বিএনপি-জামায়াতকে বয়কট করার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এরা পরাজিত শক্তির দালাল, এদের না বলুন। এদের বাংলাদেশে রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
বিএনপি-জামায়াতকে উদ্দেশ্য করে শেখ হাসিনা বলেন, যারা জ্বালাও-পোড়াও করে, রেল লাইনের ফিশপ্লেট তুলে ফেলে, এরা তো পরাজিত শক্তির দালাল, মনে রাখতে হবে এরা পরাজিত শক্তির দোসর। কাজেই এদের না বলুন।
তিনি বলেন, এদের (বিএনপি-জামায়াত) বাংলাদেশে রাজনীতি করারই কোনো অধিকার নেই। কারণ খুনি, সন্ত্রাসী, জঙ্গি, দুর্নীতিবাজ—এদের বাংলাদেশে কোনো স্থান নেই।
‘এরা ধ্বংস করতে জানে, সৃষ্টি করতে জানে না। এরা মানুষ খুন করতে পারে, মানুষের জীবনে শান্তি-নিরাপত্তা দিতে পারে না। এরা মানুষের সর্বনাশ করতে পারে, মানুষকে উন্নতি দিতে পারে না। কাজেই তাদের থেকে সাবধান। ’
আওয়ামী লীগের লক্ষ্যের কথা জানিয়ে দলটির সভাপতি বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন দেশ, বাংলাদেশের মানুষ তাদের ভোটের অধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পেয়েছে। তারা ভোটের অধিকার প্রয়োগ করবে; তারা শান্তিতে বাস করবে উন্নত জীবন পাবে এটাই আমাদের লক্ষ্য।
তিনি বলেন, আমরা এদেশকে আর কখনো এই পরাজিত শক্তির হাতে তুলে দেব না। বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে চলবে এবং এগিয়ে যাবে জাতির পিতার ক্ষুধা দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা হিসেবে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলবে।
বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলনের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, সারা দেশে তারা অগ্নি-সন্ত্রাস করে যাচ্ছে, তাদের আন্দোলন কী, অবরোধ-হরতাল। তাদের দেখা নেই; কয়েকটা গাড়ি পোড়ানো, মানুষ পোড়ানো, রেল লাইন কেটে দেওয়া, বাস পোড়ানো; এটাই হচ্ছে তাদের হরতাল, এটাই হচ্ছে তাদের আন্দোলন।
তিনি বলেন, তারা নাকি জনগণের স্বার্থে কাজ করে, জনগণের জন্য আন্দোলন করে। তারা নাকি গণতন্ত্র উদ্ধারের জন্য আন্দোলন করবে। আরে গণতন্ত্র বানান করতে পারবে? আর গণতন্ত্র তারা শিখেছে? ওর (বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান) বাপ কি গণতন্ত্র দিয়েছিল? ওটা তো কারফিউ গণতন্ত্র ছিল।
বিএনপি-জামায়াতের বিষয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণ যদি মাঠে নামে এরা হালে পানি পাবে না। কাজেই আমি জনগণের কাছে আহ্বান করবো, সবাইকে সাবধান থাকতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, এখন তাদের নানা রকম চক্রান্তও শুরু হয়েছে। প্রত্যেকটা নির্বাচনের আগেই চক্রান্ত হয়। কিন্তু এদেশের মানুষের শক্তি হচ্ছে বড় শক্তি, আমি যেটা বিশ্বাস করি। সেই শক্তি আছে বলেই আমরা পরপর এক টানা তিনবার ক্ষমতায় আসতে পেরেছি।
দেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত চলছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, যারা হানাদার বাহিনীর দোসর ছিল এরাই তাদের প্রেতাত্মা হয়ে দেশের মানুষের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে মানুষ হত্যা করে যাচ্ছে; হত্যার পরিকল্পনা করছে।
লন্ডনে থাকা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, খালেদা জিয়াকে এখন অনুসরণ করে যাচ্ছে তার ছেলে, যেমন জিয়াউর রহমান তেমন খালেদা জিয়া আর ছেলেও একটা সেই অমানুষ পয়দা করেছে।
তিনি বলেন, (তারেক) রাজনীতি আর করবে না বলে কেয়ারটেকার সরকারের সময় ২০০৭ সালে মুচলেকা দিয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়, এখন বিদেশে বসে হুকুম দিয়ে হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, সে (তারেক) এখন দূরে বসে হুকুম দেয় আর মানুষ পোড়ায়, গাড়ি পোড়ায়। আর অ্যাকসিডেন্ট করে মানুষ মারার পরিকল্পনা করে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে তারা এখন মানুষ মারার পরিকল্পনা করে। যারা মানুষ হত্যা করার পরিকল্পনা করে তারা কোন গণতন্ত্র দেবে!
বামপন্থীদের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের কিছু অতি বামপন্থীরা, তারা এখন ওদের সঙ্গে নেমে পড়েছে। কী রকম আদর্শের বিকৃতি। জামায়াত-শিবির খুনিদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে আমাদের বামপন্থী আদর্শবাদীরা।
আওয়ামী লীগ সরকারের সময়কার বিভিন্ন উন্নয়নের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ থাকলে এদেশের মানুষ সেবা পায়।
টানা তিন মেয়াদে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকায় দেশের উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ আজকে বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। যে বাংলাদেশকে হেয় চোখে দেখা হত। পাকিস্তানিরা বোঝা মনে করত, এটা চলে গেলেই ভালো। আজকে তারা বলে আমাদেরকে বাংলাদেশ বানিয়ে দাও।
সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, লেখক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল, আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য তারানা হালিম, শহীদ বুদ্ধিজীবী সন্তান নুজহাত চৌধুরী প্রমুখ।
সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, উপ-প্রচার সম্পাদক আবদুল আউয়াল শামীম।