একুশে পদকপ্রাপ্ত বিশিষ্ট রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী পাপিয়া সারোয়ার আজ আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। বৃহস্পতিবার সকাল আটটায় রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭২ বছর।
সংবাদটি নিশ্চিত করেছেন তাঁর স্বামী সারওয়ার আলম। তিনি জানান, মরদেহ বারডেমের হিমঘরে রাখা হয়েছে। শুক্রবার জুমার নামাজের পর জানাজা শেষে তাঁকে বনানী কবরস্থানে দাফন করা হবে।
গত কয়েক বছর ধরে ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করছিলেন পাপিয়া সারোয়ার। গত মাসে ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। পরে তেজগাঁওয়ের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সব চিকিৎসা ব্যর্থ হয়ে তিনি জীবনের মায়া ছেড়ে বিদায় নিলেন।
পাপিয়া সারোয়ার রেখে গেছেন স্বামী এবং দুই কন্যা। বড় মেয়ে জারা সারোয়ার যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সি কলেজে জীববিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক। ছোট মেয়ে জিশা সারোয়ার কানাডার অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন নির্বাহী।
১৯৫২ সালের ২১ নভেম্বর বরিশালে জন্ম নেওয়া পাপিয়া সারোয়ার ছোটবেলা থেকেই ছিলেন রবীন্দ্রসংগীতে অনুরাগী। ষষ্ঠ শ্রেণিতে ছায়ানটে ভর্তি হওয়ার মাধ্যমে সংগীতশিক্ষার সূচনা। পরে বুলবুল ললিতকলা একাডেমিতেও তালিম নেন। তাঁর সংগীতগুরু ছিলেন ওয়াহিদুল হক, সন্জীদা খাতুন ও জাহেদুর রহিম।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী পাপিয়া ১৯৭৩ সালে ভারত সরকারের বৃত্তি নিয়ে শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে রবীন্দ্রসংগীতে ডিগ্রি অর্জন করেন। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম শিক্ষার্থী হিসেবে তিনি এই সুযোগ পেয়েছিলেন।
১৯৬৭ সাল থেকে বেতার ও টেলিভিশনে তালিকাভুক্ত শিল্পী হিসেবে গান গাওয়া শুরু করেন পাপিয়া। তাঁর প্রথম অডিও অ্যালবাম ‘পাপিয়া সারোয়ার’ প্রকাশিত হয় ১৯৮২ সালে। তাঁর জনপ্রিয় আধুনিক গানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘নাই টেলিফোন নাই রে পিয়ন নাই রে টেলিগ্রাম’।
পাপিয়া সারোয়ার রবীন্দ্রসংগীতের জন্য কোটি শ্রোতার হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছিলেন। সংগীতবোদ্ধারা মনে করেন, তাঁর কণ্ঠ ও গায়কি ছিল অনন্য। গানের সংখ্যায় সীমাবদ্ধ থাকলেও মানের দিক থেকে তাঁর কাজ ছিল দুর্দান্ত। তাঁর সর্বশেষ অ্যালবাম ‘আকাশপানে হাত বাড়ালাম’ ২০১৩ সালে প্রকাশিত হয়।
পাপিয়া সারোয়ারের সংগীত জীবনে অসংখ্য পুরস্কার ও স্বীকৃতি এসেছে। ২০১৩ সালে তিনি বাংলা একাডেমি রবীন্দ্র পুরস্কার লাভ করেন। ২০১৫ সালে পান বাংলা একাডেমি ফেলোশিপ। দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদক লাভ করেন ২০২১ সালে।
জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এবং ‘গীতসুধা’ গানের দলের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে তাঁর অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে। সংগীতের আকাশে একটি উজ্জ্বল নক্ষত্রের পতন ঘটেছে। তবে তাঁর গাওয়া গান চিরকাল জীবন্ত হয়ে থাকবে শ্রোতাদের মনে।
বায়ান্ন/এএস