ঢাকা, শনিবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শেষ সময়ে জমে উঠেছে নকলা উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের নির্বাচন

তারিকুল ইসলাম, শেরপুর প্রতিনিধি : | প্রকাশের সময় : শুক্রবার ২৬ নভেম্বর ২০২১ ০৬:০৮:০০ অপরাহ্ন | দেশের খবর
শেরপুরের নকলায় তৃতীয় ধাপে নয়টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২৮ নভেম্বর। নির্বাচনকে ঘিরে শেষ সময়ের মত প্রচার প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রার্থীরা। পোস্টার, ব্যানারে ছেয়ে গেছে ইউপির অলি-গলি, বাসা-বাড়ি, চায়ের দোকান ও বিভিন্ন স্থাপনা।
 
প্রার্থীরা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ঘুরছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে, দিচ্ছেন নানান প্রতিশ্রুতি। মিছিল-মিটিং, পথসভা, ওঠান বৈঠক ও গণসংযোগসহ প্রতিটি ইউনিয়নেরই হাট বাজার, চা স্টলে চলছে নির্বাচনী আলাপ-আলোচনা। চেয়ারম্যান প্রার্থীদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত নারী সদস্যরাও রাত দিন ভোটারদের বাড়ি বাড়ি ঘুরে ভোট প্রার্থনা করছেন দিচ্ছেন নানা ধরণের প্রতিশ্রুতি সব মিলিয়ে জমে উঠেছে ইউপি নির্বাচন।
 
সবার আশা ভোট যুদ্ধে জিততেই হবে। তবে সাধারণ ভোটাররা ভোট দেয়ার ব্যাপারে কোনও প্রার্থীকেই নিরাশ করছেন না। নির্বাচনের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে ততই প্রার্থীরা ভোটারদের কাছে গিয়ে তাদের আদর্শের বয়ানসহ ইউনিয়নে উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করছেন।
 
সরজমিনে দেখা গেছে, উপজেলায় চেয়ারম্যান,
সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত নারী সদস্য প্রার্থীরা অটোরিক্সা, ইজিবাইক, রিক্সায় মাইক বেঁধে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। দলীয় প্রার্থীদের পাশাপাশি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছে।
 
এদিকে চেয়ারম্যান পদে ৩৫ জন, সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ৮৯ জন ও সাধারণ সদস্য পদে ২৮৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। নারী প্রার্থীদের সাথে মাঠে নেমেছেন স্বামী সন্তানরাও। তেমনি পুরুষ প্রার্থীদের সাথেও স্ত্রী সন্তানরাও বসে নেই। সবার আশা ভোট যুদ্ধে জিততেই হবে।
 
রহুল আমিন নামে এক ভোটার জানান, ভোট আসলে প্রার্থীদের আনা-গোনার কমতি থাকে না। ভোট শেষ হলেই তাদের দেখা পাওয়া যায় না। প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচিত হয়ে, সে মোতাবেক কাজ করে না বরং নির্বাচনের পর সব ভুলে যান।
 
ভোটার বৃদ্ধ জমেলা বেগম জানান, অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রার্থীরা নির্বাচিত হন কিন্তু ইউনিয়নের তেমন কোন দৃশ্যমান উন্নয়ন হয় না। এবার আমরা সঠিক মানুষকেই ভোট দিবো।
 
উপজেলার ২নং নকলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী আনিসুর রহমান সুজা জানান, সকল শ্রেণী পেশার মানুষের সাথে আমার ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে এবং পুনরায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে ইউনিয়নের অসম্পূর্ণ কাজ গুলো সম্পন্ন করে একটি আদর্শ পরিচ্ছন্ন ইউনিয়ন হিসেবে পরিণিত করা হবে আমার মূল লক্ষ্য।
 
৩নং উরফা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান স্বতন্ত্র প্রার্থী নূরে আলম তালুকদার ভূট্টো (চশমা প্রতীক), ৫ নং বানেশ্বর্দী ইউনিয়ন'র পরপর দুইবারের চেয়ারম্যান একই সাথে স্বতন্ত্র প্রার্থী মাজহারুল আনোয়ার মহব্বত (আনারস প্রতীক) এবং ৭নং টালকি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোজাফ্ফর মহিউদ্দিন বুলবুল (ঘোড়া প্রতীক) প্রত্যেকের সাথে কথা বলে জানা যায, তারা দীর্ঘ দিন যাবৎ স্বচ্ছতার সহিত এলাকার এতিম, বিধবা, বয়স্কসহ সকল শ্রেণী পেশার মানুষদের বিপদে-আপদে সাধ্যমত পাশে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছেন এবং এলাকাবাসীদের দোয়া ও ভালোবাসাকে পুঁজি করে তারা নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশগ্রহণ করে জয়ের লক্ষে প্রত্যেকে শতভাগ আশাবাদী।
 
উপজেলার ৫নং বানেশ্বর্দী ও ৬নং পাঠাকাটা ইউপি থেকে এবারই মনোনয়ন পাওয়া দুই প্রার্থী আঞ্জুমান আরা বেগম রুমি ও মোঃ আব্দুস ছালাম জানান বঙ্গবন্ধুর কণ্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের নৌকা প্রতীক দিয়েছেন। তারা নির্বাচিত হতে পারলে প্রধানমন্ত্রীর হাতকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে ইউনিয়নে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখবেন।
 
চন্দ্রকোনা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মো. সাজু সাইদ সিদ্দিকী বলেন, আমি দুই বার এই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলাম। আমি আমার উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করেছি বলেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে আবার নৌকার মনোনয়ন দিয়েছেন। আমি নির্বাচিত হলে আমি চন্দ্রকোনা ইউনিয়নকে একটি মডেল ইউনিয়ন হিসেবে রুপান্তরিত করবো।
 
উল্লেখ্য, দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে বেশিরভাগ ইউনিয়নে মাঠে রয়েছেন এক বা একাধিক স্বতন্ত্র প্রার্থী। এছাড়াও প্রার্থীদের মধ্যে অজানা এক আতঙ্ক কাজ করছে। তারা কেউ কেউ বলছেন দলীয় প্রার্থীর লোকজন প্রভাব খাটাতে গেলে দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও হতাহত হবে, কারণ কেউ কাউকে ছাড় দিবে না।
 
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বলেন, নির্বাচন হবে শতভাগ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ। জনগণ যাকে ভোট দিবেন তিনিই নির্বাচিত হবেন। এখানে আতঙ্কিত হওয়ার কিছুই নেই।
 
নকলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুশফিকুর রহিম জানিয়েছেন নকলায় শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার জন্য আমাদের সকল প্রস্তুতি রয়েছে এবং ভোট সুষ্ঠু করতে যা করতে হবে আমরা তাই করবো।
 
উল্লেখ্য, নকলা উপজেলায় মোট ৮২টি কেন্দ্রে ৩৫৪ টি বুথে ১ লাখ ৩৮ হাজার ৯৫০ জন ভোটারগন নিজ নিজ কেন্দ্রে ভোটারধিকার প্রয়োগ করবেন। এর মধ্যে নারী ভোটার ৭০ হাজার ৫৬৭ জন এবং পুরুষ ভোটার ৬৮ হাজার ৩৮৩ জন।