ঢাকা, শুক্রবার ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

যুক্তরাষ্ট্রের উচিত আগে নিজ দেশের মানুষের মানবাধিকার রক্ষা করা: প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক: | প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার ৬ জুলাই ২০২৩ ১১:৪২:০০ অপরাহ্ন | জাতীয়

 

 

মার্কিন ‍যুক্তরাষ্ট্রকে আগে নিজ দেশের মানুষের মানবাধিকার রক্ষা করা উচিত মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তারা নিজের দেশের মানুষকে বাঁচাবে কী করে সেই চিন্তা আগে করুক। সেটাই তাদের করা উচিত। আওয়ামী লীগের আমলে সব নির্বাচনই অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরেপক্ষ হয়েছে বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একমাত্র আওয়ামী লীগই পারে অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে। সেটা আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে পারি। মাত্র সিটি করপোরেশন নির্বাচন হলো। এই নির্বাচন নিয়ে কেউ একটি প্রশ্ন তুলতে পেরেছে? এত শান্তিপূর্ণ নির্বাচন বাংলাদেশে আগে কখনও হয়েছে?’

 

বৃহস্পতিবার (৬ জুলাই)  জাতীয় সংসদের সমাপনী বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর স্পিকার অধিবেশনের সমাপ্তি টানেন।

 

 

বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে যারা প্রশ্ন তোলেন তাদের উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে বাংলাদেশে মানবাধিকারের খোঁজে আসে অনেকে। আমার প্রশ্ন— ২০০১ এর নির্বাচনে যেভাবে হত্যা, নির্যাতন ধর্ষণ হয়েছিল, তখন সেই মানবাধিকার ফেরিওয়ালারা কোথায় ছিল? তারা কেন চুপ ছিল? তাদের মুখে কথা ছিল না কেন? দেশি-বিদেশি আমি সবার বেলায় বলবো। অনেকে আছেন, আমাদের ছবক দেন। মানবাধিকার শেখান। মানবাধিকার বঞ্চিত তো আমরা। যারা খুনিদের ইনডেমনিটি দিয়ে রক্ষা করে, আজ তাদের কথা শুনে অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থা, অনেক দেশ দেখি মানবাধিকারের কথা ওঠায়। আমরাই তো মানবাধিকার বঞ্চিত ছিলাম। ৩৫ বছর লেগেছে বাবা-মার হত্যার বিচার করতে। বাংলাদেশে মানবাধিকার নেই যারা বলেন, তারা ২০০১ দেখেননি? ১৫ আগস্ট দেখেননি? ১৫ আগস্ট থেকে আওয়ামী লীগ সরকার আসা পর্যন্ত এদেশে কী ছিল দেখেননি? তখন তারা চোখেও দেখেননি, কানেও শুনেননি কী কারণে, তা আমার কাছে বোধগম্য নয়। তারা মানবাধিকারের কথা বলে। আজকে রোহিঙ্গারা যখন নির্যাতিত হচ্ছিল, ধর্ষণের শিকার হচ্ছিল, আমরা তাদের আশ্রয় দিয়েছি। আমরা মানবিক কারণে যখন এতগুলো মানুষের দায়িত্ব নিতে পারি। এর থেকে মানবাধিকার সংরক্ষণ আর কী হতে পারে, সেটাই আমার প্রশ্ন?’

 

 

রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘যে আওয়ামী লীগ সরকার অন্য দেশের নির্যাতিত মানুষকে আশ্রয় দিয়েছে, সেই আওয়ামী লীগ সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘন করবে কেন? কীভাবে করবে? এ কথা বলে কীভাবে? সারা বিশ্বে তো বহু জায়গায়, বহু মানুষ খুন হচ্ছে। এমনকি আমেরিকায় তো প্রতি দিন গুলি করে  শিশুদের হত্যা করছে। স্কুলে, শপিং মলে, রাস্তায় হত্যা হচ্ছে। এমনকি  বাঙালি মেয়েকে রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় ছিনতাই করতে গিয়ে হত্যা করছে। প্রতি দিনই তো তাদের প্রতিটি স্টেটে গুলি করে করে হত্যা করছে। ঘরের মধ্যে গিয়ে পরিবারসহ হত্যা করছে। নিজের দেশের মানুষের মানবাধিকার রক্ষা তাদের আগে করা উচিত। তারা নিজের দেশের মানুষকে বাঁচাবে কী করে— সেই চিন্তা আগে করুক। সেটাই তাদের করা উচিত, যার যার দেশের। ইউক্রেনে যুদ্ধটা বাধিয়ে দিয়ে আজকে সেখানে হাজার হাজার নারী-পুরুষ রিফিউজি, কষ্ট পাচ্ছে। সিরিয়াতে কীভাবে গোলাগুলি, প্যালেস্টাইনেও একের পর এক বোমা হামলা। এয়ার হামলাও করছে।  সেটা নিয়ে কারও কোও কথা নেই কেন? সেখানে কি মানবাধিকার ক্ষুণ্ন হচ্ছে না?’

 

বিএনপির ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালের আন্দোলনের সমালোচনা করে সংসদ নেতা বলেন, ‘বিএনপির জীবন্ত মনুষগুলোকে পুড়িয়ে মারা বিএনপির আন্দোলন। অবরোধ দিয়ে রেখেছে। সেই অবরোধ এখনও তুলেনি। অবরোধ দিয়ে মানুষকে হত্যা করা। এই হলো বিএনপির চরিত্র। আজ  তাদের মুখে গণতন্ত্রের কথা শুনি। মানবাধিকারের কথা শুনি। বিদেশিদের কাছেৃ আমাদের দেশে আছে কিছু আঁতেল শ্রেণী। কথা বিক্রি করে খাওয়া অভ্যাস। যত মিথ্যা অপবাদ দেওয়া। এই দেশে নানারকম অপরাধ করে,  যারা বিদেশে আশ্রয় নিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশের সুযোগ নিয়ে যত অপপ্রচার চালাচ্ছে।’

 

সদ্য অনুষ্ঠিত ৫টি সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগের আমলে নির্বাচন হবে না যারা বলে, মাত্র সিটি করপোরেশন নির্বাচন হলো (বরিশাল, রাজশাহী, সিলেট, খুলনা ও গাজীপুর)। গাজীপুরে আমরা হেরেছি, বাকি চারটাতে আমরা জিতেছি। এই নির্বাচন নিয়ে কেউ একটি প্রশ্ন তুলতে পেরেছে? আমরা গেছি সেখানে ভোট চুরি করতে? করিনি তো। এত শান্তিপূর্ণ নির্বাচন বাংলাদেশে আগে কখনও হয়েছে? ঢাকায় সিটি নির্বাচন হয়েছিল ১৯৯৩ সালে। মোহাম্মদ হানিফ জিতেছিল। এরপর লালবাগে বিএনপি গুলি করে আওয়ামী লীগের ৬ জন নেতাকর্মীকে হত্যা করে। সে কথা আমাদের ভুলে গেলে চলবে না। প্রত্যেকটা নির্বাচনে তো এরকম সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করেছে।’

 

আওয়ামী লীগের আমলে হওয়া সব উপনির্বাচনই অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরেপক্ষ হয়েছে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘একমাত্র আওয়ামী লীগই পারে অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে। সেটা আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে পারি। মানুষের ভোটের অধিকার সংরক্ষণ করা, মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করা। সেটাই আমাদের লক্ষ্য। সেই কাজটাই আমরা করে যাচ্ছি। সেটাই করে যাবো। জনগণ বারবার অনেক বাধা অতিক্রম করেও আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে। তার সুফল দেশের জনগণই পাচ্ছে।’

 

বার বার বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে খেলা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর নির্বাচনের পর প্রহসন শুরু হয়। জনগণের ভোট নিয়ে ছিনিমিনি খেলা শুরু হয়। শুরু হয় ‘হ্যাঁ’, ‘না’ ভোটের প্রহসন। ‘হ্যাঁ’ বক্স পেয়ে জিততো। ‘না’ বক্স নেই। ভোট দেওয়া লাগতো না। এমিনতেই বক্স ভরে যেত। সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমান মিলিটারি রুল ও সংবিধান লঙ্ঘন করে। জিয়াউর রহমান নির্বাচনের নামে প্রহসন করে রাষ্ট্রপতি পদটি কলুষিত করে। জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নেয়। আওয়ামী লীগকে কীভাবে শেষ করতেৃ সেটা ছিল তাদের লক্ষ্য। তারা পার্টি ভাঙার খেলা শুরু করে। জিয়ার মৃত্যুর পর জেনারেল এরশাদ তার পদাঙ্ক অনুসরণ করেন।’’

 

সরকার প্রধান বলেন, ‘১৯৯১ সালের নির্বাচনের পর নির্যাতন। একদিকে আওয়ামী লীগের ওপর নির্যাতন। অপরদিকে জাতীয় পার্টির ওপর নির্যাতন। সব চেয়ে বেশি নির্যাতন হয় জাতীয় পার্টির ওপর। জাতীয় পার্টি সেটা ভুলে গেছে।’

 

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘জিয়া, এরশাদ ও খালেদা জিয়ার আমলে নির্বাচনই ছিল— একেকটা গ্রুপ ঢুকবে, সিল মারবে, বাক্স ভরবে। তারপর রেজাল্ট পাল্টাবে। ১০টা হুন্ডা, ২০টা গুণ্ডা, নির্বাচন ঠান্ডা। আওয়ামী লীগ সবসময় সংগ্রাম করে গেছে জনগণের ভোটাধিকার জনগণের কাছে ফিরিয়ে দিতে।’

 

২০০১ সালের নির্বাচনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে ক্ষমতায় আনার জন্য কোনও কোনও মহল তৎপর ছিল। কারণ, আমাদের গ্যাস বিক্রির একটা প্রস্তাব ছিল। আমি গ্যাস বিক্রি করবো না সেই সিদ্ধান্ত দিলাম। খালেদা জিয়া লিখে দিয়েছিল— সে গ্যাস বিক্রি করবে। নির্বাচনের আগে থেকেই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর অত্যাচার। নির্বাচনের দিনে কেউ ঘরে থাকতে পারিনি।’

 

তিনি বলেন, ‘এরশাদ জিয়াউর রহমানের পদাঙ্ক অনুসরণ করেন। খালেদা জিয়া তার দেবর এরশাদকে জেলে রাখলেও ভোট কারচুপির একই পথে যায়। স্বামী, সে ও তার দেবর একই খেলা।’

 

২০০৮ সালের নির্বাচনের ফলাফলের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘ওই নির্বাচনে বিএনপির অবস্থান স্পষ্ট হয়ে যায়। আওয়ামী লীগ আর বিএনপি এক সমান হতে পারে না।’

 

মুল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকার সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে বলেও সরকারপ্রধান জানান। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার আছে বলেই এটা করে দিয়েছি। আমরা না থাকলে কেউ এটা দেখতোও না। মানুষের দিকে তাকাতো না। কিছু কিছু লোক হোল্ডিং করে দাম বাড়ায়।’

 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা জনগণের ভোটের অধিকার সুরক্ষিত করেছি। ভোটাধিকার সম্পর্কে সচেতন করেছি এবং গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রেখেছি। ২০০৯ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত অগ্নি সন্ত্রাস, মানুষ হত্যা নানা ধরনের অপকর্ম করেও তারা কিন্তু এই গণতন্ত্র ধ্বংস করতে পারেনি। আওয়ামী লীগ আছে বলেই গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে। আওয়ামী লীগ আছে বলেই মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশ আজ  উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। মানুষ নৌকায় ভোট দিয়ে স্বাধীনতা পেয়েছে। নৌকায় ভোট দিয়ে আজ মঙ্গা দূর হয়েছে। দুর্ভিক্ষ দূর হয়েছে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়েছে।’