ঢাকা, শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ই বৈশাখ ১৪৩১

ভালোবাসা দিবস ও কিছু কথা

Author Dainik Bayanno | প্রকাশের সময় : শুক্রবার ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ ০৭:৩১:০০ অপরাহ্ন | সাহিত্য

এবারের ১৪ ফেব্রুয়ারি ছিল একাধারে ভালোবাসা দিবস, পহেলা ফাল্গুন বা বসন্তের আগমনী দিন ও বিদ্যা দেবীর আরাধনার দিন তথা সরস্বতী পূজার দিন। বর্তমান প্রজন্মের কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণী ও যুবক-যুবতীরা হাল ফ্যাশানের যুগের সাথে তাল মিলাতে ডিজিটাল কায়দা-কানুন নিয়ে ওঠে পড়ে লেগেছে। পক্ষান্তরে আদিমতার নেশার টানে বর্বরতাকেই আঁকড়ে ধরছে। ভালোবাসা পূত ও পবিত্র। এ ভালোবাসার নামে ভিন্ন ধারার ভালোবাসার সাথে গোল পাকাচ্ছে তারা। মায়ের ভালোবাসা আর বোনের ভালোবাসা এক নয়। আবার বান্ধবীর ভালোবাসা আর প্রেয়সীর ভালোবাসাও এক নয়। কিন্তু এ যুগের বিশ্ব প্রেমিক-প্রেমিকারা ভালোবাসা বলতে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি যৌবনের উন্মোদনার টানকেই বুঝছে। তাই তারা ওই ধাচের ভালোবাসাকেই প্রাধান্য দিচ্ছে। পক্ষান্তরে ভালোবাসা বলতে কামনা, লালসা ও শিহরণ জাগানো অনুভূতিতেই বিভোর। তাদের চোখে-মুখে শুধু ভালোবাসার মোহে ভালোলাগার উষ্ণ আলিঙ্গন। আর যাই হোক- এ ভালোবাসা আর ভালো লাগায় সংসার, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র ও ধর্মসহ সকল দিকই অন্ধকারাচ্ছন্ন। এতে কোন সন্দেহ নেই।

৪৯৬ সালে সর্বপ্রথম রোমনরা ভ্যালেন্টাইনস ডে উদযাপন করেছিল। এটি রোমানদের প্রাচীনকালের ঐতিহ্য। খ্রিস্টীয় তৃতীয় শতাব্দীতে সেন্ট নামে রোমের একজন পুরোহিত ছিলেন। তারা নাম ভ্যালেনটাইন। সম্রাট দ্বিতীয় ক্লডিয়াস ২০০ খিস্টাব্দে রোমে বিবাহ প্রথা নিষিদ্ধ করেছিলেন। তার মতে, যুবকরা যদি বিয়ে করে সংসারী হয়, তবে যুদ্ধ করবে কারা? তিনি মনে করেছিলেন বিবাহিত পুরুষরা ভালো সৈনিক হয় না। তাই তিনি ঘোষণা দেন, আজ থেকে কোন যুবক বিয়ে করতে পারবে না। ভ্যালেনটাইন ছিলেন অসীম সাহসী। সম্রাট ক্লডিয়াসের এ ঘোষণা তার কাছে অন্যায় মনে হয়েছিল। ঘোষণার প্রতিবাদ করেন ওই যুবক। তাই তিনি নিয়ম না মেনে গোপনে বিয়ের ব্যবস্থা করেন। সম্রাট ক্লডিয়াস এ খবর জানতে পেরে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। তার আদেশে ভ্যালেনটাইনকে বন্দী করে কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়। তাকে মৃত্যুদন্ড দেন তিনি। ভ্যালেনটাইন কারাগারে থাকাকালে কারাপ্রধানের মেয়ের প্রেমে পড়েন। ১৪ ফেব্রুয়ারি ছিল তার মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার দিন। এ দিন সকালে তার মাথা কেটে ফেলা হয়। তাকে মৃত্যুদন্ড দেয়ার জন্য যখন নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তখন ভালোবাসার মেয়েটির উদ্দেশ্যে একটি প্রেমপত্র পাঠান তিনি। তাতে লেখা ছিল- ‘তোমার ভ্যালেন্টাইনের পক্ষ থেকে।’ ভালোবাসার জন্য ভ্যালেন্টাইনের আত্মত্যাগকে স্মরণ করতে তখন থেকেই এ দিনটিকে ভ্যালেন্টাইন দিবস হিসেবে পালন করা হয়। অপরদিকে বসন্তকালে বিশ্বজুড়ে পালিত হয় ভালোবাসা দিবস। যা ভ্যালেন্টাইন ডে নামে পরিচিত। প্রিয় পাঠকদের উদ্দেশ্যে বলছি, ভেবে দেখুন তো- ভ্যালেন্টাইন দিবসের মূল বিষয় ও উদ্দেশ্যের সাথে বর্তমান যুগের ভালোবাসা দিবসের মূল বিষয় ও উদ্দেশ্য এক কি না? বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অমর বাণী- “বিদ্যা সহজ, শিক্ষা কঠিন। বিদ্যা আবরণে আর শিক্ষা আচরণে।” আমিও আমার ভালোবাসার মানুষটিকে ১৪ ফেব্রুয়ারি একটি ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েছি। ‘পারি- আজ ভালোবাসার দিন। এ ক্ষণে বসন্তও এসেছে দুয়ারে। বিদ্যার দেবীও সজাগ। এ দিনে ভুতু, ভুতু বুবু, বুবু, ছোট বুবু, কনকের আম্মা ও ছোট বউকে বেহাল্লাপনা বিবর্জিত অকৃত্রিম, নিখাদ, নির্ভেজাল ও নিরেট ভালোবাসা। তাই- ভালোবাসি! ভালোবাসি!! ভালোবাসি তোমাকে!!!’

 

কামরুল হাসান: 

(লেখক: সাংবাদিক ও ডিরেক্টর- বাংলাদেশ সেন্ট্রাল প্রেস ক্লাব, ঢাকা এবং সাবেক শিক্ষক ও এনজিও কর্মকর্তা)