ঢাকা, রবিবার ১২ জানুয়ারী ২০২৫, ২৯শে পৌষ ১৪৩১

বরিশালে বঙ্গবন্ধু কর্ণার ও স্মৃতি লাইব্রেরী দক্ষিণাঞ্চলে আলোর দ্যূতি ছড়াচ্ছে : দেলাওয়ার বিন সিরাজ

বরিশাল ব্যুরো : | প্রকাশের সময় : শনিবার ১১ নভেম্বর ২০২৩ ০৮:১১:০০ অপরাহ্ন | দেশের খবর
বঙ্গবন্ধু কর্ণার ও স্মৃতি লাইব্রেরীর প্রবেশদ্বারে স্থাপিত বঙ্গবন্ধুর আবক্ষ ম্যুরাল (ছবি- সংগৃহীত)

সম্প্রতি আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন বরিশাল জেলা সফর করেন। এ সময় তিনি বরিশাল জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে প্রতিষ্ঠিত বঙ্গবন্ধু কর্ণার ও স্মৃতি লাইব্রেরীরও উদ্ধোধন করেন। বঙ্গবন্ধু কর্ণার পাঠাগার বা সাহিত্যাঙ্গনে চিরচেনা একটি নাম, ও নাম জুড়ে আছে যার হ্নদয় মন্দিরে তিনি তার চিন্তা ও চেতনায় বরিশাল জেলা পুলিশ সুপার ওয়াহিদুল ইসলাম জাতির পিতার প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা থেকে বাংলাদেশে এই প্রথম প্রতিষ্ঠা করলেন “ বঙ্গবন্ধু কর্ণার ও স্মৃতি লাইব্রেরী”। 

স্বাধীন বাংলাদেশে বাংলা একাডেমীতে প্রথম বাংলা সাহিত্য সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন “আমি সাহিত্যিক নই, শিল্পী নই কিন্তু আমি বিশ^াস করি যে, জনগণই সব সাহিত্য ও শিল্পের উৎস্য। জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কোন দিন কোন মহৎ সাহিত্য বা উন্নত শিল্পকর্ম সৃষ্টি হতে পারে না। আমি সারা জীবন জনগণকে সাথে নিয়েই সংগ্রাম করেছি, এখনও করছি, ভবিষ্যতেও যা কিছু করব জনগণকে নিয়েই করব। আমার আবেদন আমাদের সাহিত্য সংস্কৃতি যেন শুধু শহরের পাকা দালানেই আবদ্ধ না থাকে, বাংলাদেশের গ্রাম-গ্রামান্তরের কোটি কোটি মানুষের প্রানের স্পন্দনও যেন তাতে প্রতিফলিত হয়। আজকের সাহিত্য সম্মেলনে যদি এ সবের সঠিক মূল্যায়ন হয় তবে আমি সবচেয়ে বেশী আনন্দিত হব”।

বঙ্গবন্ধু কর্ণার ও স্মৃতি লাইব্রেরীরীর পাঠক কক্ষ (ছবি-সংগৃহীত)

বঙ্গবন্ধু কর্ণার প্রথম প্রতিষ্ঠিত হয় ২০১০ সালে অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ শামস্-উল-ইসলাম এর মাধ্যমে কিন্তু বঙ্গবন্ধু কর্নার নামের আরও একধাপ এগিয়ে বরিশাল জেলা পুলিশ সুপার।

ওয়াহিদুল ইসলাম বিপিএম এর নামকরন করেন “বঙ্গবন্ধু কর্ণার ও স্মৃতি লাইব্রেরী” যা বাংলাদেশে এই প্রথম। প্রকৃত পক্ষেই বঙ্গবন্ধু আজ আমাদের মাঝে নেই কিন্তু তাঁর স্মৃতি ও আদর্শ আজও আমাদের প্রেরণা দেয়। তিঁনি অমর অক্ষয় অমলিন, তিঁনি আমাদেরকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র উপহার দিয়েছেন, দিয়েছেন শেষ রক্তবিন্দু যা আজ স্বাধীন দেশের রক্তিম লাল সবুজের পতাকায় শহীদদের রক্তের সাথে মিলে-মিশে একাকার। 

একজন সুদক্ষ ও চৌকশ পুলিশ সুপার ওয়াহিদুল ইসলাম জাতির পিতার প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা থেকে আপন মহিমায় বরিশাল জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে নীচ তলায় স্থাপন করেছেন এ “বঙ্গবন্ধু কর্নার ও স্মৃতি লাইব্রেরী”। পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে প্রবেশ করতেই প্রথমে হাতের বাঁ পার্শে দৃষ্টিনন্দন রুপে স্থাপন করা হয়েছে বঙ্গবন্ধুর আবক্ষ ম্যুরাল যা যে কারও দৃষ্টি আকশর্ষন করবে। লাইব্রেরীতে স্থান পেয়েছে বঙ্গবন্ধু নিজের লেখা ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা স্বনামধন্য লেখকদের বই, বক্তৃতা, সিডি, এলবামসহ বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজড়িত অসংখ্য আলোকচিত্র। পাঠাগারে আগত দর্শক ও পাঠকদের জন্য রয়েছে রাউন্ড টেবিল ও আরাম দায়ক চেয়ার।

unnamed-11

 

বরিশাল জেলা পুলিশ সুপার ওয়াহিদুল ইসলাম বিপিএম (ছবি)

ওয়াহিদুল ইসলাম ১৯৭৮ খ্রি: ১লা মার্চ তৎকালীন ফরিদপুর বর্তমান মাদারীপুর জেলায় এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন। তার পিতা মৃত আব্দুর রাজ্জাক একজন উচ্চ পদস্ত অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মকর্তা। তিনি ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় থেকে বিএ অনার্স এমএ ও এমবিএ পাস করার পর ২০০৩ সালে ১০ ডিসেম্বর ২২তম বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারে ও ২১ আগস্ট ২০০৬ সালে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারে ২৫তম ব্যাচে  সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশে যোগদান করেন। পুলিশ বাহিনীতে চাকুরী কালীন তার সুনিপুন দক্ষতা ও চৌকশ কর্মনিষ্ঠার কারনে তিনি ২০১৮ সালের ৭ নভেম্বর পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি লাভ করেন এবং ২৮ অক্টোবর ২০২২ খ্রি: তারিখে বরিশাল জেলা পুলিশ সুপার পদে যোগদান করে জেলার আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করে চলেছেন। বরিশালে যোগদানের পরই “বঙ্গবন্ধু কর্ণার ও স্মৃতি লাইব্রেরী” প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। স্থান হিসেবে নির্ধারন করেন বরিশাল সরকারী পলিটেকনিক ইনষ্টিটিউট রোডে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে নিচ তলার একটি সুবিশাল কক্ষ। তিনি তার মনের মাধুরী দিয়ে সাজিয়েছেন এ “বঙ্গবন্ধু কর্ণার ও স্মৃতি লাইব্রেরী”। লাইব্রেরীর সংলগ্ন বাংলাদেশ শিশু একাডেমী ছাড়াও চার পার্শে রয়েছে বরিশাল সরকারী পলিটেকনিক্যাল ইনষ্টিটিউট, বরিশাল সরকারী টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ, আলেকান্দা সরকারী কলেজ, বরিশাল কলেজিয়েট স্কুল এন্ড কলেজ, বরিশাল সরকারী মহিলা পলিটেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ, নব আদর্শ বালক উচ্চ বিদ্যালয়, হালিমা খাতুন বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় ইত্যাদি শিক্ষা ও সংস্কৃতি কেন্দ্র। তাই স্থান নির্বাচনে “বঙ্গবন্ধু কর্ণার ও স্মৃতি লাইব্রেরী” স্থাপনের তাৎপর্য ও গুরুত্ব অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে এ সকল প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদেরকে এ লাইব্রেরীর মাধ্যমে বই পাঠে আগ্রহী করে গড়ে তোলার জন্য কিছু কর্মসূচি নেয়া হলে শিক্ষার্থী ও স্থানীয় যুব সমাজের মধ্যে মাদক ও হতাশাগ্রস্ত জীবনের পরিবর্তে জ্ঞানের আলোর দ্যূতি ছড়িয়ে পুলিশ সুপারের এ মহতি উদ্যোগ্ আরও কার্যকর ও সফল হবে।

এক সাক্ষাতকারে বরিশাল জেলা পুলিশ সুপাার ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে দেশ স্বাধীন হতো না, আর দেশ স্বাধীন না হলে আমি পুলিশ সুপার হতে পারতাম না। কারন পশ্চিমা শোষক গোষ্ঠি বাঙ্গালী জাতিকে কোন উচ্চ পদে নিয়োগ দিতেন না, শুধু কি তাই সব কিছুতে ছিল তাদের বৈষম্য। তাই বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন “দাবায়ে রাখতে পারবানা”, বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু নির্মাণ করে তা প্রমান করে দিয়েছেন। এভাবে সারা দেশে পুলিশ ষ্টেশনে যদি “বঙ্গবন্ধু কর্ণার ও স্মৃতি লাইব্রেরী” স্থাপিত হয় তবে পুলিশের এ প্রচেষ্টা সার্থক হবে। উর্ধতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ও সহযোগিতা নিয়ে আমি তা বাস্তবায়নে সচেষ্ট থাকবো।

আমরাও আশা করি পুলিশ সুপার ওয়াহিদুল ইসলাম বরিশালে আজ যার সুচনা করলেন সেই “বঙ্গবন্ধু কর্ণার ও স্মৃতি লাইব্রেরী” আলোর দ্যূতি ছড়াক বরিশালের দক্ষিনাঞ্চল থেকে দেশের সর্বত্র সবখানে।