কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলায় বন্যার পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তীব্র স্রোতে ব্রহ্মপুত্র নদসংলগ্ন বিভিন্ন এলাকায় ভাঙ্গনে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। তীব্র স্রোতে গত এক সপ্তাহে উপজেলার চরশৌলমারী ইউনিয়নের ঘুঘুমারী গ্রামের ২০ থেকে ২৫টি বসতবাড়ি ও কৃষিজমি নদে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনে নিঃস্ব হয়েছে ৪০ থেকে ৪৫টি পরিবার।
স্থানীয়রা বলছেন, ভাঙ্গনে শিকার পরিবারগুলো বর্তমানে অন্য এলাকায় স্থান না পেয়ে নদের পাড়েই পাটখড়ি দিয়ে ছাপরাঘর উঠিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। এসব পরিবার দিন অতিবাহিত করছে খেয়ে না খেয়ে। তাদের অভিযোগ- চরম দুর্দশাতেও তাদের পাশে দাঁড়ায়নি সরকারি বা বেসরকারি কোনো সংস্থা। কোনো জনপ্রতিনিধিদেরও পাশে পাচ্ছে না।
উপজেলার চরশৌলমারী ইউনিয়নের ঘুঘুমারী গ্রাম ঘুরে নদের তীরে অস্থায়ী সব ঘরে কোনোমতে দিন পার করতে দেখা গেল অনেক পরিবারকে। উলিপুর উপজেলার সাহেবের আলগা ও গেন্দার আলগা এবং রৌমারীর শেখের বাজার, খেদাইমারী, চর খেদাইমারী, ফলুয়ারচর, পালেরচর, কান্দাপাড়া, দিঘলাপাড়া ও ধনারচর পশ্চিমপাড়া গ্রামের বসতবাড়ি ও কৃষিজমিও একইভাবে নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ভাঙ্গনে প্রতিবছর ভূমিহীন ও গৃহহীন হয়ে পড়ছে শত শত পরিবার। স্থানীয়রা বলছেন, সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের কল্যাণে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের সংখ্যা কমে এলেও নদীভাঙ্গনে কারণে জেলার নদীর তীরবর্তী এলাকায় ভূমিহীন পরিবারের সংখ্যা বাড়ছেই।
ঘুঘুমারী গ্রামের জবেদ আলী বলেন, ‘কয়েক দিন হলো আমার বাড়ি নদীতে ভেঙ্গে গেছে। কৃষিজমি যা ছিল, সব নদীতে। আমি সহায়-সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব। এর আগেও নদীতে তিনবার বাড়ি ভেঙ্গে গেছে। আমরা রিলিফ চাই না। সরকার নদীভাঙ্গন রোধ করতে পারলে আমরা কোনোমতো বাঁচতে পারব।’
চরগেন্দার আলগা গ্রামের সকিনা খাতুন বলেন, ‘আমার ঘরবাড়ি ও গাছপালা সব নদীতে ভেঙ্গে গেছে। নিজের জায়গা নাই। নদীর পাশেই ছাপরা তুলে কোনোমতো ঠাঁই নিয়েছি। সরকারের কাছে দাবি, নদীটা যেন বানদি দেয় (নদীতে বাঁধ দিয়ে দেয়)।’
চরশৌলমারী ইউনিয়নের ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘দুই মাস আগে পানিসম্পদমন্ত্রী এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী নদীভাঙ্গা এলাকা দেখে গেছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। অথচ এর মধ্যেই আরও অনেক পরিবার নদীভাঙনের শিকার হয়ে পথে বসেছে। তারা খুব বিপদের মধ্যে আছে। তাদের পুনর্বাসন করা জরুরি হয়ে পড়েছে।’
চরশৌলমারীর ইউপি চেয়ারম্যান এ কে এইচ এম সাইদুর রহমান দুলাল বলেন, প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকায় নদীর ভাঙ্গনে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। বাড়িঘর নদীতে বিলীন হওয়ায় অনেক পরিবার অসহায় হয়ে পড়েছে। তাদের কেউ কেউ স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। কিন্তু অনেক পরিবারকেই বাস করতে হচ্ছে খোলা আকাশের নিচে। আমার ইউনিয়ন পরিষদ থেকে কিছু অর্থ দিয়ে এবং গ্রামবাসীর সহযোগিতায় আপাতত বাঁশের বান্ডল দিয়ে ভাঙন রোধের চেষ্টা করব। তবে এখনই নদীভাঙ্গন রোধ করা না গেলে ঘুঘুমারী গ্রামটিই নদীতে বিলীন হয়ে যাবে।’
জানতে চাইলে রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদ হাসন খান বলেন, জরুরিভাবে খোঁজখবর নিচ্ছি এবং ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘বিষয়টি জেনেছি। পরিদর্শনের জন্য ভাঙ্গন এলাকায় লোক পাঠানো হচ্ছে। সেখানে কী ব্যবস্থা নিলে নদীভাঙ্গন রোধ করা যাবে, আমরা সেটাই করব। আর অন্যান্য এলাকায় নদীভাঙন রোধে কাজ চলমান রয়েছে।’