গাজীপুরের শ্রীপুরে ঈদকে সামনে রেখে শপিং মল গুলো ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় এই সুযোগে সক্রিয় হয়ে উঠেছে ছিনতাই চক্র। ক্রেতাদের এমন ভিড়ে খুশি ব্যবসায়ীরা। কিন্তু শিল্প অঞ্চল হিসেবে পরিচিত ব্যস্ততম এলাকা ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের মাওনা চৌরাস্তা উড়াল সেতুর নিচে সক্রিয় হয়েছে উঠেছে ছিনতাই চক্র। ছিনতাই হচ্ছে নগদ টাকা, মোবাইল, মহিলাদের স্বর্ণের চেইনসহ আরো অন্যান্য অনেক দামি জিনিস। ব্যবসায়ী ও ছিনতাই কবলে পড়া লোকজন অভিযোগ করে বলেন ,পুলিশকে খবর দিলে ২/৩ ঘণ্টা পরে আসছে। পুলিশ ছিনতাইকারীদের রাখছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। দিন যত যাচ্ছে উপজেলার ছোট-বড় শপিংমল, মার্কেট ও বিপণিবিতানগুলোতে ততই বাড়ছে ক্রেতাদের ভিড়। পরিবার পরিজন ও বন্ধু-বান্ধব নিয়ে অনেকেই আসছেন উপজেলার ঐতিহ্যবাহী মাওনা চৌরাস্তা শপিংমলগুলোতে ঈদের পোশাক ও আনুষঙ্গিক পণ্য কিনতে। ক্রেতা আকর্ষণে অভিনব নকশার নানা পণ্যের পসরা সাজিয়েছেন বিক্রেতারা। প্রাধান্য পাচ্ছে পরিবারের ছোট সদস্যদের ঈদ কেনাকাটাও। পোশাকের পাশাপাশি জুতা, কসমেটিকস ও জুয়েলারি দোকানগুলোতেও ভিড় বেড়েছে।
গরমের কথা মাথায় রেখে সুতি এবং হালকা রঙের পোশাককেই প্রাধান্য দিচ্ছেন ক্রেতারা। রুচিসম্মত পণ্য কিনতে এক শপিংমল থেকে অন্য শপিংমলে ঘুরছেন অনেকেই। সামনে বেচা-বিক্রি আরও বাড়ার পাশাপাশি, ভালো ব্যবসা হওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী বিক্রেতারা।
আজ শনিবার (৮ এপ্রিল) দুপুরে মাওনা চৌরাস্তায় ইয়াকুব আলী মাস্টার টাওয়ারে ঘুরে দেখা গেছে , ক্রেতাদের বাড়তি ভিড়। তারা পছন্দের জামাকাপড় কিনতে এক দোকান থেকে অন্য দোকানে ঘুরে দেখছেন। ঈদে নতুন কী পোশাক এসেছে, তা-ও দেখতে এসেছেন অনেকে। ফুটপাতে কেনাকাটা করছেন নিম্ন আয়ের মানুষ।
ঈদকে সমানে রেখে প্রতিটি শোরুম ও বিপণিবিতানে পোশাকের ব্যাপক সমারোহ দেখা গেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ক্রেতাদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে সব ধরনের কালেকশন তারা রেখেছেন। তবে গরমে সুতি কাপড়ের চাহিদা বেশি থাকায় সুতি কালেকশন বেশি রয়েছে। দাম নিয়ে আপত্তির শেষ নেই ক্রেতাদের। বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যআয়ের মানুষরা ঈদ বাজারে এসে দরকষাকষিতে হাঁপিয়ে উঠছেন। বিক্রেতারা বলছেন, পণ্যের গুণগতমান ও ডিজাইনের ওপর দাম নির্ভর করছে।
মাওনা চৌরাস্তা ইয়াকুব আলী মাস্টার টাওয়ারে ত্রিশাল উপজেলা থেকে কাপড় কিনতে আসা আসমা ও লামিয়া ক্রেতা জানান, প্রতিবছর ঈদের কয়েকদিন আগে এ মার্কেটে দোকানে অনেক ভিড় কম থাকে। এবার একটু আগেভাগে কেনাকাটা করতে এসেছি এখন দেখি প্রচুর ভিড়। এ দুজন ক্রেতা আরো জানান , সব পোশাকের দাম কিছুটা বেশি।
এই মার্কেটে কথা হয় আরেকজন ক্রেতা সাথে ছোট বোনের জন্য ও আত্মীস্বজন এবং পরিবারের জন্য ঈদের কেনাকাটা করতে আসা প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরিরত বশির আহমেদের সাথে। তিনি জানান, ঈদ মানেই আনন্দ,ঈদ মানেই খুশি,ঈদে চাই নতুন জামা কাপড়। তাই এখন মার্কেটগুলোতে ভীড় একটু কম থাকবে বলে আসছি ১৬ রোজায় এবার দেখি আগেভাগেই প্রচুর ভিড় । দাম একটু বেশি। তবে ভালো মানের নতুন ডিজাইনের পোষাক দেখে পছন্দ হয়েছে দাম বেশি হলেও কিনতে তো হবেই। তাছাড়া ছোট বোনের আবদার রাখতেতো হবেই। পছন্দ শেষ এখন দাম বনাবনি।
উপজেলার মাওনা চৌরাস্তা ভাই ভাই সিটি কমপ্লেক্সে প্রজাপতি ফ্যাশন-এ ঈদের পোষাক কিনতে ব্যস্ত দেখা যায় রিক্তা আক্তার নামে এক তরুণীকে। তার মতো আরও অনেকেই ভিড় করেছেন সেখানে। রিক্তা বলেন, একটা নতুন ডিজাইনের টপস ও থ্রিপিস পছন্দ হয়েছে। কিন্তু দাম বেশি মনে হচ্ছে। তারপরও কিনতে হচ্ছে। কারণ ভালোলাগার পোশাক পরাই তো ঈদ আনন্দ।
উপজেলার মালেক মাস্টার সুপার মার্কেটে স্বপ্ন ফ্যাশনে কথা হয় এক যুবকের সঙ্গে। তিনি বলেন, কম-বেশি সব অভিজাত মেগামল ও শপিংমলে দেশি-বিদেশি কালেকশন রয়েছে। কিন্তু গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার দাম অনেক বেশি। তবে পোশাকের মান ও ডিজাইন পছন্দ হবার মতো।
ঢাকা শহরে রিকশা চালক কাশেম থাকেন মাওনা চৌরাস্তা ময়মনসিংহ মহাসড়কের কাছে ফুটপাতে তার দুই ছেলের জন্য প্যান্ট ও শার্ট কিনছিলেন। এ সময় তার সঙ্গে কথা হয়।
তিনি বলেন, শহরের মেলা রিকশা, আগের মতো কামাই নাই। তারপরও যা কামাই হয় তাক দিয়্যা কোনো রকমে সংসার চলে। ঈদোত ছাওয়া দুইটাক কাপড় কিনি দিম। দামের কারণে মনে হয় আজই কেনা হবার নায়। গতবার ১ হাজার ২০০ টাকাতে দুইজনের কাপড় কিনচু। এবার তো দেড় হাজার টাকাতো কেনা হওছে না।
মাওনা চৌরাস্তা বণিক সমিতির সভাপতি আশরাফুল ইসলাম রতন বললেন, ছিনতাই চক্রের কবলে যাতে না পড়ে এ ব্যাপারে মাইকিং করে ক্রেতা এবং বিক্রেতাদের তাদেরকে সতর্ক করে দেওয়া হচ্ছে।
শ্রীপুর থানার ওসি আবুল ফজল মো: নাসিম বলেন, ছিনতাইয়ের বিষয়টি ব্যবসায়ীরা আমাকে অবগত করেনি। আপনার (সাংবাদিক) মাধ্যমে আমি এই মাত্র বিষয়টি জানতে পারলাম। আজ থেকেই শপিংমল গুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করা হবে যাতে ক্রেতা এবং বিক্রেতাদের যাতে কোন অসুবিধা না হয়।