- বাড়ছে মুলতবী মামলা
- আসামীরা ধরা ছোঁয়ার বাইরে
- দীর্ঘসময় হয়রানীতে থানা পুলিশ ও মামলার বাদী
এ্ই বছরের ফেব্রুয়ারী মাস পর্যন্ত চট্টগ্রাম জেলা ও সিএমপি সুত্রে জানা যায় শুধু এমসির জন্য নগর থানাগুলোতে ২৫০টি মামলা আর পোষ্ট মর্টেমের জন্য ৪৭টি, ডিএনএর জন্য ৫৫০টি মুলতবী মামলায় পরিণত হয়েছে। সেই সাথে চট্টগ্রাম জেলার থানাগুলোতে ডিএনএ রিপোর্টের জন্য ৮৬টি মামলা ও পোষ্ট মর্টেম বা ময়না তদন্তের জন্য ২৯টি ও এমসির জন্য অনেকগুলো মামলা মুলতবীতে পরিণত হয়েছে।
জানা যায়, নির্যাতন, খুন, মাইরধর ও শনাক্তকরনের মামলাগুলোতে সত্যতা যাচাইয়ে এমসি(মেডিকেল সার্টিফেকেট), পোষ্টমর্টেম(ময়নাতদন্ত) ও ডিএনএ (ডি-অক্সিরাইবো নিউক্লিক অ্যাসিড) রিপোর্টের জন্য আদেশ দেন আদালত। অনেক সময় আদালত মামলা আমলে নিতেও এই সংক্রান্ত কাগজপত্র দিতে হয়। কিন্তু এসব রিপোর্ট পেতে অনেক বেগ পেতে হয় থানাকে। যার ফলে মামলার কার্যক্রম এগিয়ে নেয়া যায়না। জানা যায়, মেট্রো ও জেলার থানা গুলোতে আসা এসব মামলার এমসি, পোষ্টমর্টেম ও ডিএনএ রিপোর্ট পেতে দীর্ঘসময় অপেক্ষা করতে হয়। এসব রিপোর্ট পেতে অনেক বেগ পেতে হয় মামলার ‘আইও’ কে। অনেক সময় বাদীপক্ষ দোষ দেয় থানা বা আইওকে। তারা মনে করে পুলিশের অসচেতনতা বা ম্যানেজ হওয়ায় এই রিপোর্ট পেতে দেরী হচ্ছে। কিন্ত মেডিকেল এমসি পেতে দেরী হওয়া বা পোষ্টমর্টেমের রিপোর্ট পেতে দেরী হওয়ার জন্য বা ডি এন এ পরীক্ষার রিপোর্ট দিতে মুলত ফরেনসিক বিভাগ ও সিআইডি ফরেনসিক ল্যাব। গত বছর ডিসেম্বরের ৫ তারিখ ৫৫ বছর বয়সী হাটহাজারীর এক বৃদ্ধ মোহাম্মদ সোলায়মান বিষ খেয়ে মারা যায়। এই মৃত্যু নিয়ে রয়েছে অনেক সন্দেহ। পত্রিকায়ও নিউজ হয়েছে। থানায় জানা যায়, বৃদ্ধ সোলায়মানের বিষ খেয়ে মৃত্যু নিয়ে একটি ইউডি মামলা হয়। মামলাটি পোষ্ট মর্টেম রিপোর্টের জন্য অপেক্ষায় আছে। রিপোর্ট পেলেই মুল ঘটনা বুঝে তদন্তে এগোনো বা মামলার পক্রিয়ায় যাবেন আই,ও। আজো পাইনি সেই পোষ্টমর্টেম রিপোর্ট। এইভাবে পোষ্টমর্টেমের দীর্ঘসুত্রিতায় অনেক মামলা থানায় ঝুলে থাকে। রিপোর্টের দীর্ঘসুত্রিতায় প্রকৃত অপরাধীরা থাকে ধরাছোাঁয়ার বাইরে। এগুনো যায়না তদন্ত। হয়না নিয়মিত মামলা। এই নিয়ে একাধিক তদন্তকারী আই,ও বলেন, আমরা রিপোর্টের জন্য বারবার যাই। অনেক সময় রিপোর্ট দিতে দেরী হলে মামলাটি নিয়ে আগানো যায়না। অপরদিকে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য নমুনা জমা দেয় পুলিশ। জানা যায়, ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদন বছরের পর বছর ধরে হাতে পাননা মামলা আইও। জানা যায়, মামলা দীর্ঘায়ীত হতে হতে মুলতবী রাখা হয়। জেলা সুপার কার্যালয় সুত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম জেলার বহু মামলার তদন্ত শেষ করতে পারছে না পুলিশ। সারা দেশের যেসব মামলায় ডিএনএ পরীক্ষার দরকার হয়, সেগুলোর নমুনা পরীক্ষা হয় ঢাকার দুটি ল্যাবে। এর ওপর সংশোধিত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে অভিযুক্ত ব্যক্তি এবং অপরাধের শিকার ব্যক্তির ডিএনএ পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সে কারণে ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদনের জন্য মামলার তদন্ত আটকে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, ডিএনএ প্রতিবেদনের জন্য মামলাগুলো ১ থেকে ৪ বছর পর্যন্ত অপেক্ষায় আছেন অনেক তদন্ত কর্মকর্তা। এর মধ্যে হত্যা ও ধর্ষণের ঘটনাও রয়েছে। ডিএনএ প্রতিবেদন না পাওয়ায় সন্দেহভাজন অনেকেই দীর্ঘদিন কারাগারে আটক আছেন। অন্যদিকে বিচার না পেয়ে ভুক্তভোগীর স্বজনেরা হতাশ হয়ে পড়ছেন। দীর্ঘসুত্রিতায় মুলতবী মামলার নেই সুরাহা।
একটি মরদেহের ময়নাতদন্ত থেকে ভিসেরা পরীক্ষার রিপোর্ট পর্যন্ত দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে হয়। এই সময়ের মধ্যে হত্যার মুল ঘটনা ধামাচাপা এবঙ আসামীরা গা ঢাকা দেয়ার সুযোগ পেয়ে যান। বিচারিক প্রক্রিয়াতেও বাড়ে দীর্ঘসূত্রতা। অনেক সময় ভিসেরা পরীক্ষার জন্য নমুনা সঠিকভাবে সংরক্ষণ না করা, দীঘৃদিন পরে পাঠানো সহ নানা কারনে রিপোর্টে হেরফের হতে পারে। এছাড়া, ভিসেরা পরীক্ষা শুধু ঢাকা ও চট্টগ্রামে হয় বলে রিপোর্ট দিতে অনেকদিন লেগে যায়। এ দিকে আইন জীবিরা বলেন, সময়মতো ময়না তদন্ত প্রতিবেদন হাতে না আসায় ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে আইনশৃংখলা বাহিনীকে। জটিলতা বাড়ছে বিচারিক কাজে। জানা যায়, ময়না তদন্তের জন্য সবকিছু ডিজিটাল ও আধুনিক করা দরকার। কারণ ময়নাতদন্তের ত্রুটির কারনেই অনেক আসামী খালাস হয়ে যায়। একজন আইনজীবি বলেন, পুলিশের সুরতহাল রিপোর্ট এবং চিকিৎসকের ময়নাতদন্ত রিপোর্টের সাথে মিল না থাকার কারনে অনেক মামলা দির্র্ঘদিন ধরে বিচারাধীন আছে। ২০১২ সালের ১১ই ফেব্রুয়াারি ঢাকার বাসায় সাগর-রুনি নিহত হওয়ার পর তখনকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অপরাধীদের চিহ্নিত এবং গ্রেফতারের কথা বলেছিলেন৷ এখনো হয়নি সেই তদন্তের সুরাহা। এই তদন্ত নিয়ে এখন পুরোপুরি হতাশ সাগর-রুনির পরিবারের সদস্যরা ও দেশের সাংবাদিক সমাজ।
এ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(ক্রাইম এন্ড ডপস) আছাদুজ্জামান বলেন, এম,সি, পোস্টমর্টেম রিপোর্ট ও ডিএনএ টেষ্ট রিপোর্ট সঠিক সময়ে না পেয়ে আমাদের সুষ্ঠ তদন্ত ব্যহত হয়। সেই সাথে বাদীপক্ষও তার ন্যায্য বিচার পাওয়া দীর্ঘায়িত হয়। তাই এই রিপোর্টগুলো একটি মামলার জন্য গুরুত্বপূর্ন বিধায় যত তাড়াতাড়ি রিপোর্টুগলো হাতে পাওয়া যায় তত মামলা তদন্ত ও কার্যক্রমগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করা যায়।