ঢাকা, শনিবার ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ২৮শে পৌষ ১৪৩১

ভোটের দাবিতে মাঠে নামার প্রস্তুতি বিএনপির, নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে

আহমেদ শাহেদ | প্রকাশের সময় : শনিবার ১১ জানুয়ারী ২০২৫ ০৩:২২:০০ অপরাহ্ন | দেশের খবর

বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বর্তমানে অত্যন্ত উত্তপ্ত, বিশেষত নির্বাচন নিয়ে বিতর্কের কারণে এ পরিস্থিতি চলমান। সরকার, বিএনপি ও অভ্যুত্থানের অংশীজনদের মধ্যে মতপার্থক্য বাড়ছে। নির্বাচনের সময়সূচি, ধরণ এবং সাংবিধানিক কাঠামো নিয়ে এই মতবিরোধ এখন তুঙ্গে পৌঁছেছে। সম্প্রতি অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, আগামী বছরের প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। তবে সঠিক সময় এবং পদ্ধতি নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে এখনও কোনো চূড়ান্ত ঘোষণা আসেনি, যা রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করছে।

সরকারের পক্ষ থেকে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন আগে আয়োজনের চিন্তা চলছে বলে জানা গেছে। সরকারের এই পরিকল্পনার পেছনে প্রধান কারণ হিসেবে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং ভোটারের মধ্যে আস্থার সৃষ্টি করতে চাইছে তারা। তবে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো ভিন্নমত পোষণ করছে।

আলোচনার মধ্যে উঠে এসেছে যে, সরকার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন প্রথমে আয়োজন করলে জাতীয় নির্বাচনের আগে কোনো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। এমনকি জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচন কোনটি আগে হবে, এই বিষয়ে দলের ভেতরে অস্থিরতা সৃষ্টি হচ্ছে।

অভ্যুত্থানের পর গঠিত জাতীয় নাগরিক কমিটি দেশব্যাপী সাংবিধানিক সংস্কারের পক্ষে একটি শক্ত অবস্থান নিয়েছে। তারা বিশেষভাবে গণপরিষদ নির্বাচন ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন আগে আয়োজনের দাবি জানিয়েছে। তাদের মতে, এই দুটি নির্বাচন সাংবিধানিক কাঠামো পুনর্গঠনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যা বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল করতে সহায়তা করবে। তাদের দাবি, দেশের বর্তমান সাংবিধানিক ব্যবস্থাকে সংশোধন করেই আগামী নির্বাচনগুলো আয়োজন করা উচিত।

এদিকে, বিএনপি সরকারের নীতি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে। দলটির নেতারা আশঙ্কা করছেন যে, সরকার তাদের পুরনো 'মাইনাস টু' ফর্মুলা প্রয়োগ করতে পারে, যার ফলে বিএনপির নেতৃত্ব থেকে কোনো গুরুত্বপূর্ণ নেতা বাদ পড়তে পারে। এই পরিস্থিতি বিএনপির মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে, এবং তারা শিগগিরই মাঠে নেমে আন্দোলন গড়ে তুলবে বলে জানিয়েছে।

নির্বাচন নিয়ে এইসব বিতর্কের মধ্যে দেশের রাজনীতিতে উত্তাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে ছাত্রনেতারা, যারা জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়েছিল, তারা সরকার থেকে একটি শক্তিশালী সংস্কারের দাবিতে সোচ্চার হয়ে উঠেছে। তারা মনে করেন, সাংবিধানিক সংস্কারের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থা দূর করতে হবে, এবং এভাবেই দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটকে পরিবর্তন করা সম্ভব।

সামগ্রিকভাবে, রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনা বেড়েই চলছে এবং বিভিন্ন পক্ষ থেকে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে একটি রাজনৈতিক সমাধান চাওয়ার কথা বলছে। তবে সেই সমাধান কি আসবে, এবং সরকার এবং রাজনৈতিক দলগুলো এই সংকট কিভাবে সমাধান করবে, তা এখনো অজানা।

নির্বাচন নিয়ে সৃষ্ট বিতর্ক এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মতপার্থক্য যেন কোনোভাবেই সমাধান হচ্ছে না। সরকারের সিদ্ধান্ত এবং বিএনপির অবস্থান নিয়ে যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা সামনে আরও উত্তপ্ত হতে পারে। এই পরিস্থিতিতে, রাজনৈতিক অস্থিরতা কি শেষ পর্যন্ত কাটানো সম্ভব হবে, তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তবে সব পক্ষের সম্মিলিত চেষ্টায় যদি সঠিক সমাধান পাওয়া যায়, তাহলে দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ আরো স্থিতিশীল হতে পারে।