বগুড়ায় খুনের ঘটনা বেড়েই চলছে। প্রতি ৩ দিনে ঘটছে একটি হত্যাকান্ড। পুর্ব শত্রুতা ও তুচ্ছ ঘটনায় এসব হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত হচ্ছে ধারাল অস্ত্র। তবে আগ্নেয়াস্ত্র এসব হত্যাকান্ডে ব্যবহার হয়নি বলে পুলিশ সুত্র জানায়। আর গত আট মাসে জেলায় মোট ৬৪টি হত্যাকান্ড ঘটেছে। এর মধ্যে আগস্টে খুন হয়েছে ১০ জন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আবার ব্যবহার হচ্ছে বার্মিজ চাকু। হত্যাকান্ড রোধে পুলিশের পক্ষ থেকে অপরাধ নিবারণ মুলক ও সচেতনমুখী নানা ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। বিট পুলিশিং তৎপরতাও বাড়ানো হয়েছে। তারপরেও হত্যাকান্ডের গ্রাফ নিম্মমুখী হচ্ছে না। সার্বিক পরিস্থিতিতে পুলিশ বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে নানা তৎপরতা চালাচ্ছে।সর্বশেষ রবিবার জেলা আইন শৃংখলা কমিটির সভায় বিষয়টি উঠে আসে। হত্যাকান্ড ছাড়াও বগুড়ায় মাদক কারবারীদের তৎপরতাও বাড়ছে।।
পুলিশ সুত্র বলছে গত কয়েক মাস ধরে বগুড়ায় হত্যাকান্ডের ঘটনা বেড়েছে। বেশির ভাগই ঘটছে পুর্ব শত্রুতায় বিরোধের জের ধরে। তুচ্ছ ঘটনাতেও ধারাল বার্মিজ ছুরি নিয়ে হামলায় হত্যাকান্ডে নতুন সংখ্যা যোগ হচ্ছে। এছাড়া ব্যাটারী চালিত রিক্সা ভ্যানের ব্যাটারী ছিনতাই করতে নির্জন স্থানে নিয়ে গিয়ে এর চালককে হত্যা করে ব্যাটারী ছিনতাই হচ্ছে। এসব হত্যাকান্ডের বেশির ভাগই আবার ঘটছে শ^াসরোধ করে। পাবিারিক ও জমি সংত্রান্ত বিরোধেও হত্যাকান্ড ঘটছে। হত্যাকান্ড ও মাদক কারবারীদের তৎপরতার বিষয়ে পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার জানিয়েছেন, হত্যাকান্ড রোধে বিট পুলিশিং ব্যবস্থা জোরদার ও সার্বিক মনিটরিং বাড়ানো হয়েছে। ওপেন হাউস ও সচেতনতামুলক অন্যান্য ব্যবস্থা চলছে। এর মধ্যে ব্যবস্থাযোগ্য জিডির ক্ষেত্রে গুরুত্ব দিয়ে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। প্রতিদ্বন্দ্বী পক্ষসহ পারিবারিক দ্বন্দের বিষয়েও খোঁজ নেয়া হচ্ছে। তিনি জানান, প্রতি মাসে খুনের সংখ্যা ৭ এর মধ্যে থাকলেও আগাস্ট মাসে খুনের সংখ্যা বেড়ে ১০ এ দাড়ায়। আর মাদক দ্রব্যের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযান জোরদার থাকায় গত ৮ মাসে বিপুল সংখ্যক মাদক উদ্ধার, ১৭শ’ টির বেশি মামলা এবং এর বিপরীতে ২৩শ ৯১ জন গ্রেফতার হয়েছে। উদ্ধারকৃত মাদকের মধ্যে ১ টন ৭৫ কেজি গাঁজা,৭ হাজার ৪শ বোতল ফেন্সিডিল, প্রায় ৪৫ হাজার পিস ইয়াবা, ১৭ হাজার পিস টাপেন্টডাল ট্যবলেট সহ বিপুল পরিমান অন্যান্য মাদক রয়েছে। পুলিশ সুত্র আরো জানায় বগুড়ায় মোট মাদক ব্যবসায়ীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৬ শ। তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসাীয় গ্রেফতারের সংখ্যা প্রায় ৪১২। তবে এর বাইরে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর, র্যাব ও আমর্ড ব্যাটালিয়ন পুলিশের অভিযানেও বিপুল মাদক উদ্ধার হয়েছে।
পুলিশ সুত্র জানায়, জানুয়ারি থেকে আগস্ট মাসে জেলার থানা এলাকা গুলোতে যে ৬৪টি হত্যাকান্ড হয়েছে তার মধ্যে বার্মিজ চাকুসহ ধারাল অস্ত্র দিয়ে খুন হয়েছে ২৪টি, শ^াসরোধ করে হত্যা ১৪টি দেশীয় অস্ত্র ও লাঠি, রড , কোদাল দিয়ে হত্যা হয়েছে ১৩টি এবং অন্যান্য ভাবে হত্যা হয়েছে ১১টি। শ^াসরোধ করে যে হত্যাকান্ড গুলো ঘটেছে তার বেশির ভাগাই আবার ঘটছে ব্যাটারী চালিত ভ্যানের ব্যাটারী ছিনতাইয়ের ঘটনায়। অপর দিকে বার্মিজ চাকুর ব্যবহার বাড়ার জন্য এর সহজ প্রাপ্যতাকে দায়ি করছে পুলিশ। কিশোর অপরাধীরা ভয়ঙ্কর সৌন্দেয্যের এসব চাকু অনলাইনে কিনে আনছে। এছাড়া গৃহস্থালী ব্যবহারের কথা বলে অনেকে এসব চাকু ব্যবহার করছেন। এবিষয়ে বগুড়ার পুলিশ সুপার জানান তার অনলাইনে বার্মিজ চাকু কেনার বিষয়ে সাইবার পুলিশ টিমের মাধ্যমে মনিটরিং করছেন। তবে পুলিশী ব্যবস্থার সঙ্গে অপরাধ নিমুর্লে জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্তা তথা সচেতনতা অরো বাড়লে কিশোর অপরাধ সহ হত্যাকান্ডের সংখ্যাও হ্রাস পাবে।