আলোচিত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এস তাহের হত্যা মামলায় একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও নিহত তাহেরের বাসার কেয়ারটেকার মো. জাহাঙ্গীর আলমের ফাঁসি বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ।
একইসঙ্গে দুই আসামির যাবজ্জীবন দণ্ডও বহাল রেখেছেন আদালত। তারা হলেন, নাজমুল আলম ও নাজমুল আলমের স্ত্রীর বড়ভাই আব্দুস সালাম।
প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন ৬ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ রায় দেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল অবন্তী নূরুল, মোহাম্মদ সাইফুল আলম। আসামিপক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট এস এম শাহজাহান, ব্যারিস্টার ইমরান এ সিদ্দিকী।
রায় ঘোষণার সময় ড. তাহেরের স্ত্রী সুলতানা আহমেদ, ছেলে সানজিদ আলভী আহমেদ, মেয়ে অ্যাডভোকেট সেগুফতা আহমেদ, তাদের পরিবারের আইনজীবী অ্যাডভোকেট নাহিদ সুলতানা যুথি, শাকিলা রওশন উপস্থিত ছিলেন।
অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ড. তাহের হত্যা ছিল ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড। আজকের রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। এ রায়ে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হলো। অন্যদের কাছেও বার্তা যাবে এ ধরণে জঘন্য অপরাধীদের ছাড় নেই।
অউঠঊজঞওঝঊগঊঘঞ
আসামিপক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার ইমরান এ সিদ্দিকী বলেন, আসামিদের পরিবারের সাথে আলোচনা করে রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
ড. এস তাহেরের স্ত্রী সুলতানা আহমেদ বলেন, ১৬ বছর ধরে অপেক্ষা করছি। আপিল বিভাগ আজ দুইজনের মৃত্যুদণ্ড ও দুইজনের যাবজ্জীবন দণ্ড বহাল রেখেছেন। আমরা ন্যায় বিচার পেয়েছি। দ্রুত এ রায় কার্যকরের জন্য সরকারের কাছে আবেদন করছি। রায় কার্যকর হলে আমরা পুরোপুরি সন্তুষ্ট হবো।
উযধশধ চড়ংঃ
রায়ের পর ড. তাহেরের স্ত্রী, কন্যা ও ছেলেসহ আইনজীবীরা
এর আগে গত ২২ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এস তাহের হত্যা মামলায় হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল শুনানি শুরু হয়।
২০১৩ সালের ২১ এপ্রিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এস তাহের হত্যা মামলায় দুই আসামির ফাঁসির দণ্ডাদেশ বহাল এবং অন্য দুই আসামির দণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন হাইকোর্ট।
ফাঁসির দণ্ডাদেশ বহাল রাখা দুই আসামি হলেন- একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও নিহত ড. তাহেরের বাসার কেয়ারটেকার মো. জাহাঙ্গীর আলম। যে দু’জনের ফাঁসির দণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয় তারা হলেন- মো. জাহাঙ্গীর আলমের ভাই নাজমুল আলম ও নাজমুল আলমের স্ত্রীর বড় ভাই আব্দুস সালাম।
পরে এ রায়ের বিরুদ্ধে আসামিরা আপিল করেন।
অধ্যাপক তাহের হত্যা মামলায় ২০০৮ সালের ২২ মে রাজশাহীর দ্রুতবিচার আদালত চার জনকে ফাঁসির আদেশ ও দুই জনকে বেকসুর খালাস দেন। খালাসপ্রাপ্ত চার্জশিটভুক্ত আসামিরা হলেন- রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি মাহবুবুল আলম সালেহী ও আজিমুদ্দিন মুন্সী। ২০০৭ সালের ১৭ মার্চ এ ৬ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দিয়েছিল পুলিশ।
পরে নিয়ম অনুযায়ী ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিতকরণ) হাইকোর্টে আসে। পাশাপাশি আসামিরা আপিল করেন।
২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কোয়ার্টারের ম্যানহোল থেকে উদ্ধার করা হয় নৃশংসভাবে হত্যার শিকার অধ্যাপক তাহেরের মৃতদেহ। ৩ ফেব্রুয়ারি নিহতের ছেলে সানজিদ আলভি আহমেদ রাজশাহী মহানগরীর মতিহার থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।