লক্ষ্মীপুর জেলা জুড়ে বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী, ১২ দিনে হাসপাতালে ৫৭
সারা দেশের মতো লক্ষ্মীপুরেও ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। গত ১২ দিনে জেলা সদর হাসপাতালে ৫৭ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। বর্তমানে ২৪ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এছাড়া গত জুন মাসে ২৪ জন রোগী চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
বুধবার (১২ জুলাই) দুপুরে জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) আনোয়ার হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে এডিস মশার লার্ভা নিধনে লক্ষ্মীপুর পৌরসভা থেকে স্প্রে করা হচ্ছে। প্রত্যেক কাউন্সিলরকে এ নিয়ে জনগণকে সচেতন করার জন্য নির্দেশনা রয়েছে। মাইকিং ও লিফলেটের মাধ্যমে জনগণের উদ্দেশ্যে সচেতনতামূলক পরামর্শ প্রচারণা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পৌর কর্তৃপক্ষ।
সদর হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত আব্বাস হোসেন (২২), রুবেল হোসেন (২৮), মহররম আলী (২১), ওমর ফারুক (২৬), মো. হাসান (৪০), আবুল হাসেম (৬২), জহিরুল ইসলাম (৫০), পারুল বেগম (৪০) ও নাসরিন সুলতানার (৫০) সঙ্গে কথা হয়। স্বাভাবিক জ্বর ভেবে সবাই ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে সেবন করেছেন। এরপরও জ্বর ভালো না হওয়ায় তারা সদর হাসপাতাল, রায়পুর ও কমলনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন। পরে রায়পুর ও কমলনগর থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
ডেঙ্গু আক্রান্ত মহররম আলী সদর উপজেলার চররুহিতা ইউনিয়নের চরমণ্ডল গ্রামের খোরশেদ আলমের ছেলে। তিনি নারায়ণগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের সদস্য। নারায়ণগঞ্জ থেকেই তিনি জ্বর নিয়ে বাড়িতে আসেন। চার দিন ধরে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এখন তিনি অনেকটাই সুস্থতা বোধ করছেন বলে জানিয়েছেন।
সদর উপজেলার তেওয়ারীগঞ্জ ইউনিয়নের আন্ধারমানিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জহিরুল ইসলামকেও ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে দেখা যায়। ৫-৬ দিন ধরে তিনি জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন। মঙ্গলবার (১১ জুলাই) তিনি শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে এসে বিভিন্ন পরীক্ষা করান। এতে তার ডেঙ্গু ধরা পড়ে। পরে চিকিৎসক তাকে সদর হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেন। জ্বরে তার পুরো শরীর দুর্বল হয়ে পড়েছে। পাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশ প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব হয়েছে বলে জানান তিনি।
রায়পুর উপজেলার চর মোহনা ইউনিয়নের চরমোহনা গ্রামের কৃষক রুবেল হোসেন চার দিন ধরে সদর হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। ৭-৮ দিন ধরে তিনি জ্বরে আক্রান্ত। কমলনগর উপজেলার আব্বাস হোসেনও চার দিন ধরে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ঢাকার ধানমন্ডি গ্রিন রোড এলাকার বায়তুল আকসা জামে মসজিদের খাদেম ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে বাড়িতে আসেন। সাত দিন ধরে তিনি চিকিৎসা নিচ্ছেন। এখন অনেকটা উন্নতির দিকে রয়েছেন। তিনি সদর উপজেলার নন্দনপুর এলাকার আবুল হাশেমের ছেলে। কমলনগর উপজেলার হাজিরহাট এলাকার কবির হোসেনের স্ত্রী নাসরিন সুলতানা গত চার দিন ধরে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধের পাশাপাশি তিনি মাল্টা ও লেবু খাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন।
সদর হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. মুহাম্মদ আবদুল্লাহ জাহেদ খান বলেন, ডেঙ্গু মশাবাহিত ও ভাইরাস জনিত রোগ। এ রোগে আক্রান্তদের চিকিৎসা দিয়ে সুস্থতার চেয়ে অধিকতর হচ্ছে সচেতন থাকা। সারা দেশেই এখন ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে অবশ্যই সচেতনতার বিকল্প নেই। বাড়ির আশপাশে জমে থাকা পানি অপসারণ, মশারি টানিয়ে ঘুমানোসহ বিভিন্ন বিষয়ে অবশ্যই সচেতন হতে হবে। আমরা রোগীদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা ও পরামর্শ দিয়ে আসছি। বেশি অসুস্থ না হলে কাউকেই হাসপাতালে রেফার্ড করার প্রয়োজন হয় না।
সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) আনোয়ার হোসেন বলেন, জুন মাস থেকে এ পর্যন্ত ৮১ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ৫৭ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। ২৪ জন রোগী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। জনবল সংকটের মধ্যেও দ্বিতীয় তলায় পুরুষদের জন্য ও চতুর্থ তলায় নারীদের জন্য ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তদের জন্য দুটি ইউনিট খোলা হয়েছে। ১০০ শয্যার হাসপাতালটিতে এখন প্রায় ৩০০ জন রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ডেঙ্গু আক্রান্তদের সেবায় আমাদের ওষুধ পর্যাপ্ত রয়েছে।
লক্ষ্মীপুর পৌরসভার মেয়র মোজাম্মেল হায়দার মাসুম ভূঁইয়া বলেন, এডিশ মশার লার্ভা নিধনে ওষুধ স্প্রে কার্যক্রম চলমান রয়েছে। মাইকিং ও লিফলেট বিতরণের মাধ্যমে জনগণকে সচেতন করা হচ্ছে। সারা দেশেই ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এতে সবাইকে সচেতন হওয়ার জন্য আহ্বান জানান তিনি।
লক্ষ্মীপুর জেলা সিভিল সার্জন ডাঃআহমেদ কবির ডেঙ্গুজ্বর আক্রান্তদের বিষয়ে নিয়মিত খোজখবরাখবর নিচ্ছেন বলে নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন এডিস মশা আগে দিনে কামড়ালেও এখন সারাদিনেই কামড়াচ্ছে । জ্বর হলে হাসপাতালে এসে চিকিৎসা নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।