বাঙালির সাংস্কৃতিতে পিঠাপুলির মত শীতের অংশ জুড়ে আছে খেজুরের রস। কুয়াশাচ্ছন্ন কাক ডাকা ভোরে খেজুরের রস পান করতে দূর দুরান্তে ছুটে যান রস প্রেমিকেরা। প্রকৃতির এই নজর করা সৌন্দর্যে গাছ থেকে কলস ভরা খেজুরের রস পেরে তৃষ্ণা মেটানোর দৃশ্য যেন হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়ার মত। গাছ থেকে খেজুরের রস সংগ্রহ করে গুড় তৈরি করে চাহিদা মেটানো হয় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।
প্রতি মৌসুমের মতো এবারও নওগাঁ জেলা সদর সহ বিভিন্ন উপজেলায় খেজুর গাছের রস সংগ্রহের দৃশ্য চোখে পড়ার মতো।
গাছ প্রস্তুত শেষে রস সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছেন গাছিরা।মনের আনন্দে এই দৃশ্য উপভোগ করে নিজেদেরকে ক্যামেরাবন্দি করেছেন দর্শনার্থীরা।
গাছিরা বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত থাকলেও শীত মৌসুমে খেজুর রস সংগ্রহ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন তারা।
গাছি মুনছুর বলেন, এ বছরে গাছের সংখ্যা কমেছে। কয়েক বছর আগেও গাছের সংখ্যা বেশি ছিল। এখন গাছের সংখ্যা কমে গেছে, গাছের দামও বেশি। গাছ চুক্তিতে নিয়ে মিঠাই তৈরি করা বেশ ব্যয়বহুল। তবুও মৌসুমী এই ব্যবসা বংশগত। খেজুরের রস সংগ্রহ একটা নেশা।যতদিন বেঁচে আছি খেজুরের গাছ থেকে রস সংগ্রহ করেই জীবিকা নির্বাহ করবো।এটা আমার শখের ব্যবসা।
নওগাঁ জেলার রানীনগর স্টেশন সংলগ্ন তারাপুর গ্রামে রস খেতে আসা এক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করলে বলেন, রস না খেলে শীত মনে হয় না।ভোরে গাছ থেকে নেমে টাটকা রস খাওয়ার মজাই আলাদা। শহরের অনেক স্থানের রস বিক্রি হয় কিন্তু গাছ থেকে টাটকা রস নামিয়ে খাওয়ার মজাই আলাদা। সব মিলিয়ে অনুভূতিটা অন্যরকম।
রস বিক্রেতা হিমেল বলেন, ভোরে গাছ থেকে যখন রস নামানো হয় তখন লোকজনের ভিড় জমা হয়ে যায়।প্রতি গ্লাস ১০ টাকা করে বিক্রি করি আর লিটার হিসেবে নিলে ৫০ টাকা লিটার দিই। এক গাছের তিন থেকে পাঁচ লিটার রস হয়।
শীত যত বাড়বে খেজুরের রসের সাধও তত বাড়ে। এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান,খেজুরের রস ও গুড় গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য।খেজুরের গাছ প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ।সঠিক পরিচর্যা করা হলে এই গাছ থেকে বাণিজ্যিকভাবে আয় করা সম্ভব।