ঢাকা, রবিবার ১৯ মে ২০২৪, ৫ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

সদরপুরের অটো রিকশা ছিনতাই, চালক হত্যা- গ্রেফতার- ২

রাকিবুল ইসলাম সদরপুর : | প্রকাশের সময় : বুধবার ১৯ জুলাই ২০২৩ ০৫:২৫:০০ অপরাহ্ন | দেশের খবর

ফরিদপুরের আলিয়াবাদ ইউনিয়নের পাটপাশা একালায়  লাশ উদ্ধারের ঘটনায় জড়িত দুইজনকে গ্রেফতার করেছে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানা পুলিশ।

বুধবার (১৯ জুলাই) দুপুরে ফরিদপুর জেলা পুলিশ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলেনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(ক্রাইম এন্ড অপস্) শেখ মো: আব্দুল্লাহ বিন কালাম এ তথ্য জানান।

নিহত রবিন মোল্যা (২৩) ফরিদপুর জেলার সদরপুর উপজেলার আকোটের চর ইউনিয়নের চৌধুরী ডাঙ্গীর ইকলাছ মোল্যার ছেলে।

গ্রেফতার দুজন হলো– সদরপুর উপজেলার মীরের ডাঙ্গীর মোয়াজ্জেম খানের ছেলে নাঈম খান (৩১) এবং চরভদ্রাসন উপজেলার চর অমরাপুর গ্রামের সেক খালেকের ছেলে সেক হালিম (৪২)।

 

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে পুলিশ জানায়, গত ১৫ জুলাই বিকেলে  জেলার কোতোয়ালি থানাধীন আলিয়াবাদ  ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ড পাটপাশা বড় ব্রিজ সংলগ্ন একটি মেহগনি বাগানের ভেতর স্থানীয় কৃষক ঘাস কাটতে এসে অজ্ঞাত একটি মৃতদেহটি দেখতে পেয়ে স্থানীয় মেম্বার চেয়ারম্যান ও পুলিশকে খবর দিলে সংবাদ পেয়ে সন্ধ্যায় সেখান থেকে মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে মরদেহটি সদরপুর উপজেলার আকটের চর ইউনিয়নের চৌধুরীর  ডাঙ্গীর ইখলাছ মোল্যার ছেলে রবিন মোল্লার (২৩)বলে শনাক্ত করা হয়।

 

পুলিশ  আরও জানান, পেশায় অটোরিকশা চালক রবিন মোল্যা গত শনিবার (১৫ জুলাই) তার নিজের অটোরিকশা নিয়ে বাড়ী থেকে বের হয়। পরে তার মরদেহ পাওয়া গেলেও তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন এবং অটোরিকশাটি পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় ১৭ জুলাই তার পিতার দায়ের করা মামলায় পুলিশ  বিভিন্ন কৌশলাদি অবলম্বনসহ তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে বুধবার (১৯ জুলাই) রাত ৩:৩০ থেকে ৪:৩০ এর মধ্যে অভিযান পরিচালনা করে জেলার চরভদ্রাসন থানা এলাকা থেকে এ ঘটনায় জড়িত আসামি নাঈম খানকে গ্রেফতার করে তার দেওয়া তথ্য মতে অপর আসামি হালিম সেককেও গ্রেফতার করা হয়। 

 এ সময় তাদের কাছ থেকে  ছিনতাই হওয়া অটোরিকশা ও নিহত রবিন মোল্যার মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।

 

পুলিশ আরো জানায়, নিহত রবিন মোল্যা ও আসামী নাঈম খান পূর্ব পরিচিত। আসামি নাঈম খানকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে জানায় যে, নাঈম সেক মাঝে মধ্যে ফরিদপুর শহরে পতিতাপল্লীতে যাতায়াত করে। ঘটনার দিন সকাল দশটার দিকে আসামী নাঈম পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী রবিন মোল্যার অটোরিকশা নিয়ে ফরিদপুর পতিতাপল্লীর উদ্দেশ্যে রওনা হয়। তারা চরভদ্রাসন থানার লোহার টেক পৌঁছালে নাঈম রবিনকে বলে অটো রিক্সা নিয়ে ফরিদপুর শহরে গেলে পুলিশ ধরবে। অটোরিকশা আমার কাছে দাও আমি নিরাপদ জায়গায় রেখে যাই। তখন রবিন তার অটোরিকশা নাঈম এর কাছে দেয়। আসামি নাঈম ভিকটিম  রবিনের অটোরিকশা নিয়ে রবিনকে বলে তুমি ফরিদপুর চলে যাও আমি অটোরিকশা নিরাপদে রেখে ফরিদপুরে আসতেছি। তখন নাঈম অটো রিক্সা নিয়ে চরভদ্রাসন থানার গাবতলা মোড়ে আসে এবং তার পূর্ব পরিচিত গ্রেফতারকৃত আসামি হালিম সেককে ফোন করে ডেকে আনে এবং তার কাছে ১৫ হাজার টাকায় অটো রিকশা বিক্রি করে দেয়। পরে আসামী নাঈম ফরিদপুর এসে ভিকটিম রবিনের সাথে একত্রিত হয়। তারা দুইজন পতিতাপল্লীর কাজ শেষে দুপুর ২:৪৫ এর দিকে লেগুনায় করে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়। পথিমধ্যে গজারিয়া বাজারে নেমে তারা দুজনে চা পান করেন। রবিন তার রিকশার কথা জিজ্ঞাসা করলে নাঈম জানায় তোর রিকশা সামনে আছে ওইখানে চল দিয়ে দিব। তারপর দুজনে গজারিয়া  বাজার থেকে  আবার লেগুনায় করে রওনা দিয়ে  কোতোয়ালি থানার আলিয়াবাদ ইউনিয়নের পাটপাশা বড় ব্রিজের ওপর নামে। এরপর নাঈম বলে তোর অটোরিকশা মেহগনি বাগানের মধ্যে আছে।  রবিন সেখানে তার অটো রিকশা না দেখতে পেয়ে নাঈমকে  জিজ্ঞাসা করে তার অটোরিকশা কোথায়, তখন এ বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে নাঈম তার কোমরে থাকা নিজের ব্যবহৃত গামছা রবিনের গলায় পেঁচিয়ে শ্বাস রোধ করে হত্যা করে এবং মেহগনি বাগানের ভিতর খেজুর গাছের নিচে লুকিয়ে রাখে। 

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামি হত্যা পূর্বক অটোরিকশা ও মোবাইল ফোন ছিনতাইয়ের কথা স্বীকার করেছেন। 

এসময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(সদর সার্কেল) সুমন রঞ্জন সরকার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শৈলেন চাকমা, কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্র্মকর্তা এম.এ. জলিলসহ স্থানীয় প্রিন্ট ও ইলেকট্রিক মিডিয়ার সংবাদিকবৃন্দ। 

পরে হত্যাকারী ও ‍চোরাই রিক্সা ক্রয়কারী আসামীকে বিধি মোতাবেক বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে এবং মামলাটির তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।