ঢাকা: ঢাকায় সফররত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদল র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) ইতিবাচক পরিবর্তনের বিষয়ে সাধুবাদ জানিয়ে টেকসই সংস্কারের প্রতি গুরুত্বারোপ করেছে। তবে র্যাবকে একটি অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য ও কার্যকরী আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, র্যাব ইতোমধ্যেই জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জনে সক্ষম হয়েছে।
তিনি র্যাবের দক্ষতা বাড়াতে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততা ও সহায়তা কামনা করেছেন।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এন্টনি ব্লিনকেনের কাউন্সেলর ডেরেক শোলের নেতৃত্বে সফররত সাত সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল বুধবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ও পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করে। প্রতিনিধিদল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও গণভবনে সাক্ষাৎ করে।
বৈঠকে তারা পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। এতে বিশেষ করে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি ও ইউক্রেন সংকট প্রাধান্য পায়। কাউন্সেলর শোলে ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং এ গণগোষ্ঠীর জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানবিক সহায়তা কার্যক্রম অব্যাহত রাখার আশ্বাস দেন। যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন আন্তর্জাতিক আদালতে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের চলমান বিচারিক প্রক্রিয়ায় সমর্থন এবং সম্ভাব্য সহায়তার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে। বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রকে রোহিঙ্গাদের জন্য অব্যাহত মানবিক সহায়তার জন্য ধন্যবাদ জানায় এবং ভাষানচরে তাদের চলমান মানবিক সহায়তা কার্যক্রম সম্প্রসারণ করার জন্য অনুরোধ জানায়। বাংলাদেশ রোহিঙ্গা সমস্যার দ্রুত সমাধানে এবং প্রত্যাবাসনে যুক্তরাষ্ট্রের জোর সমর্থন ও সহায়তা কামনা করে।
আলোচনায় রাশিয়া-ইউক্রেন সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধান এবং অনতিবিলম্বে যুদ্ধের পরিসমাপ্তির পক্ষে বাংলাদেশ তার জোরালো অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে। পাল্টাপাল্টি বাণিজ্য অবরোধের জেরে বিশ্বব্যাপী সৃষ্ট খাদ্য ও জ্বালানি সংকট ও জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ার ফলে অর্থনৈতিক সংকট সৃষ্টি হচ্ছে উল্লেখ করে এর নিরসনে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। খাদ্য সংকট সমাধানে যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যেই কাজ শুরু করেছে বলে শোলে অবহিত করেন। এছাড়া ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাত নিরসনে গৃহীতব্য আন্তর্জাতিক উদ্যোগে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সমর্থন পাওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেছে।
আর্থ-সামাজিক খাতে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রকে নির্ধারিত বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশের উদার বিনিয়োগ নীতির সুযোগ গ্রহণ করার আহ্বান জানান। এছাড়া বৈঠকে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, জাতীয় নির্বাচনসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সচিব (পশ্চিম) রাষ্ট্রদূত শাব্বির আহমদ চৌধুরী ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস, ইউএসএআইডি প্রশাসকের কাউন্সেলর ক্লিনটন হোয়াইট, মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রিন্সিপাল ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি, দক্ষিণ মধ্য এশিয়া ব্যুরো এলিজাবেথ হর্স্ট ও অ্যাম্বাসেডর অ্যাট-লার্জ ফর গ্লোবাল ক্রিমিনাল জাস্টিস বেথ ভ্যান শ্যাক যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন।