বগুড়ায় ১৮ জুলাই মঙ্গলবার দুপুরে পুলিশ বিএনপির সংঘর্ষের পর দলের পক্ষে কেন্দ্রীয় ব্রিফিংয়ের অংশ হিসেবে বগুড়া বিএনপির কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে এক জরুরী সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে কথা বলেন দলটির জোষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভি। এসময় তিনি বলেন ‘আওয়ামী চেতনার পুলিশকে লেলিয়ে দিচ্ছে বিএনপির বিরুদ্ধে। তারই প্রতিফলন ঘটেছে আজ বগুড়াসহ দেশের বিভিন্নস্থানে। আজকে বগুড়ার তাণ্ডব নজিরবিহীন। শত শত নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। গ্রেপ্তার আতঙ্কও রয়েছে তাদের মধ্যে। তারা এত বড় কাপুরুষ, নিরীহ মাসুম বাচ্চা মেয়েদেরকে পর্যন্ত ছাড়েনি। অসংখ্য টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে ইয়াকুবিয়া স্কুলের ছাত্রীদের শ্বাসরুদ্ধ করার প্রচেষ্টা চালিয়েছে তারা। দম বন্ধ করার অবস্থায় নিয়ে এসেছে এই আওয়ামী লীগ।’
তিনি অভিযেগ করে আরো বলেন, পুলিশের মাধ্যমে টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে বগুড়ার ইয়াকুবিয়া স্কুলের ছাত্রীদের শ্বাসরুদ্ধ করার চেষ্টা চালিয়েছে তারা।
বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘আওয়ামী লীগের ঐতিহ্যের মধ্যে কখনও গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি ছিল না। যখনই তারা ক্ষমতায় এসেছে, গণতন্ত্রের নামে, এসেই তারা গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। সব দল বন্ধ করে তারা এক দল করেছে। মানুষের ভিন্নমত প্রকাশের অধিকারকে তারা বন্ধ করেছে। শুধুওরাই কথা বলবে; আর কেউ কথা বলবে না।
‘আজকে একই অবস্থার পুনরাবৃত্তি হয়েছে ১৯৭৫-এর বাকশালের পর। নতুন কায়দায়, নতুন আঙ্গিকে তারা সেই বাকশাল কায়েম করছে।’
তিনি বলেন, ‘দেশের বেশ কয়েকটি স্থানে আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীকে সাথে নিয়ে পুলিশ আজ (মঙ্গলবার) যে নারকীয় অবস্থার সৃষ্টি করেছে তার নমুনা দিই। আমি কেন্দ্রীয় কমিটির ব্রিফিং হিসেবে লক্ষ্মীপুরে পদযাত্রা চলাকালে চোরাগোপ্তার ফাঁদে ফেলে কৃষক দলের সজিব হোসেনকে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সভাপতি মহসিন কবির সাগর ও নেওয়াজের নেতৃত্বে কুপিয়ে হত্যা করেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে তিন শতাধিক নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। আরও দুই-একজনের অবস্থা অত্যন্ত অন্তিম মূহুর্তে। কতজন যে মারা যাবে, তা বলা কঠিন।
‘খাগড়াছড়িতে পদযাত্রায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গুলিবর্ষণ করলে দুই শতাধিক নেতা-কর্মী আহত হন। পুলিশ ৫০ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে।’
বগুড়ার পদযাত্রায় হামলা চালিয়ে দেড় শতাধিক নেতা-কর্মীকে আহত করা হয়েছে দাবি করে রিজভী আরও বলেন, ‘টিয়ারশেলের ধোঁয়ার কারণে ইয়াকুবিয়া স্কুলের শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছে। আমাদের কাছে সব ছবি আছে, ভিডিও আছে। আপনারা চাইলে দেখাতে পারব। কিশোরগঞ্জের পদযাত্রায় জেলা শহরের ঈশা খাঁ রোডে পুলিশের বেপরোয়া হামলায় দেড় শতাধিক নেতা গুলিবিদ্ধ হয়।
‘চারটার দিকে রাজশাহীতে পদযাত্রার যাওয়ার পথে যমুনা ব্রিজ পার হওয়ার সময় আমি বগুড়ায় এক নারকীয় ঘটনার কথা শুনি। তখনই আমি সিদ্ধান্ত নিই পদযাত্রা শেষে করেই বগুড়ায় আহত নেতা-কর্মীদের দেখতে আসব। এরপর আসতে আসতে সারা দেশের নারকীয় ঘটনা জানতে পারি। সারা দেশে যে পৈশাচিক বর্বরতা চালিয়েছে, আজকের বগুড়ার নারকীয় ঘটনার সাথে আরও লোমহর্ষক ঘটনা যুক্ত হয়েছে।’
সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, ‘আজকে শেখ হাসিনার বীভৎস রূপের আত্মপ্রকাশ ঘটতে যাচ্ছে। আজকে আন্তর্জাতিকভাবে তার প্রতি খুন, গুম সমালোচনা হচ্ছে। তিনি যে ২০১৪ ও ২০১৮ প্রহসনের নির্বাচন করেছেন, তামাশার নির্বাচন দিয়েছেন, সেটা গোটা বিশ্ব জানে। এই ব্যাপারে গোটা বিশ্ব সোচ্চার হচ্ছে। তাই শেখ হাসিনা সমস্ত কিছু তালগোল পাকিয়ে ফেলছেন।’
ঢাকার উপনির্বাচন প্রসঙ্গে বিএনপির বর্ষীয়ান এ রাজনীতিক বলেন, “আজকে হিরো আলম কী বলব, একটা গরিব ছেলে, অল্প শিক্ষিত ছেলে নির্বাচন করেছে। এরা কত বড় কাপুরুষ হতে পারে!
“আরাফাত আওয়ামী লীগের ক্যান্ডিডেট, এটা তো প্রহসনের নির্বাচন। কেউ যায়নি ভোট দিতে। আমাকে ঢাকা কোর্টের একজন আইনজীবী বলে, ‘আমরা আসার সময় বনানীর একটা সেন্টারে তিনটি কুকুর শুয়ে আছে।’”
নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, ‘আত্মা বিক্রি করে দেয়া প্রধান নির্বাচন কমিশনার হাবিবুল আউয়াল, হাসিনার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে কী বলে দিবে, সেটাই উনি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দিবেন। যেখানে জনগণের ভোটের নির্বাচন হয় না, সেখানেও হিরো আলমের মতো ছেলেকে বর্বরচিত হামলা করে। আগামী জাতীয় নির্বাচন যদি হয়, তার রূপ কী হতে পারে, এইটা তার নমুনা। তাই এক দফা আন্দোলন।’
আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘হয়তো আরও হত্যা হবে। পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, ধলেশ্বরী, করতোয়ায় হয়তো আরও রক্তের স্রোত বয়ে যাবে। তার পরেও শেখ হাসিনার পদত্যাগ ছাড়া কোনো নির্বাচন হবে না। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে; এর কোনো ব্যতয় ঘটবে না।’
তিনি বলেন, ‘আজকে বগুড়ায় যে নারকীয় কাণ্ড ঘটিয়েছে, তার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। এ ছাড়া লক্ষ্মীপুরের হত্যাসহ দেশের সব জায়গায় যে হামলা হয়েছে, তার জন্য ঘৃণা, নিন্দা জানাচ্ছি। সজিব যে নিহত হয়েছে, তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।
‘আমাদের কাছে পাওয়া খবরে সারা দেশে বিএনপির অন্তত ২ হাজার নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। নিহত একজন; নাম সজিব হোসেন। গুলিবিদ্ধ হয়েছেন অন্তত এক হাজার নেতকা কর্মী
সংবাদ সম্মেলনে জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা, সাধারণ সম্পাদক আলী আসগর তালুকদার হেনাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।