প্রধান প্রজনন মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চল তথা বরিশালের নদ-নদীতে ডিম পাড়ার মতো ইলিশের দেখা এখনও মেলেনি। তবে চলমান নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই মা ইলিশের আগমন ঘটবে নদীতে এবং নিয়মানুযায়ী তারা ডিমও ছাড়বে বলে জানিয়েছে মৎস্য বিভাগ।
মা ইলিশ রক্ষার অভিযানিক দলের সদস্যরা বলছেন, টানা কয়েকদিনের অভিযানে নদীতে গিয়ে যেটা বোঝা গেছে- তাতে এখনও ডিমওয়ালা মা ইলিশের আগমন তেমনভাবে ঘটেনি। ঘটলে উদ্ধার হওয়া অবৈধ জালের সাথে প্রচুর ডিমওয়ালা মা ইলিশের দেখা মিলতো। এখন নদী থেকে উদ্ধার হওয়া অবৈধ জালের সাথে যা পাওয়া যাচ্ছে তার বেশিরভাগই আকারে ছোট ও ডিম হয়নি এমন মাছ।
মৌসুমি জেলে যারা অভিযানের মধ্যে নদীতে মাছ শিকারে গিয়ে ধরা পড়েছেন তারাও বলছেন, মা মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। যে অল্প কিছু ইলিশ তারা পেয়েছেন- আকারে ছোট।
নগরের খালেদাবাদ কলোনি এলাকার বাসিন্দা সুমন খান বলেন, নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় চাঁদমারি কলোনির এক যুবক মেডিকেল সংলগ্ন এলাকায় কিছু ইলিশ মাছ বিক্রির জন্য নিয়ে এসেছিল। ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয় সে মাছ আকারে ছিল জাটকার সমান। এর আগে যখন নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল তখন লুকিয়ে যারা স্থানীয় নদী থেকে ধরে ইলিশ বিক্রি করেছিলেন- সেগুলোর মধ্যে ডিমওয়ালাও ছিল।
ত্রিশ বছর ধরে নদী ও সাগরে ইলিশ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন জেলে মোহাম্মদ আলী তিনি বলেন, আশ্বিন অমাবস্যার পর এটাই মা ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুম। ডিম তারা ছাড়বেই আর এজন্য তারা সাগর থেকে নদীতে আসবেই।
তিনি বলেন, সারাবছর ধরেই মা ইলিশ ডিম ছাড়ে, তবে এসময়টা একেবারে ডিম ছাড়ার জন্য মোক্ষম। বেশিরভাগ মা ইলিশই এ সময়ে নদীতে এসে ডিম ছেড়ে আবার সাগরে চলে যায়। আর ডিম যখন ছাড়বে তখন মাছগুলো সাঁতার কাটতে থাকবে। সে হিসেবে একটি মা ইলিশ অনেকটা পথ জুড়ে চলতে চলতে ডিম ছাড়ে। আর সম্পূর্ণ পরিপক্ব ডিমগুলো সরাসরি নদীর তলদেশে গিয়ে পড়ে এবং প্রাকৃতিকভাবে ফুটে বাচ্চা হয়। বাচ্চাগুলো বড় হয়ে কিছু নদীতে থেকে যায় আর কিছু সাগরে চলে যায়।
মৎস্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ নাসির উদ্দীন বলেন, নদীতে বিভিন্ন স্তরে মাছ থাকে। অভিযানে আমরা যেসব জাল উদ্ধার করছি তা খুবই স্বল্প দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের। ফলে তাতে যে সব স্তরের মাছ বাধবে এমনটা নয়। আবার প্রচুর ইলিশ বাধবে এমনটাও নয়। অভিযানে উদ্ধার হওয়া জালে যে ইলিশ পাচ্ছি, তাও জীবিত থাকায় ছেড়ে দেওয়া হয়ে থাকে।
তিনি বলেন, টানা কয়েকদিনের অভিযানে নদীতে গিয়ে মা ইলিশের ধরার পড়ার বিষয়টি তেমনভাবে পরিলক্ষিত হয়নি। তবে নদী থেকে উদ্ধার হওয়া স্বল্প দৈর্ঘ্য প্রস্থের জালের আয়ত্বের বাহিরে বিশাল এলাকাজুড়ে মাছের বিচরণ থাকায় হিসেব কষে কিছু বলাটাও কঠিন। তবে সামনে পূজার শেষ দিকে ও নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার আগে ভালো সময় রয়েছে। আর সেই সময়টাতেই মা ইলিশ নদীতে আসবে ডিম ছাড়ার জন্য।
মৎস্য কর্মকর্তা (ইলিশ) বিমল চন্দ্র দাসও বলছেন একই কথা। তিনি বলেন, সামনে মা ইলিশের ডিম ছাড়ার জন্য ভালো উপযোগী সময় রয়েছে। ফলে নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার আগে দুর্গাপূজার মাঝের সময় থেকেই ডিম ছাড়বে মা ইলিশ। তখন পূর্ণিমার কারণে নদীতে পানিও বেশি থাকবে। আর সে সময়টায় বৃষ্টিও থাকার কথা রয়েছে। তাই নদীর পানির তাপমাত্রাও সঠিক থাকবে। তখন নদীতে মা ইলিশের অবাধ বিচরণ নিশ্চিত করা গেলে নির্বিঘ্নে ডিম ছাড়বে।
মৎস্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ নাসির উদ্দীন বলেছেন, ইলিশ এমনিতেই সারাবছর ধরে ডিম দেয়, তবে এ সময়টাকে প্রধান প্রজনন মৌসুম বলা হয়। আর প্রধান প্রজনন মৌসুমকে হিসেবে করে বৈজ্ঞানিক উপায়ে নিষেধাজ্ঞার সময়টা নির্ধারণ করা হয়। নিষেধাজ্ঞার সময়ের মাঝেই ইলিশ ডিম পাড়বে। সেটা শুরুতে হোক কিংবা শেষের দিকে হোক। তাই নিষেধাজ্ঞার গোটা সময়টা নদীতে নিরাপদ রাখতে মৎস্য বিভাগের সাথে কোস্টগার্ড, পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে।