মাদারীপুরের শিবচর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) নূর মোহাম্মদের বিরুদ্ধে এক পরোয়ানাভুক্ত আসামিকে থানায় আটকে রেখে অমানবিক নির্যাতন চালানোর অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তাকে আসামি করে ভুক্তভোগী আকমান মাদবর (৬০) মাদারীপুর আদালতে বাদী হয়ে একটি মামলা করেছেন। রোববার দুপুরে জেলার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে মামলাটি করা হয়। আদালতের বিচারক অভিজিৎ চৌধুরী মামলাটি আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দেন।
মামলায় ভুক্তভোগী বৃদ্ধের অভিযোগ, তাকে প্রসাব চাটিয়ে খাওয়ানো, ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি, বেঞ্চের নিচে মাথা ঢুকিয়ে বাম হাত ভেঙ্গে ফেলাসহ অমানবিক নির্যাতন চালানো হয়। তবে অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তার দাবি, বাদী আকমান মাদরব একটি মামলায় পরোয়ানাভুক্ত আসামি ছিলেন। তাকে গ্রেপ্তার করার কারনে তিনি ক্ষুদ্ধ হয়ে পুলিশের নামে এমন ভিত্তিহীন অভিযোগ করেছেন। ভুক্তভোগী আকমান মাদবর শিবচর উপজেলার সরকারের চর এলাকার মৃত আলাউদ্দিন মাদবরের ছেলে। তিনি পেশায় একজন কৃষক।
মামলার এজাহার ও আদালত সূত্র জানায়, মামলার বাদী আকমান মাদবর একটি জমিজমা বিরোধের জেরে হওয়া মামলার ৪ নম্বর আসামি। আদালত আকমান মাদবরসহ আরও চার আসামির নামে পরোয়ানা জারি করলে গত রোববার (৯ জুলাই) তাদের গ্রেপ্তার করে শিবচর থানার উপপরিদর্শক নূর মোহাম্মদ। পরে আসামিদের শিবচর থানায় পুলিশের হেফাজতে রাখা হয়। এদের মধ্যে আকমান মাদবরকে থানার দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষে নিয়ে যায় নূর মোহাম্মদ। পরে তাকে শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়। এতে তার বাম হাত ভেঙে যায়। পরে তাকেসহ ওই চারজনকে আদালতে হাজির করলে আদালত তাদের কারাগারে পাঠায়। একদিন কারাভোগ শেষে গত ১০ জুলাই জামিন আবেদন জানলে আদালতে আসামিদের জামিন দেন। জামিন পাওয়ার ৬দিন পরে পুলিশ কর্মকর্তা নূর মোহাম্মদকে আসামি করে আদালতে মামলা দায়ের করে আকমান মাদবর।
মামলার বাদী আকমান মাদবর বলেন, পুলিশের এসআই নূর মোহাম্মদ আমাকে থানার একটি রুমে নিয়ে বেঞ্চের নিচে মাথা দিয়ে সারা শরীরে লাঠি দিয়ে পেটায়। পরে প্রসাব ও থুথু ফেলে আমাকে দিয়ে প্রসাব ও থুথু চাটাইছে। এক পর্যায়ে আমাকে দিয়ে আব্বা ডাকায় ওই পুলিশ। এই ঘটনা কাউকে বললে আবারো নির্যাতন চালানোর হুমকি দেয়। ওই পুলিশ আমাগো প্রতিপক্ষের সঙ্গে হাত করে আমারে নির্মমভাবে মারছে। আমি এই ঘটনার বিচার চাই।’
বাদী পক্ষের আইনজীবী জামাল হোসেন বলেন, থানায় বসে কোনো আসামিকে এভাবে নির্যাতন করার আইনগত অধিকার কারো নেই। ভুক্তভোগীর করা মামলায় আদালত আমলে নিয়ে পিবিআইর পুলিশ সুপারকে আগামী ১৬ আগস্টের মধ্যে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা ন্যায় বিচার কামনা করছি।’
শিবচর থানার উপ-পরিদর্শক নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘একটি মামলায় চার জনের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট থাকায় আসামিদের গ্রেপ্তার করে নিয়ম অনুসারি আদালতে চালান করেছি। তাদের সঙ্গে নির্যাতনের কোন ঘটনা ঘটেনি। গ্রেপ্তারের তিন দিন পরে তারা একটি অভিযোগ হাজির করলো। তারা পুলিশ ও আমার সুমান ক্ষুন্ন করার জন্য এমন ভিত্তিহীন অভিযোগ করেছেন। জমিজমার বিরোধের জের ধরে তারা নিজেরা মারামারি করে আহত হয়েছেন। এখন সেই দোষ আমাদের দিকে দিচ্ছেন। তাদের অভিযোগের বিন্দুমাত্র সত্যতা নেই।’
জানতে চাইলে শিবচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘অভিযোগ যে কেউ করতে পারে। তবে যেহেতু আদালতে মামলা হয়েছে সেটা নিয়ে কিছু বলতে চাই না। ঘটনা সত্য নাকি মিথ্যে সেটা আদালতেই প্রমাণ হয়ে যাবে। আদালত যেহেতু পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে, পিবিআই বিষয়টি তদন্ত করে দেখুক। তদন্তাধীন বিষয় এর থেকে বেশি কিছু বলতে পারছি না।