ঢাকা, বুধবার ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

বিক্রেতাদের সতর্ক করেই শেষ খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অভিযান

নিজস্ব প্রতিবেদক : | প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার ২৩ জানুয়ারী ২০২৪ ০৪:৫৬:০০ অপরাহ্ন | জাতীয়

চালের দামের লাগাম টেনে ধরতে রাজধানীর বাজারগুলোতে অভিযান পরিচালনা করছে খাদ্য মন্ত্রণালয় ও খাদ্য অধিদপ্তর। তবে সেসব অভিযানে চাল বিক্রেতাদের জরিমানা করতে দেখা যাচ্ছে না।

 

কোনো অনিয়ম পেলে বিক্রেতাদের সতর্ক করে ও পরামর্শ দিয়েই অভিযান শেষ করছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।

মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) সকালেও রাজধানীর কারওয়ান বাজারের নিউ সুপার মার্কেটের পাইকারি চালের বাজারে অভিযান পরিচালনা করেন খাদ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।

 

অভিযানে নেতৃত্ব দেন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মো. লুৎফর রহমান। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মাহমুদা আক্তারসহ খাদ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।

 

সকাল পৌনে ১২টায় শুরু করে দুপুর সোয়া ১টায় অভিযান শেষ করেন কর্মকর্তারা। এ সময় পাইকারি চাল বিক্রি করা পাঁচটি দোকান ঘুরে দেখেন তারা। এসব দোকানে ট্রেড লাইসেন্স না থাকা, নবায়ন না করা, দৃশ্যমান স্থানে মূল্য তালিকা প্রদর্শন না করা, আলাদা আলাদা চালের মূল্য তালিকা না দেওয়াসহ ছোট-খাটো বিভিন্ন অনিয়ম পান কর্মকর্তা। বিক্রেতাদের এসব বিষয়ে সতর্ক করার পাশাপাশি বিভিন্ন পরামর্শ দেন তারা। তবে কাউকেই জরিমানা করা হয়নি।

 

এর মধ্যে মেসার্স বি-বাড়িয়া রাইস এজেন্সি তাদের ট্রেড লাইসেন্স দেখাতে পারেনি। পাশাপাশি দৃশ্যমান স্থানে মূল্য তালিকা প্রদর্শন করেনি দোকানটি। পরে দোকানের স্বত্বাধিকারী মো. নিজামকে এসব প্রয়োজনীয় কাগজ রাখার বিষয়ে সতর্ক করা হয়। পাশাপাশি প্রতিনিয়ত মূল্য তালিকা আপডেটসহ প্রত্যেক ধরনের চালের ওপর আলাদা মূল্য তালিকা দেওয়ার পরামর্শ দেন কর্মকর্তারা।

 

মেসার্স বিসমিল্লাহ রাইস এজেন্সিরও ট্রেড লাইসেন্সের মেয়াদোত্তীর্ণ পাওয়া যায়। তাদেরও এই বিষয়ে সতর্ক করা হয়। তবে মেসার্স জনতা রাইস এজেন্সি, মেসার্স আল-মদিনক রাইস এজেন্সি, মেসার্স কিশোরগঞ্জ রাইস এজেন্সির ট্রেড লাইসেন্স ঠিকঠাক পাওয়া যায়। পরে তাদের নিয়মিত মূল্য তালিকা আপডেট করা, দৃশ্যমান স্থানে সেটি প্রদর্শন করা ও প্রত্যেক ধরনের চালের ওপর মূল্য তালিকা দেওয়ার পরামর্শ দেন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

 

মেসার্স জনতা রাইস এজেন্সির স্বত্বাধিকারী হাজী মো. আবু ওসমান বলেন, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা তাদের মূল্য তালিকা নিয়মিত আপডেট করাসহ প্রতিটি চালের ওপর আলাদা করে মূল্য দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

 

অভিযানের কারণে চালের দাম কমেছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, অভিযানের কারণে চালের বাজার স্থিতিশীল আছে। নতুন করে আর চালের দাম বাড়েনি। বরং বস্তা প্রতি (৫০ কেজি) ২০-৫০ টাকা কমেছে। তবে পরিবহন খরচ বাড়ায় বাজারে চালের দাম আগের মতোই আছে।

 

অভিযান শেষে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মো. লুৎফর রহমান বলেন, আমরা খাদ্য মন্ত্রণালয় ও খাদ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে প্রতিনিয়ত বাজারে অভিযান পারিচালনা করছি। আজ কারওয়ান বাজারে অভিযান পরিচালনা করে দেখছি বিক্রেতারা কত টাকা দিয়ে চাল কিনেছেন এবং কত টাকা দিয়ে চাল বিক্রি করছেন। ক্রয় ও বিক্রয়ের মধ্যে ব্যবধানটা সহনীয় এবং যৌক্তিক কিনা সেটি জানার জন্য আমরা অভিযান পরিচালনা করেছি। অভিযানে আমরা আরও দেখেছি প্রতিটি দোকানে যত ধরনের চাল বিক্রি হচ্ছে সেসব চালের সঠিক মূল্য টানানো হয়েছে কিনা। কত তারিখে চাল কেনা হয়েছে এবং কত তারিখে বিক্রি হচ্ছে, খরচসহ সেসব বিষয় যৌক্তিক কিনা তাও আমরা দেখেছি।

 

তিনি আরও বলেন, অভিযানে আমরা প্রতিটি দোকানের কাগজপত্র যাচাই করেছি। দোকানের লাইসেন্স ঠিক আছে কিনা তা যাচাই করেছি। কোথাও ভুল ত্রুটি পাওয়া গেছে। সেসব বিষয়ে দোকানিদের আমরা সতর্ক করেছি। অভিযানে আমরা ব্যবসায়ীদের বলেছি, তারা যদি ব্যবসা করতে চায়, তাহলে যেন তাদের সব কাগজপত্র সঠিক থাকে। মূল্য তালিকা সচ্ছভাবে লেখার জন্য ব্যবসায়ীদের আমরা নির্দেশনা দিয়েছি।

 

বাজার মনিটরিংয়ের ফলে চালের দাম নিম্নমুখী দাবি করে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব বলেন, আমাদের মনিটরিংয়ের ফলে বাজারে চালের দাম কিছুটা নিম্নমুখী। প্রতিটি বাজারেই চালের দাম কিছুটা কমেছে।

 

কম দামে কিনে বেশি দামে চাল বিক্রি হচ্ছে কিনা জানতে চাইল তিনি বলেন, এমন কিছু আজকে পাওয়া যায়নি। মোটামুটি যৌক্তিক দামে চাল বিক্রি হচ্ছে। কিছু দোকানে কিছুটা দামের তারতম্য দেখা গেছে। দামের বিষয়ে আমরা ব্যবসায়ীদের সতর্ক করেছি, যাতে তারা দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখেন।  

 

বেশ কিছু দিনের অভিযানে লক্ষ্য করা যাচ্ছে দামের তারতম্য পাওয়া গেলেও ব্যবসায়ীদের শুধু সতর্ক করা হচ্ছে। এর পরেও যদি ব্যবসায়ীরা সতর্ক না হয় তাহলে খাদ্য মন্ত্রণালয় ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেবে জানতে চাইলে উপ-সচিব বলেন, যদি তারা সতর্ক না হয় তাহলে অবশ্যই আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব। চাল বিক্রির ক্ষেত্রে যেসব বিধিবিধান আছে, সেগুলো যদি ব্যবসায়ীরা না পালন করেন, তাহলে আমরা অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যাব। নিয়ম মেনে ব্যবসা করার জন্য ব্যবসায়ীদের সতর্ক করে উৎসাহিত করার চেষ্টা করছি। তার পরেও যদি ব্যবসায়ীরা বড় কোনো অনিয়ম করেন তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেব।

 

গত শুক্রবারও (১৯ জানুয়ারি) কারওয়ান বাজারের নিউ সুপার মার্কেটসহ পাইকারি চালের বাজারে অভিযান পরিচালনা করে খাদ্য মন্ত্রণালয় ও খাদ্য অধিদপ্তর। ওই দিনও চাল বিক্রেতাদের সতর্ক করে অভিযান শেষ করেন কর্মকর্তারা।