কৃষকের একমাত্র অবলম্বন গরু। সেই গরু চুরি আতংকে দিন কাটছে ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার ৪ গ্রামের মানুষের। গরু চুরি ঠেকাতে সারাদিনের হাড়ভাঙ্গা খাটুনির পর দিশেহারা হয়ে পালাক্রমে রাত জেগে পাহারা দিতে হচ্ছে তাদের। তাতেও কোন কাজ হচ্ছে না।
এলাকাবাসাী জানায়, গত দেড় বছর ধরে শৈলকুপা উপজেলার বেড়বাড়ি, চাঁদপুর, দুধসর, আসাননগর গ্রামের একের পর এক গরু চুরির ঘটনা ঘটে। স্থানীয় পুলিশ বিভাগকে জানিয়েও ঠেকানো যাচ্ছে না কৃষক ও দরিদ্র খামারির শেষ সম্বল গরুটি। প্রতিদিন কোন না কোন কৃষকের গরু চুরি হচ্ছিলো। উপায় না পেয়ে ওই ৪ গ্রামের মানুষ গরু চুরি ঠেকাতে পালাক্রমে রাত জেগে পাহারা দিচ্ছে। তারপরও চুরি হচ্ছে গরু। সন্তানের মতো যতেœ লালন করা প্রাণীটিকে হারিয়ে চরম অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে যাচ্ছে ওই জনপদ। সর্বশান্ত হতে হচ্ছে তাদের। কেউ আবার প্রয়োজনের আগেই বাধ্য হচ্ছে গরু বিক্রি করতে।
বেড়বাড়ি গ্রামের সিদ্দিক মন্ডল বলেন, কয়েক দিন আগে আমার গোয়ালের ৩ টি গরুর চুরি হয়েছে। আমার শেষ সম্বল ছিলো ওই গরু গুলো। সারাবছর গরু পুষে কোরবানির আগে বিক্রি করে যা লাভ হয় তা নিয়ে সারা বছরের সংসারের খরচ চালায়। কিন্তু এবার তো পথে বসে গেছি। চোর আমার সব শেষ করে দিয়েছে।
চাঁদপুর গ্রামের গোলাম সরওয়ার বলেন, আমি অন্যের জমিতে কাজ করি আর বাড়িতে গরু লালন পালন করি। আমারও ৩ টা গরু চুরি হয়ে গেছে। সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে গরু কিনেছিলাম। অনেক কষ্টে কিস্তি দিতাম। একটা আশা ছিলো বছর শেষে কিছু টাকা জমাতে পারব। কিন্তু এখন তো সবই চলে গেছে। আমার তো আর কিছুই থাকলো না। দুধসর গ্রামের হতদরিদ্র বদর কাজীর ২ টি গরু চুরি হয়েছে। তারও শেষ সম্বল ছিলো ওই দুটি গরু। তিনি বলেন, আমার মত এলাকার অনেকের গরু চুরি হয়েছে। কোন ভাবেই চোর ঠেকানো যাচ্ছে না। তাই আমরা রাত জেগে পাহারা দিচ্ছি। তারপরও প্রায় প্রায় গ্রামে চোর আসছে।
বেড়বাড়ি গ্রামের স¤্রাট হোসেন বলেন, চুরির যেন একটা মহোৎসব শুরু হয়েছে। চুরি ঠেকানে স্থানীয় ভাবে আমরা রাতজেগে পাহারা দিচ্ছি। তারপরও প্রায় প্রায় গোয়ালের গরু খুলছে চোরেরা। নিতে পারছে না এখন পাহারার কারণে। কিন্তু কত দিন আর এভাবে চলব আমরা। সারাদিনের হাড়ভাঙ্গা খাটুনির পর কৃষক, দিনমজুর রাতে এক ঘুমাবে তাও হচ্ছে তা। তাই চুরি রোধে গ্রামের বিদ্যুতের পোলে সড়ক বাতির ব্যবস্থা থাকলে হয়তো কিছুটা হলেও উপকার হতো।
এ ব্যাপারে ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এস এম রাজু আহমেদ বলেন, চুরির ঘটনা ঘটছে এটা শুনেছি। কিন্তু এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কেউ অভিযোগ করেনি। তবে আপনাদের আশ^স্ত করছি এলাকাবাসী সহযোগিতায় আমরা চুরি রোধে যত প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজন হবে আমরা নিব।