ঢাকা, মঙ্গলবার ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১লা আশ্বিন ১৪৩১

বগুড়ায় কম খরচে হৃদ রোগের আধুনিক চিকিৎসা, রোগীরা খুশি

বগুড়া প্রতিনিধি : | প্রকাশের সময় : রবিবার ৩১ জুলাই ২০২২ ০৭:৪৩:০০ অপরাহ্ন | দেশের খবর

স্বল্প খরচে বগুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেই (শজিমেক হাসপাতালে) হার্টের ব্লক অপসারণে স্টেনটিং বা এনজিওপ্লাস্টি শুরু হয়েছে। জনবলের ঘাটতি থাকলেও বগুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এখন থেকে নিয়মিত এনজিও প্লাস্টি অপারেশন হবে। এ অঞ্চলের কম আয়ের পরিবারের হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীদের হার্টের ব্লক অপসারনে চিকিৎসা খরচ অনেক হ্রাস পাবে। স্বল্প খরচেই বগুড়া থেকেই হৃদরোগের আধুনিক চিকিৎসা নিয়মিত পাবেন। এতে স্থানীয় চিকিৎসা প্রার্থীরা খুশি হয়েছেন।

উল্লেখ্য বর্তমানে বগুড়া ও রাজশাহীতে এনজিওগ্রামসহ হৃদরোগের ব্লক অপারেশন হচ্ছে। দিনাজপুর ও রংপুরে বর্তমানে হৃদরোগের এই ধরনের চিকিৎসা সেবা বন্ধ রয়েছে বলে এনআইসিভিডির চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।

গত বছরের ৪ ডিসেম্বর ন্যাশনাল ইন্সিটিটিউট অব কার্ডিও ভাসক্যুলার ডিজিজ বা জাতীয় হৃদরোগ ইন্সিটিটিউটের (এনআইসিভিডি) বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের তত্বাবধানে এর উদ্বোধন হলেও রিং পড়ানো কার্যক্রম নিয়মিত ছিলো না। রবিবার থেকে হার্টের ব্লক অপসারণে রিং পড়ানো বা স্টেনটিং কার্যক্রম নিয়মিত শুরু হয়েছে। জাতীয় হৃদরোগ ইন্সিটিটিউটের বিশেষজ্ঞ টিম জানিয়েছেন, আগামী ২/৩ মাসের মধ্যে তাদের সহযোগীতা ছাড়াই বগুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের টিম নিজেরাই হৃদরোগের এধরনের অপারেশন করতে পারবেন। রবিবার এক দিনে ৩টি স্টেনটিং অপারেশন এবং ৮ জনের এনজিওগ্রাম করা হয়। জাতীয় হৃদরোগ ইন্সিটিউটের টিমের সঙ্গে ঢাকার বেসরকারী হাসপাতালের চিকিৎসক এতে অংশ নেন। ঢাকা থেকে আসা টিমের সদস্যরা হলেন- জাতীয় হৃদরোগ ইন্সিটিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মহসীন আহম্মেদ, সহকারী অধ্যাপক ডা. আমিনুর রাজ্জাক, কনসালটেন্ট ডা. সাইদুর রহমান ও ইউনাইটেড হাসপাতালের সিনিয়র কনাসালটেন্টচ ডা. কায়সার নসিরুল্লাহ খান। এছাড়া বগুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কার্ডিলজি বিভাগের টিমে ছিলেন- বিভাগীয় প্রধান ডা. শেখ মোঃ শহিদুল হক, সহকারী অধ্যাপক ডা. অলোক চন্দ্র সরকার, ডা. মোরশেদুল আহসান শামিম, ডা. শাহাদত হোসেন, ও ডা. আবু জামিল। এখন থেকে প্রতি মাসে ২ বার হার্টের ব্লক অপারেশনে রিং পড়ানোর কার্যক্রম নিয়মিত ভাবে চলবে। এছাড়া সব মিলিয়ে বগুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এখন পর্যন্ত  প্রায় ১ হাজার এনজিও গ্রাম ও ৮জনের স্টেনটিং অপারেশন হয়েছে। 

ব্লক অপারেশনর পর দিন মজুর কুদ্দসের ভাই দিনমজুর সোহাগ জানান, এখন তাদের দুশ্চিন্তা দুর হলো। ৩ বছর ধরে বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছেন। তবে আর্থিক সঙ্গতি না থাকায় ব্লক অপসারনে কোন ব্যবস্থা নিতে পারেননি। কুদ্দুসের মতো এ অঞ্চলের হৃদরোগীদের জন্য স্বস্তি এনে দিয়েছে বগুড়া মেযিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। বগুড়া মেডিক্যাল কলেজের কার্ডিওলজি বিভাগ জানিয়েছে, বগুড়া মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠার পর ক্যাথলাবে এনজিওগ্রাম শুরুর পরেই ২০০৭ সালে তা বন্ধ হয়ে যায়। ২০১৬ সালে আবার এনজিওগ্রাম শুরু হলেও এর ধারাবাহিকতা ছিলো না। এরই মাঝে এনজিওগ্রাম মেশিন অকেজো হয়ে পড়ে। ২০১৯ সালে প্রায় ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন সিমার্জু মেশিন স্থাপন করা হয়। তবে করোনার কারনে এনজিওগ্রাম কার্যক্রমে গতি ছিলো না। গত বছরের মার্চ থেকে পুরদ্দমে আধুনিক পদ্ধতিতে এনজিওগ্রাম শুরু হলেও হৃদ হৃদরোগের জটিল চিকিৎসা হার্টের রিং পড়ানো বা স্টেটিং হতো না। গত ডিসম্বরে রিং পড়ানো কার্যক্রমের উদ্বোধন হয়। বগুড়া মেডিক্যাল কলেজের কার্ডিওলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডা. শেখ মোঃ শহিদুল হক জানান, গত ৮ মাসে বগুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে(রবিবারের অপারেশনসহ) প্রায় ৪শ এনজিওগ্রাম এবং ৮ জনের স্টেনটিং অপারেশন বা রিং পড়ানো সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এক্ষেত্রে ঢাকার তুলনায় রোগীদের চিকিৎসা ব্যয় প্রায় অর্ধেক। হাসপাতাল থেকে বেশ কিছু ওষুধসহ প্রয়োজনীয় অনেক সুবিধা দেয়ায় দরিদ্র রোগীদের চিকিৎসা ব্যয় আয়ত্বে থাকার পাশাপাশি তারা হৃদ রোগের আধুনিক চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন। বগুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কার্ডিওলজি বিভাগে ৪৪টি আসন থাকলেও রোগী থাকছেন প্রায় ৩ গুন। অন্য দিকে জনবলের রয়েছে তীব্র ঘাটতি। এ বিষয়ে মেডিক্যাল কলেজের উপ পরিচালক জানান, সপ্তাহে দু দিন এনজিও গ্রামসহ অন্যান্য কার্যক্রম চললেও চিকিৎসকসহ অন্য জনবলের ঘাটতি রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে কার্ডিওলোজি বিভাগের অধ্যাপকের পদ শুন্য রয়েছে। ক্যাথল্যাবের স্থায়ী কোন টেনিশিয়ান নেই। রেডিওলোজি বিভাগ থেকে এনে প্রশিক্ষন দিয়ে ক্যাথল্যাব টেকনিশিয়ানের কাজ চালানো হচ্ছে। পদোন্নতি নেই। সহযোগী অধ্যাপকের পদও খালি রয়েছে। তিনি জানান, বর্তমানে রোগীর তুলনায় অন্ততঃ ২০ জন চিকিৎসক প্রয়োজন। কার্ডিওলোজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান চিকিৎসক সংকটের কথা জানিয়ে বলেন, হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ মোহসিন ও মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. রেজাউল আলম জুয়েলের প্রচেস্টায় তারা এনজিওগ্রাম ও এনজিওপ্লাস্টি কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন। এনআসইসিভিডি’র সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোহসীন আহম্মেদও বগুড়ায় জনবল কম থাকার কথা উল্লেখ করেন।