প্রায় ১ মাস হয়ে গেলেও খালি পড়ে আছে সচিব ও সচিব পদমর্যাদার ৬টি পদ। এছাড়া আরও দুটি পদ ২৩ ও ১০ দিন ধরে খালি পড়ে আছে। সবমিলিয়ে ৮ সচিবের পদ খালি রয়েছে। যোগ্য কর্মকর্তা খুঁজে না পাওয়ায় এসব পদে এখনো নিয়োগ দিতে পারছে না জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের মুখে গত ৫ আগস্ট তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার তিনদিন পর ৮ আগস্ট দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেয় ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। আওয়ামী লীগ সরকারের আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া সব সচিবকে সরানোর সিদ্ধান্ত নেয় এ সরকার।
এ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চুক্তিভিত্তিক নিয়োগগুলো বাতিল করা হচ্ছে। এছাড়া কোনো কোনো কর্মকর্তাকে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) বা বদলি করা হচ্ছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এ পদক্ষেপের ফলে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা বিভাগ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিবের পদ খালি রয়েছে।
এ তালিকায় আরও রয়েছে- বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) চেয়ারম্যান (সচিব পদমর্যাদা), জাতীয় সংসদ সচিবালয়, পরিকল্পনা কমিশনের একটি সদস্য (কার্যক্রম বিভাগ) এবং বাংলাদেশ জ্বালানি ও বিদ্যুৎ গবেষণা কাউন্সিলের (বিইপিআরসি) চেয়ারম্যানের (সচিব) পদ।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, সচিব পদ অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এ পদে বসানোর ক্ষেত্রে অনেক কিছুই দেখা হচ্ছে। প্রশাসনে দলীয়করণ করার কারণে এখন নিরপেক্ষ ও যোগ্য কর্মকর্তা খুঁজে বের করা কঠিন হচ্ছে। তবে শিগগিরিই খালি থাকা পদে নিয়োগ দেওয়া হবে।
১৪ আগস্ট চুক্তি ভিত্তিতে থাকা ১১ জন সচিবের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এখন পর্যন্ত ৫টি পদে নিয়োগ হলেও খালি পড়ে আছে ৬টি পদ।
এদিন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোকাম্মেল হোসেনের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের অবশিষ্ট মেয়াদ বাতিল করা হয়। তারপর থেকে এ পদটি খালি রয়েছে।
পরিকল্পনা বিভাগের সিনিয়র সচিব সত্যজিৎ কর্মকারের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগও বাতিল করা হয় গত ১৪ আগস্ট। এরপর থেকে এই বিভাগের সচিবের পদ খালি রয়েছে।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) চেয়ারম্যান পদটি শূন্য রয়েছে। এ পদটি সচিব পদমর্যাদার। এ পদে থাকা লোকমান হোসেন মিয়ার চুক্তিও গত ১৪ আগস্ট বাতিল করা হয়।
একইদিন বাতিল হয় জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সচিব কে এম আব্দুস সালামের নিয়োগ। সেই থেকে এ পদটিও ফাঁকা পড়ে আছে।
গত ১৪ আগস্ট আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মো. আবদুর রহমান খানকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান করা হয়। সেই থেকে গুরুত্বপূর্ণ এ বিভাগের সচিবের পদ শূন্য রয়েছে।
একইদিন বাংলাদেশ জ্বালানি ও বিদ্যুৎ গবেষণা কাউন্সিলের (বিইপিআরসি) চেয়ারম্যান মো. মোকাব্বির হোসেনকে জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। সেই থেকেই পদটি খালি রয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য আব্দুল বাকীকে গত ২০ আগস্ট রেলপথ মন্ত্রণালয়ের নতুন সচিব নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। এরপর এ পদে আর কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। ফলে ফাঁকাই পড়ে আছে পদটি।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোস্তফা কামালকে গত ২ সেপ্টেম্বর ওএসডি করা হয়। এরপর এ পদে আর কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি।
এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমান বলেন, আমরা অনেক কিছু চাচ্ছি। যোগ্য অফিসার পাওয়া যে কী দুরূহ হয়ে গেছে! বয়স বাড়ছে টেনিওর বাড়ছে, এটা চাই, সেটা চাই। কিন্তু আমরা ফর্মুলা মোতাবেক যেটা চাচ্ছি, সেই অফিসাররা খুবই কম। তবু আমাদের এর মধ্য থেকেই দিতে হবে। শিগগিরই দেবো।
খালি থাকা সচিব পদগুলোতে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম বলেও জানিয়েছেন এ সিনিয়র সচিব। তিনি বলেন, যারা অতিরিক্ত সচিব আছেন তাদের পদোন্নতি দিয়ে কিংবা রানিং যারা (সচিব) আছেন, তাদের রদবদল করে শূন্য পদ পূরণ করা হবে।