাখতে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

আহত গোলাম আলী একই উপজেলার খোয়াড় গ্রামের শামচেল ফকিরের ছেলে। সে সালথা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ওয়াদুদ মাতুব্বরের অনুসারী।

স্থানীয়রা জানান, সকালে বাড়ি থেকে দুটি ভ্যানে করে ১৫-২০ মণ পেঁয়াজ নিয়ে হাটে বিক্রি করতে বালিয়াগট্টি বাজারে যাচ্ছিলেন গোলাম আলী। পথেমধ্যে ভাবুকদিয়া এলাকায় পৌঁছালে তার ওপর হাতুরি ও লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা চালায় স্থানীয় কয়েকজন তরুণ। এসময় তার পেঁয়াজও নিয়ে যায় তারা। পরে স্থানীয়রা আহত অবস্থায় উদ্ধার তাকে উদ্ধার করে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে।

আহত গোলাম আলীর পরিবারের দাবী, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠণিক সম্পাদক খন্দকার রেজাউর রহমান চয়ন এর অনুসারী ভাবুকদিয়া গ্রামের পাভেল রায়হানের ছত্রছায়ায় একই গ্রামের আতিক, হাসিব, ইমনসহ তার দলের কিছু লোকজন এ হামলা চালায়। এসময় গোলাম আলীকে একটি ঘরে নিয়ে বেঁধে হাতুড়িপেটা করে তারা। সাথে লাঠিসোঁটা দিয়েও তাকে পিটিয়ে আহত করা হয়। এছাড়া পেঁয়াজের সঙ্গে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনও কেঁড়ে নেওয়া হয়। আহত গোলাম আলীর দেহের বিভিন্ন স্থানে ও পায়ে হাতুড়ি দিয়ে পেটানো হয়। সেই সঙ্গে লাঠিসোঁটা দিয়ে হামলা চালানো হয়।


তবে এসব হাতুড়িপেটার সাথে তার কোনো নির্দেশনা কিংবা তিনি জড়িত নয় বলে জানিয়েছেন পাভেল রায়হান।

অভিযোগের ব্যাপারে পাভেল রায়হান গণমাধ্যমকে বলেন, এ ঘটনার সময় আমি ফরিদপুরে ছিলাম। আমি এর কিছুই জানিনা। পরে খবর পেয়ে গ্রামে এসে খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি কারা এ হামলা চালিয়েছে। এছাড়া পেঁয়াজ ফেরত দেওয়ার জন্যও চেষ্টা করছি। এ ঘটনা গ্রামের জন্য লজ্জাজনক। আমার নিজেরও এ ঘটনা নিয়ে খুব খারাপ লাগছে। একজন নিরীহ ছেলেকে মারধোর, এটা সত্যিই দুঃখজনক। এর সঠিক বিচার দাবি করছি।

এ ব্যাপারে ওই এলাকার একটি দলের নেতৃত্বে থাকা সালথা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ওয়াদুদ মাতুব্বর বলেন, উপজেলার বালিয়া গ্রামের জাহিদ, আড়ুয়াকান্দি গ্রামের নুরু মাতুব্বর, গট্টির চয়ন, ভাবুকদিয়া গ্রামের পাভেল রায়হান নেতৃত্ব দিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে তাদের লোকজন আমার লোকজনের উপর মাঝেমধ্যেই হামলা চালাচ্ছে। তারা লোকজনকে উস্কানি দিয়ে এলাকায় কাইজা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটাচ্ছে। তারা আমার এলাকায় কাইজা সৃষ্টি করে আমার নামে অপবাদ দিয়ে আমাকে মিথ্যা মামলার আসামি করছে। আমি চাই এলাকায় শান্তি, মারামারি নয়।

তিনি বলেন, কয়েকদিন আগে আমার দলের মজনু মাতুব্বরের ওপর প্রথমে হামলা চালানো হয়। তার পরেরদিন স্থানীয় মফি মাতুব্বর ও তার ছেলে আফতাপ মাতুব্বরের ওপরও একই কায়দায় হামলা চালায় তাদের লোকজন। আমি এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বলেছি। তবুও আমার দলের সকল লোকজনকে কড়া নির্দেশ দিয়েছি মারামারি না করতে। মারামারি যে করবে তার সঙ্গে সে নেই বলে জানিয়ে দিয়েছি। এ সুযোগে প্রতিপক্ষ আমার লোকজনের উপর হামলা চালাচ্ছে। আমি প্রশাসনের কাছে এর সঠিক বিচার চাই।

তবে, এ ব্যাপারে ওয়াদুদ মাতুব্বরের প্রতিপক্ষ খন্দকার চয়ন ও নুরু মাতুব্বর সকল অভিযোগ অস্বীকার করে গণমাধ্যমকে বলেন, আমরাও এলাকায় কাইজা চাইনা, শান্তি চাই। আমরা আমাদের লোকজনকে সকল প্রকার কাইজা, হামলা-মামলা থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দিয়েছি। উল্টো ওয়াদুদের লোকজনই আমাদের লোক জাহাঙ্গীর মাতুব্বরের উপর হামলা চালিয়েছে।

সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শেখ সাদিক আরো বলেন, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।