ঢাকা, শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ই বৈশাখ ১৪৩১

মা-বাবা: বোঝা নয় বরং আশির্বাদ

কামরুল হাসান, জামালপুর : | প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার ৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ ০৪:০৫:০০ অপরাহ্ন | সাহিত্য

আজ যারা শিশু। ভবিষ্যতে তারাই একদিন শিশুর পিতা হয়। অনাদিকাল থেকে এমনি ধারা চলে আসছে। প্রত্যেকটি মানুষ পিতা হওয়ার আনন্দ উপভোগ করতে চায়। পিতা হওয়ার আনন্দে আত্মহারা মানুষ তার সন্তানকে সাধ্যাতীত ভালো রাখতে চায়। পাশাপাশি সত্যিকারের মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করে। মা-বাবা তাদেও সন্তানের জন্য সকল দুঃখ-কষ্ট সহ্য করতেও দ্বিধা করে না। সেই সাথে সন্তানের ভবিষ্যতের কথা ভেবে সর্বদা ব্যতিব্যস্ত থাকে। এক সময় সব মা-বাবাই সন্তানের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। তারা চায়, তাদের সন্তান অন্তত দুবেলা-দুমুঠো খাবার তুলে দিবে। ক্ষেত্র বিশেষে এই কামনা করে যে, আপাতত তাদের সন্তান কখনো দুর্ব্যবহার বা অত্যাচার-নির্যাতন করবে না। কিন্তু- বিধি বাম হলে যা হয়! গত ২৬ জানুয়ারির দৈনিক দেশ রূপান্তর পত্রিকায় একটি সংবাদ চোখে পড়ে। সংবাদের বিষয় ছেলে বাবাকে ভরণপোষণ বা খরপোষ না দিয়ে বরং নির্যাতন করে। বাবার অভিযোগে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠায়। ঘটনাটি ঘটেছে জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার ঝাউগড়া ইউনিয়নের চররুহিলী গ্রামে। ছেলে হাবিব শেখ, পিতা- তোফাজ্জল হোসেন, মাতা- হাজেরা বেগম। ছেলে মানে কু-পুত্র হাবিব শেখ অনেক দিন ধরে তার বাবা-মাকে ভরণপোষণ দেয় না। ফলে তারা মানবেতর জীবন যাপন করে আসছিল। গত বুধবার রাতে মা-বাবা গুণধর পুত্রকে ভরণপোষণের জন্য চাপ দেয়। উল্টো ছেলেই বাবা-মাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়ার হুমকি দেয়। পাশাপাশি টিনের ঘরের বেড়া ভাঙচুর করে। বাবা এতে বাধা দিলে ওই ছেলে বাবাকে লাঠি দিয়ে আঘাত করে। এ বিষয়ে অভিযোগ পেয়ে মেলান্দহ থানার পুলিশ রাতেই ছেলে হাবিব শেখকে গ্রেফতার করে। পরদিন সকালে তাকে জেলহাজতে পাঠায়। অপরদিকে সম্প্রতি ময়মনসিংহ জেলার ফুলপুর উপজেলাধীন ছনধরা ইউনিয়নের চিকনা গ্রামের আব্দুল খালেক তালুকদার বছর পাঁচেক আগে মারা যান। সে সময় তিনি ৩ স্ত্রী, ৫ মেয়ে ও ৪ ছেলেসহ প্রায় ২৬ একর জমি রেখে যান। তার এক স্ত্রী লাইলী বেগম ওয়ারিশ হিসেবে স্বামীর সম্পত্তির হিস্যা মোতাবেক প্রাপ্ত জমি দাবি করায় সৎপুত্র মাসুদ তালুকদারসহ অন্য ছেলেরা তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেন। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী তার সন্তানদের নিয়ে মানববন্ধন করে ইউএনও’র নিকট স্মারকলিপিও জমা দেন। এ ছাড়া গত ৩১ জানুয়ারি জামালপুর সদর উপজেলার মেষ্টা ইউনিয়নের হাসিল ফকির পাড়ার কুলাঙ্গার ছেলে জামাল উদ্দিন জমি লিখে না দেয়ায় তার ৮০ বছরের বৃদ্ধা মা জহুরা বেগমকে লাথি মেরে পুকুরে ফেলে দেন। তারপর লাঠি দ্বারা আঘাতও করা হয়েছে। এ বিষয়ে সদর থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে। অথচ ধর্মীয় দৃষ্টিতে মা-বাবা হলো আল্লাহর বিশেষ নিয়ামত। মা-বাবা সন্তানের জন্য শ্রেষ্ঠ নিরাপদ স্থান। আল্লাহ যদি তার পরে অন্য কাউকে সিজদা করতে হুকুম দিতেন, তাহলে ছেলেদেরকে পিতা আর মেয়েদেরকে তার স্বামীকে সিজদা করার হুকুম দিতেন। মায়ের পদতলে সন্তানের বেহেশত। আবার পিতার সন্তুষ্টিতেই আল্লাহ সন্তুষ্ট। তদ্রƒপ  মায়ের নেক দু’আ বিফলে যায় না। যার মা-বাবা নেই, তার মতো অভাগা দুনিয়াতে আর কেউ নেই। তাই প্রত্যেকেরই উচিত মা-বাবার সাথে সদাচরণ করা। তাদেরকে খুশি রাখা। পাশাপাশি তাদের সকল চাওয়া-পাওয়া পূরণ করা। আসুন আরও বেশি করে সবাই মা-বাবার খেদমত করি। দু’জাহানের শান্তির ফয়সালা করি।

 

কামরুল হাসান:

(লেখক: সাংবাদিক ও ডিরেক্টর- বাংলাদেশ সেন্ট্রাল প্রেস ক্লাব, ঢাকা এবং সাবেক শিক্ষক ও এনজিও কর্মকর্তা)