ঢাকা, মঙ্গলবার ৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ২২শে মাঘ ১৪৩১

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরের ঐতিহ্যবাহী লালি গুড়: প্রাচীন পদ্ধতিতে তৈরি সুস্বাদু আকর্ষণ

তৌহিদুর রহমান নিটল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া | প্রকাশের সময় : বুধবার ১৫ জানুয়ারী ২০২৫ ১২:৪৭:০০ অপরাহ্ন | দেশের খবর

শীতের সকালে চিতই পিঠার সাথে মিষ্টি লালি গুড়ের স্বাদ যেন বাংলার ঐতিহ্যের গল্প শোনায়। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে এখনো প্রাচীন পদ্ধতিতে তৈরি হচ্ছে এই সুস্বাদু লালি গুড়, যা স্থানীয়দের কাছে শুধু খাবার নয়, বরং শীতের অন্যতম আকর্ষণ।

বিজয়নগর উপজেলা, যা তার কৃষি সমৃদ্ধির জন্য পরিচিত, সেখানে আখের রস থেকে তৈরি এই লালি গুড়ের ঐতিহ্য বহু পুরনো। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাইকারি বিক্রির মাধ্যমে এই লালির সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয়ভাবে তৈরি এই ঘন তরল গুড়, যা লালি নামে পরিচিত, শীতের পিঠা-পুলি আর পায়েসের স্বাদকে বাড়িয়ে তোলে বহুগুণ।

বিজয়নগরের প্রতিটি কৃষি পরিবার প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে শীত মৌসুমে লালি তৈরি করে আসছে। লালির বিশেষত্ব হলো এর ঘন তরল গঠন এবং মিষ্টতার অনন্য ভারসাম্য। এটি শুধু পিঠা-পুলির জন্য নয়, চিড়া-মুড়ির সঙ্গেও সমানভাবে জনপ্রিয়। শীতের দিনে গ্রামীণ বাড়ির উঠানে লালির গন্ধ যেন উৎসবের আমেজ নিয়ে আসে।

স্থানীয় কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে বিজয়নগরে প্রায় ২৫ হেক্টর জমিতে আখ চাষ করা হয়েছে। এ জমি থেকে প্রায় ২,৭০০ মেট্রিক টন আখ উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে। এর থেকে প্রায় ৯০ মেট্রিক টন লালি তৈরি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যা বাজারে আনুমানিক ৭০ লাখ টাকায় বিক্রি হবে।

শীত মৌসুমে লালি তৈরি স্থানীয় কৃষকদের জন্য একটি অতিরিক্ত আয়ের উৎস। প্রায় চার মাস ধরে তারা লালি উৎপাদন করে যা পরিবারগুলোর অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। স্থানীয় কৃষকরা জানিয়েছেন, আখ চাষ এবং লালি তৈরির এই প্রক্রিয়া কেবল অর্থ উপার্জনের জন্য নয়, এটি তাদের পূর্বপুরুষদের ঐতিহ্যকে ধরে রাখার একটি মাধ্যম।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাব্বির আহমেদ বলেন, “আমরা স্থানীয় কৃষকদের আখ চাষে উৎসাহিত করছি। আশা করি, এই মৌসুমে লালির বাজারজাত থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ আয় হবে। এটি কেবল বিজয়নগরের ঐতিহ্যকে জাগ্রত রাখছে না, বরং কৃষকদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে সাহায্য করছে।”

লালির স্বাদ এবং ঐতিহ্য ধরে রাখতে স্থানীয় কৃষকরা সচেষ্ট থাকলেও, আধুনিক প্রযুক্তি এবং প্রশিক্ষণের অভাব তাদের কিছুটা পিছিয়ে দিচ্ছে। তবে কৃষি বিভাগের সহায়তায় এই পণ্যটির উৎপাদন আরও বাড়ানো সম্ভব। একইসাথে, ব্র্যান্ডিং এবং প্যাকেজিংয়ের মাধ্যমে লালিকে আন্তর্জাতিক বাজারেও জনপ্রিয় করা যেতে পারে।